সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় যেভাবে

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় যেভাবে

বঙ্গোপসাগর আর আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোকে আমরা আলাদা আলাদা নামে চিনে থাকি। কিন্তু কারা দেয় এসব নাম? কবে থেকে শুরু হলো এমন নাম দেয়ার প্রক্রিয়া?

আটলান্টিক মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে প্রথম নাম রাখার প্রথা চালু হয়। যেসব ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৯ মাইল ছাড়িয়ে যেত, তাদের বিশেষ সম্মান জানাতে নামকরণ করা হতো। ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৭৪ মাইল ছাড়িয়ে গেলে হারিকেন, সাইক্লোন, বা টাইফুন হিসেবে ভাগ করা হতো। বর্তমান যুগে এই তিনটির একটি হলে তবেই কোনও ঝড়কে নামকরণের সম্মান প্রদান করা হয়।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান।

আগে ঝড়গুলোকে নানা নম্বর দিয়ে সনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন হয়ে যেতো।

মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে পূর্ব পাকিস্তানে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল জোরালো ঘূর্ণিঝড়। তারও কোনও নাম ছিল না। ভোলায় আছড়ে পড়েছিল, সেই জায়গার নামেই চেনে দুনিয়া। ১৯৯১ সালের ঘূর্নিঝড় নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলির মধ্যে একটি। ১৯৯৯ সালে ওড়িশা তছনছ করে দেয়া ঘূর্ণিঝড়কে লোকে চেনে পারাদ্বীপ সাইক্লোন নামে। কারণ, ওড়িশার এই বন্দর শহরেই আছড়ে পড়েছিল শক্তিশালী তুফান।

বঙ্গোপসাগর আর আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওমান, মায়ানমার ও থাইল্যান্ড- এই আট দেশ মিলে ৬৪টি নামের তালিকা তৈরি করা হয়।


ঠিক করা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হবে সতর্কবার্তা সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, মিডিয়া রিপোর্ট এবং পরবর্তী গবেষণায় সুবিধার জন্য। তাই নাম যেন ছোট হয় এবং চট করে বোঝা যায়, কোনও সংস্কৃতিকে যেন আঘাত না করে। ঘূর্ণিঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাই নামের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হতে হবে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক ভাবে কোনরকম বিতর্ক বা ক্ষোভ তৈরি না করে।

আঞ্চলিক এই আটটি দেশ একেকবারে আটটি করে ঝড়ের নাম প্রস্তাব করেছে। প্রথম দফায় মোট ৬৪টি নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আট দেশ মিলে ৬৪টি নামের তালিকা বানালেও ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পর নাম ব্যবহারের দায়িত্ব ভারতের উপর। এখনও সেই ট্র্যাডিশন চলছে।

নাম পাওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড় ‘অনিল’। নাম রেখেছিল বাংলাদেশ। আছড়ে পড়েছিল গুজরাটে। তারপর এই তালিকা থেকেই পর্যায়ক্রমে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে।

তবে, সেই তালিকা এ বার শেষের পথে। কিয়ার (মিয়ানমার), মহা (ওমান), বুলবুল (পাকিস্তান)-এর পর আর বাকি মাত্র দুটি নাম- পবন (শ্রীলঙ্কা) এবং উম্পুন (থাইল্যান্ড)।

বিশ্ব আবহাওয়ার সংস্থার এই প্যানেলে আট দেশের সাথে বর্তমানে আরো পাঁচ দেশ যুক্ত হয়েছে। দেশগুলো হলো- ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, কাতার।

জানা গেছে, ১৩ দেশের মিলে আবারো একটা তালিকা বানিয়ে সংশ্লিষ্ট সমস্ত দেশকে পাঠানো হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে দু’বছর সময় লেগে যাবে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন নয়াদিল্লি আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ বিভাগের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র।

ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় টাইফুন। প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের ক্ষেত্রে নাম রাখার প্রথা অনেক আগে এসেছে। ১৯৫৩ সালে শুরু হয় হারিকেনের নাম দেওয়া। প্রথম দিকে মেয়েদের নাম বেশি দেয়া হতো। পরে ছেলেদের নাম প্রাধান্য পায়।

দক্ষিণ চিন সাগরের সৃষ্ট টাইফুনের নাম ঠিক করে ওই অঞ্চলের দেশগুলি। আমেরিকা ও তার প্রতিবেশি দেশগুলো মিলে ঠিক আটলান্টিকের হারিকেনের নাম। টাইফুন বা হারিকেন সাইক্লোনের চেয়ে বেশি সৃষ্টি হয়। তাই একই নাম ঘুরে-ফিরে আসে। আবার ক্যাটরিনা বা হাইয়ানের মতো ধ্বংসাত্মক হলে সেই নাম আর কখনো রাখা হয় না।

সূত্র: somoynews.tv – ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

কালের সাক্ষী ২০০ বছরের পুরনো তেলশুর গাছ ! https://coxview.com/tree-200-years-rafiq-5-2-24-1/

কালের সাক্ষী ২০০ বছরের পুরনো তেলশুর গাছ !

লামা বন বিভাগের বমু রিজার্ভ ফরেস্টের পুকুরিয়াখোলা এলাকায় অবস্থিত বৃহৎ তেলশুর গাছ দুইটি।   মোহাম্মদ ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/