সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ধর্মীয় / অনুসারী বিবেচনায় পৃথিবীর বৃহৎ ১০ ধর্ম

অনুসারী বিবেচনায় পৃথিবীর বৃহৎ ১০ ধর্ম

বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা সাড়ে ছয়শো কোটির বেশি। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী। বর্তমানে ধারণা করা হয় এই পৃথিবীতে প্রায় চার হাজার ৩০০ ধর্মের অস্তিত্ব রয়েছে। যদিও সব ধর্মের অনুসারী ও বিস্তৃতি সমান নয়। অনুসারীর সংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর প্রধান ১০টি ধর্ম হলো—

খ্রিস্ট ধর্ম
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশের মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী। মূলত যিশুখ্রিস্টের জীবন ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে এই ধর্ম বিকশিত হয়েছে। এই ধর্মের মানুষরা বিশ্বাস করেন যিশুখ্রিস্ট ঈশ্বরের পুত্র এবং তিনি মানবজাতির ত্রাণকর্তা। পৃথিবীর বৃহত্তম এই ধর্মের অনুসারীসংখ্যা পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২৪০ কোটি। বাইবেল তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বাইবেলের দুটি সংস্করণ রয়েছে-ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট। খ্রিস্টানদের উপাসনালয়কে চার্চ বা গির্জা বলা হয়।

ইসলাম ধর্ম
খ্রিস্ট ধর্মের পরই বিশ্বের বৃহত্তর ধর্মের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলাম। এই ধর্মের মানুষরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত রাসুল-এটি ইসলাম ধর্মের মূল বিশ্বাস। বর্তমানে পৃথিবীতে ১৮০ কোটি মুসলিম রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পৃথিবীর দ্রুত প্রসারমাণ ধর্ম ইসলাম। সাম্প্রতিক অনেক গবেষণায় বলা হচ্ছে, খ্রিস্ট অধ্যুষিত ইউরোপ অর্ধশতাব্দীকাল পর মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে পরিণত হতে পারে। পৃথিবীর ৫০টি দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কোরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি-ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। মুসলমানের উপাসনালয়ের নাম মসজিদ। মক্কা-মদিনা মুসলিমদের পবিত্র তীর্থ। মুসলমানরা বিশ্বাস করে, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত চূড়ান্ত ধর্ম, কোরআন সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ এবং মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী।

হিন্দু ধর্ম
ইসলামের পরই পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম হচ্ছে হিন্দু। এই ধর্মে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা প্রায় ১২০ কোটি মানুষ। যার মধ্যে সিংহভাগ মানুষই বসবাস করে দক্ষিণ এশিয়ায়। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ বছর আগে এই ধর্মের যাত্রা শুরু হয়। বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, গীতা হলো এই ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। মন্দির হিন্দু ধর্মের উপাসনালয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান অংশ বহু-ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করে। প্রচলিত আছে, হিন্দু ধর্মে দেব-দেবীর সংখ্যা ৩৩ কোটি। হিন্দুদের প্রধান তিনজন দেবতা হলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব।

বৌদ্ধ ধর্ম
তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছে বৌদ্ধ ধর্ম। এই ধর্মে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যায় প্রায় ৫১ কোটি। গৌতম বুদ্ধ এই ধর্মের প্রবর্তক। তাঁর প্রচারিত বিশ্বাস ও জীবনদর্শনই বৌদ্ধ ধর্মের ভিত্তি। এই ধর্মের উপাসনালয় মঠ নামে পরিচিত আর প্রধান ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস চীনে। তা ছাড়া থাইল্যান্ড, জাপান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

হান ধর্ম
আয়তনে পৃথিবীর বৃহত্তর দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সম্প্রদায় হলো হানজু বা হান সম্প্রদায়। তারা চীনা লোকধর্ম বা হান ধর্মে বিশ্বাসী। পঞ্চম বৃহৎ এই ধর্মকে অনেকে হান জাতি-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যের পরিবর্তিত সংস্করণ বলে থাকে। বর্তমানে এই ধর্মের অনুসারী ৪০ কোটির কাছাকাছি।

শিখ ধর্ম
পৃথিবীর বৃহত্তর ধর্ম বিশ্বাসী গোষ্ঠির তালিকায় শিখ ধর্মটি আছে ষষ্ঠ অবস্থানে। বিশ্বজুড়ে এই ধর্মে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা আনুমানিক তিন কোটি মানুষ। একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এই ধর্মানুসারীদের নেতাকে বলা হয় গুরু। শিখ শব্দটির অর্থই শিষ্য। শিখরা বিশ্বাস করে, পৃথিবীতে প্রচলিত কোনো ধর্মই পরম সত্য নয়, কিংবা কোনো ধর্মই পূর্ণাঙ্গ মিথ্যা নয়।

ইহুদি ধর্ম
অনুসারীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ধর্ম ইহুদি। এই ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা এক কোটির বেশি, যার ৪৩ শতাংশই ইসরায়েলে বসবাস করে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বাস করে আরো ৪৩ শতাংশ ইহুদি। বাকিরা লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় বসবাস করে। এই ধর্মের ইতিহাস তিন হাজার বছরেরও পুরনো। ব্রোঞ্জ যুগে মধ্যপ্রাচ্যে এই ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত, যাকে হিব্রু বাইবেল ও তানাখও বলা হয়।

বাহাই ধর্ম
বাহাই ধর্মাবলম্বীরা পৃথিবীর অষ্টম বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মির্জা হুসাইন আলী তথা বাহাউল্লাহ তৎকালীন পারস্যে (বর্তমান ইরান) এই ধর্মের প্রচার করেন। অনেকেই একে ধর্ম না বলে একটি বিশেষ বিশ্বাস হিসেবেও উল্লেখ করেন। ‘কিতাবুল আকদাস’ এই ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। মানবজাতির ঐক্য ও মেলবন্ধনই এই ধর্মের মূল লক্ষ্য। বিশ্বের দুই শরও বেশি দেশে ৭০ লাখের বেশি মানুষ বাহাই মতবাদে বিশ্বাস করে।

জৈন ধর্ম
সংস্কৃত শব্দ ‘জৈন’ অর্থ বিজয়ী। জৈন ধর্মের মূল বিশ্বাস হলো, পৃথিবীতে ২৪ জন ‘তীর্থঙ্কর’ বা বিজয়ী মহাপুরুষের আগমন ঘটেছিল, যাঁরা নিজ নিজ সময়ে মানবজাতির ত্রাণকর্তা ও শিক্ষক ছিলেন। এই ২৪ জনের মধ্যে সর্বপ্রথম পৃথিবীতে এসেছিলেন ঋষভ, যাঁর আগমন ঘটেছিল লাখ লাখ বছর আগে। সর্বশেষ ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে। এটি একটি ভারতীয় ধর্ম। অহিংসা ও আত্মসংযমের মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যু-জন্মের চক্র থেকে মোক্ষ তথা মুক্তিলাভই জৈন ধর্মের মূল সাধনা। ৪০ লাখ মানুষ জৈন ধর্মের অনুসারী, যাদের এক-তৃতীয়াংশের বসবাস ভারতে।

শিন্তো ধর্ম
জাপানের স্থানীয় এবং অনানুষ্ঠানিক একটি রাষ্ট্রীয় ধর্ম শিন্তো। এটা এমন একটি ধর্ম, যার কোনো ঈশ্বর নেই, প্রচারক নেই, ধর্মগ্রন্থ নেই, পরকাল নেই, নেই কোনো বিধিবদ্ধ রীতিনীতি। শিন্তো ধর্মের মূলকথা হলো, সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই, তবে কিছু স্বাধীন আত্মা বা স্বর্গীয় সত্তা আছেন, যাঁদের নাম ‘কামি’। এই কামিরা পৃথিবীর মানুষের কল্যাণকামী। যেকোনো ধর্মের মানুষই শিন্তো মন্দিরে যাতায়াতের অধিকার রাখে। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর ৪০ লাখ মানুষ শিন্তো মতবাদে বিশ্বাস করে।

 

সূত্র: deshebideshe.com – ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

চলতি বছরের ফিতরা কত, জানাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন https://coxview.com/islam-zakat-2/

চলতি বছরের ফিতরা কত, জানাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  অনলাইন ডেস্ক :এ বছর দেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/