সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / অপরাধ ও আইন / এক ঘটনা, এক আদালত, ১৪ বছর

এক ঘটনা, এক আদালত, ১৪ বছর


২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর আর্তনাদ করছেন আওয়ামী লীগের এক কর্মী। ফাইল ছবি

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ২২ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেলেও ২ জনের কোনো পরিচয় মিলেনি। হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। গত ১৪ বছর ধরে একই আদালতে ওই মামলার বিচার চলছে। ঠিক কবে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে রয়েছে সংশয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমানের আশা করছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে মামলাটির কার্যক্রম শেষ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ মামলার বিচার চলার সময় সরকার পরিবর্তন, তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন ও বিচারক বদলির ঘটনা ঘটেছে। প্রথম বিচারক পরিবর্তন হওয়ার পর মামলাটির বিচার করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন।

ঘটনার ১৪ বছর পার হতে চললেও মামলাটি এখন আসামিপক্ষে যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার তদন্ত শুরু হলে ২০০৮ সালের ১১ জুন জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে ওই তদন্তে গ্রেনেডের উৎস ও হামলা পরিকল্পনার পেছনে কারা জড়িত, তা উঠে আসেনি।

বিগত মহাজোট সরকারের আমলে ২০১২ সালে অধিকতর তদন্ত শেষে মামলাটির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর ২০১২ সালের ১৯ মার্চ দুটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

এতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীসহ ৩০ জনকে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তে মোট ৫২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ আসামিদের মধ্যে পৃথক মামলায় মুফতি হান্নান, আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে অন্য যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন ডিজিএফআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বকস, ডিএমপির তৎকালীন উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, হুজির আমির মাওলানা শেখ ফরিদ, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আবদুর রউফ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআই’র সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (বরখাস্ত), বিএনপির ঢাকা মহানগর নেতা আরিফুর রহমান, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মিরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, সিআইডির সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) রুহুল আমিন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মুন্সি আতিকুর রহমান, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন।

আসামিদের মধ্যে সাবেক লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। পলাতক আসামি হিসেবে রয়েছেন তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ারসহ ১৮ জন। তাদের প্রত্যেকের পক্ষে রাষ্ট্র কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শকসহ এ মামলার যুক্তি তর্ক উপস্থাপন চলছে। বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম। আর কয়েক দিনের মধ্যেই তার যুক্তিতর্ক শেষ করা হতে পারে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ হয়তো তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।

এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী রেজাউর রহমান বলেন, ‘আসামি লৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। আর ৫ দিন বাকি রয়েছে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের। আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ আগস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন নির্ধারণ করা আছে। মামলাটির কার্যক্রম শেষের দিকে। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ মামলাটির রায় ঘোষণা করা হবে। জাতি ভালো একটি রায় পাবে।’

রেজাউর রহমান বলেন, ‘এ হামলায় মোট ২৪ জন নিহত হন। কাগজপত্রে আছে ২২ জন। ২ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। অফিসিয়ালি আমরা ২২ জনের নিহতের বিষয়ে জানি। ২ জনের অফিসিয়িালি কোনো ডকুমেন্ট নাই। এ ঘটনায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুরুতে একজন বিচারক ছিলেন। পরে তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার কারণে শাহেদ নুরুদ্দীন সাহেব বিচার কাজ পরিচালনা করছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় আহত এখনও অনেকেই তাদের শরীরে গ্রেনেটের স্প্লিন্টার বহন করছেন।’

সূত্র:আমিনুল ইসলাম মল্লিক-priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

লামায় পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে আহত করল সাজাপ্রাপ্ত আসামী

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :বান্দরবানের লামায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হন পুলিশ ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/