সাম্প্রতিক....
Home / জাতীয় / আপিল বিভাগের রায়ের পর বদি কি সাংসদ থাকতে পারেন?

আপিল বিভাগের রায়ের পর বদি কি সাংসদ থাকতে পারেন?


সাজা মাথায় নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন সাংসদ আবদুর রহমান বদি। তিনি সেটা পারেন কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনের ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত সাংসদ আবদুর রহমান বদি। ২০১৬ সালে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হন তিনি। আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। এ রায় মাথায় নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এদিকে গত ২৭ নভেম্বর মঙ্গলবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতা আসেন হাইকোর্টে। তারা তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলে, দুই বছরের সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

পরে হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন ওই পাঁচ নেতা। তাদের আবেদন সেখানেও নামঞ্জুর হয়। এরপর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির এই পাঁচ নেতা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

খালেদা জিয়া খালাস পেলে নির্বাচন করতে পারবেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘খালেদা জিয়া সাজা খাটার পাঁচ বছর পরে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।’

যুক্তি হিসেবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘খালেদাসহ বিএনপির পাঁচ নেতা আদালতের রায়ে দণ্ডিত। তারা সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবেন না।’

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ও অ্যাটর্নি জেনারেলের এমন মন্তব্য শুনে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রায়টি সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন।’

ঠিক এমন বাস্তবতায় যারা সাজা মাথায় নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনের ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে।

এখনো বদি সংসদ সদস্য। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আর বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। তিনি কীভাবে সাজা মাথায় নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন?

এমন বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে এমপি বদি নৈতিকতা হারিয়েছেন। তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সংবিধানের ৬৬ (ঘ) অনুচ্ছেদ ভঙ্গ করেছেন। তিনি সাজা মাথায় নিয়ে কোনোভাবেই এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।’

হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সাজা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আর সাংসদ আব্দুর রহমান বদি তিন বছরের সাজা মাথায় নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তার এ দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রিয়.কমকে বলেন, ‘তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। কারণ তিনি দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত। তার সাজা আদালত স্থগিত করেনি।’

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির উল্লেখিত পাঁচ নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে তিন বছরের সাজা মাথায় নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে আবদুর রহমান বদি দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি না?—এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রিয়.কমকে বলেন, ‘বদির ফাইলটা দেখতে হবে। আর বদি তো এবার মনোনয়ন পাননি।’ এ কথা বলেই ব্যস্ততা জানিয়ে এই আইনজীবী ফোন রেখে দেন।

 

সংবিধানের ৬৬ (ঘ) অনুচ্ছেদে কী বলা আছে?

(ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে;

২০১৬ সালের ২ নভেম্বর কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাংসদ বদির উপস্থিতিতেই ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার বদিকে সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।

মামলার অভিযোগপত্রে আসামি বদির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের পাশাপাশি ঘোষিত আয়ের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

 

বদির মামলার বিবরণ

দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. আব্দুস সোবহান ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার রমনা থানায় সাংসদ বদির বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।

এজাহারে বলা হয়, এমপি বদি আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বৈধতা দেখাতে কম মূল্যে সম্পদ কিনে বেশি মূল্যে বিক্রির মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

২০১৫ সালের ৭ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে বদির বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেন।

অভিযোগপত্রে বদির ছয় কোটি ৩৩ লাখ ৯৪২ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, তিনি দুদকের কাছে তিন কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

দুদকের এ মামলায় ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে তিন সপ্তাহ কারাগারে ছিলেন আবদুর রহমান বদি। পরে তিনি হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি পান।

২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দুর্নীতির এই মামলায় বদির বিচার শুরু করে আদালত। এ মামলায় দুদকের পক্ষে মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য শোনে আদালত। ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষে ২ নভেম্বর সাংসদ বদিকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে রায় দেয় আদালত।

সূত্র:আমিনুল ইসলাম মল্লিক-priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

আজ মহান মে দিবস, May Day, https://coxview.com/may-day-2/

আজ মহান মে দিবস

  নিজস্ব প্রতিনিধি :আজ ১ মে, বুধবার। মহান মে দিবস। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদ্‌যাপন ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/