হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্মূলে বাড়িঘরে আগুন, বন্দুকের মুখে মুসলিম রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। বুলেটের আঘাত থেকে শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ কাউকেই রেহায় দেয়া হচ্ছে না। গুলির পাশাপাশি বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা আর সেখানে বসতি স্থাপন করতে না পারে। আগত রোহিঙ্গাদের অভিযোগ প্রতিদিন বার্মিজ আর্মি রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়।
আরকান রাজ্যের মংডুর পরিতিবিল, রাজারবাড়ি, সাববাজার, টংবাজার, বুচিডংসহ প্রতিটি পাড়া আগুনে ছাই হয়ে গেছে। স্থানীয় মগরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে মংডুর রাখাইন রাজ্যের গ্রামের পর গ্রাম আগুন দেয়া হয়। নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের এ সময় প্রাণের ভয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে করতে অবশেষে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়। ফলে প্রতিদিনই বাংলাদেশ সীমান্তে বাড়ছে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা।
তাদের কান্না ও আত্মচিৎকারে ভারি হচ্ছে আকাশ-বাতাস। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি রোহিঙ্গাদের ফের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আবাসস্থলে ফিরলে বার্মিজ সেনাদের গুলি খেয়ে মরতে হবে- এই ভয়ে সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করতে হয়েছে শত শত রোহিঙ্গাদের। অবশেষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে তাদের বাংলাদেশে প্রবেশের সহযোগিতা করেন বিজিবি।
গত ১৯ নভেম্বর উখিয়া আন্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে আবারো শত শত রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। দীর্ঘ ২ মাস ২৫ দিন ধরে এই বর্বর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ শাহ আলম (৫২) এ প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান।
কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতাল, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিয়ানমারে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ শত শত রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এমএসএফ হাসপাতালের দায়িত্বরত গোলাম আকবর জানান, মিয়ানমারের গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা পুরুষ, ধর্ষিতা নারীসহ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ক্ষত রয়েছে। সীমান্তের ওপারে সহিংসতা শুরুর পর থেকে প্রতিনিয়ত গুরুতর আহত, গুলিবিদ্ধ, আগুনে ঝলসে যাওয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার ও চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের মংডু থানার দিয়াতলী এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে জোনায়েদ (১৫) একই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে জয়নাত উলাহ ও হোসেন আহম্মদের ছেলে খালেক হোসেন (২৭) এবং আগুনে পুড়া নুরুল আলম চিকিৎসা শেষে ক্যাম্পে ফিরেছেন।
সরেজমিন থাইংখালী ময়নাঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে ১৫ বছরের শিশু জোনায়েদের সাথে কথা হয়। সে জানায়, চিকিৎসা নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে আসলেও মাথায় এখনো প্রচন্ড ব্যাথা হয়। জোনায়েদের মতো অসংখ্য শিশু মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। আবার অনেকে ক্যাম্পে আসার পর মারা যান।
You must be logged in to post a comment.