সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে বাঁশের কেল্লায় চড়ে দল বেঁধে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ

২৪ ঘন্টার ব্যবধানে বাঁশের কেল্লায় চড়ে দল বেঁধে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ

বাঁশের ভেলায় চড়ে নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ/ফাইল ফটো

 

গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা নিত্য-নতুন কৌশলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা অব্যাহত রেখেছে। এই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যরা নদী ও সাগরপথে বিভিন্ন কৌশল হাতে নেয়। কিন্তু রাখাইন রাজ্যেও নির্যাতিত রোহিঙ্গারা মানবিক বাংলাদেশে চলে আসার জন্য নিত্য-নতুন কৌশল ব্যবহার করছে। সেই ধারাবাহিতা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে প্লাটিকের জারিকেন ও বাঁশের কেল্লা বানিয়ে নদী পথে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ চোখে পড়ার মত। কারণ এই রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের জন্মস্থান ত্যাগ করে বাংলাদেশে চলে আসছে। এভাবে রোহিঙ্গ দেও আগমণের দৃশ্য দেখে স্থানীয় জনগণ হতবাক হয়ে পড়েছে।

এদিকে মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে নিজেদের তৈরি বাঁশের কেল্লায় চড়ে টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ উপকূলে আগমণ করেছে ১৯০ জন রোহিঙ্গা।

সেই সূত্র ধরে ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ৭০ জন রোহিঙ্গার একটি দল পৌছায়। এরপর আধা ঘণ্টার ব্যবধানে অপর এক বাঁশের কেল্লায় করে ৬০ জন রোহিঙ্গার দল শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়ায় পৌছায়। এদের মধ্যে ৬১ জন শিশু, ৪০ নারী ও ৩১ জন পুরুষ রয়েছে।

এছাড়া সকাল ৯ টার দিকে রোহিঙ্গা দুই যুবক প্লাস্টিক জারিকেন নিয়ে সাঁতরিয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে আসে। এসব রোহিঙ্গাদের স্থানীয় বিজিবি উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। তারা জানায় সকাল ৬ টার দিকে রাখাইনের ধাওনখালী চর থেকে তারা রওনা দেন। প্রায় চার ঘণ্টা নাফ নদী দিয়ে বাঁশের কেল্লায় চড়ে এপারে পৌছায়।

বিজিবি সূত্রে জানা যায়, একইদিন ভোর রাতে নৌকায় শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টাকালে শাহপরীরদ্বীপ বিওপি বিজিবি টহলদলের অভিযানে ১৬২ রোহিঙ্গাসহ দুইটি নৌকা জব্দ করে। এতে ৮৩ শিশু, ৪১ নারী ও ৩৮ পুরুষ রয়েছে। সব মিলিয়ে ২৯৪ জন রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ বিজিবির হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে শাহপরীর দ্বীপ বিওপি বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল জলিল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হেফাজতে থাকা রোহিঙ্গাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বাঁশের কেল্লায় চড়ে আসা রাসিডং সাইনদং এলাকার রোহিঙ্গা হোসন শরীফ জানান, রাখাইনের বুসিডং ও সিন্দিপ্রাং এলাকা থেকে তারা এসেছেন। রাখাইনে সেনার চাপের মুখে ঘরে বন্দি জীবনে অতিষ্ট হয়ে পালিয়ে আসতে এক মাস আগেই ঘর ছেড়ে রাখাইনের ধাওনখালী চরে এসে অবস্থান নেয়। কিন্তু সেখান থেকে বাংলাদেশ ঢুকতে নৌকা বা কোনো বাহন না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে যায়। এর আগেও ৬১ জন যুবক জারিকেন বুকে নিয়ে নাফ নদী সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। তারা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের এপারে পৌঁছাতে প্লাস্টিক জারিকেনে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ভেলা তৈরি করে। নাফনদ পাড়ি দিতে সেই বাঁশের কেল্লায় ওঠেন রোহিঙ্গারা।

আরেক রোহিঙ্গা রাসিডং সাইনদং এলাকার জুহারা খাতুন বলেন, সেখানে সেনা ও মগদের কারণে কিছুই করতে পারছিনা। এরা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। অর্থের অভাবে এতদিন আসতে পারিনি। কোনো উপায় না পেয়ে ভেলায় চেপে চলে এলাম। বুচিদং সিনদং এলাকার রোহিঙ্গা হাসান বলেন, মিয়ানমার সেনারা ঘরবাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেনা। ক্ষেতের ধান কাটতে বাধা দিচ্ছে। এছাড়া বাজারে যাওয়া ও স্বাভাবিক চলাচলেও বাধা দিচ্ছে। এনভিসি কার্ড নিতে বাধ্য করা হবে। সেই কার্ডধারী ৪০ হাজারের অধিক কিয়েট আয় করলেও তা তাদের দিয়ে দিতে হবে। তাই অসহায় ও নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে ধাওনখালী চরে গত ২০ দিন ধরে এসে অপেক্ষা করছেন। সেখানে তাবু করে এতদিন নৌকার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। এখনো ধাওনখালী চরে ১৫ হাজারের মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে অপেক্ষা করছেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, খাদ্যের মজুদ যা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে, চিকিৎসার অভাবে শিশুরা নানা রোগে ভুগছেন। চোখের সামনে অসুস্থ শিশু ও মা বোন মাটিতে গড়াচ্ছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনো নৌকা পাচ্ছিলাম না। মাঝেমধ্যে দুএকটা নৌকা ধাওনখালী সীমান্তে গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে না পারায় নৌকায় ওঠা হয়নি।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

গত দেড়মাসে ৩টি পাহাড় কেটে সাবাড় : পাহাড়খেকো আহসান উল্লাহ’কে ঠেকাবে কে ?

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলেও এসবের কোনো কিছুই ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/