সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / যেদিকে চোখ যায় শুধু তামাক : নিরুৎসাহিত করতে নেই কোন পদক্ষেপ

যেদিকে চোখ যায় শুধু তামাক : নিরুৎসাহিত করতে নেই কোন পদক্ষেপ

যেদিকে চোখ যায় শুধু তামাক : নিরুৎসাহিত করতে নেই কোন পদক্ষেপ https://coxview.com/tamak-rafiq-5-2-24-1/
লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর ছোট মার্মা পাড়া এলাকায় বিস্তৃর্ণ বিলে তামাক চাষ।

 

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :

* বড় চারটি কোম্পানি সহ তামাক চাষীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজারের অধিক।
* তামাকচুল্লীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।
* এইসব তামাকচুল্লীতে এবছর জ্বালানী পুড়বে প্রায় ৯ কোটি কেজি বনের কাঠ।
* উপজেলা ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ৯ হাজার একর জমি তামাকের দখলে।

 

ফসলের মাঠ, নদীর দু’পাড়, পাহাড়ের ঢালু ও বসতবাড়ি-স্কুলের আঙ্গিনা সহ সবকিছু মরণচাষ তামাকের দখলে। ধীরে ধীরে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা তামাক চাষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় ৩৩ বছর ধরে তামাক চাষ হয়ে আসছে লামা পৌরসভা সহ ৪টি ইউনিয়নে। পৃষ্ঠপোষকতা ও বিক্রয়ের নিশ্চয়তা থাকায় দিনে দিনে তামাকের আগ্রাসন বেড়েই চলেছে। জাপান ট্যোবাকো ইন্টারন্যাশনাল, আবুল খায়ের ট্যোবাকো কোঃ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ ও আকিজ ট্যোবাকো কোঃ লিমিটেড অত্র জনপদে তামাক চাষ বিস্তারে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছে।


বেশ কয়েকজন তামাক চাষী, কোম্পানি প্রতিনিধি ও বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে কোম্পানী গুলোর আওতায় সাড়ে ৩ হাজারের অধিক কৃষককে চাষ দিয়েছে। রেজিস্ট্রেশন বহির্ভূত আরো ৫শত কৃষক তামাক চাষ করছে। সবমিলে এবছর প্রায় ৯ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তামাক কোম্পানিগুলো তাদের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত চাষীকে ইতিমধ্যে বীজ, পলিথিন, কীটনাশক, সার ও ঋণ প্রদান করেছে। বর্তমানে তামাক চারা দুই থেকে চার ফুট লম্বা হয়েছে। শীঘ্রই মাঠ থেকে তামাক পাতা তুলে চুল্লীতে পুড়ানো হবে। এ তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট, কৃষকদের স্বাস্থ্যহানি, নদী-খালের দু’পাড়ের ভাঙ্গন ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান পরিবেশবাদীরা। ক্ষতিকর তামাক চাষে কৃষকদের স্বাস্থ্যহানি ও ঝুঁকি জেনেও শুধু লাভের আশায় তামাক চাষ করছে বলে মন্তব্য কৃষকের।

যেদিকে চোখ যায় শুধু তামাক : নিরুৎসাহিত করতে নেই কোন পদক্ষেপ https://coxview.com/tamak-rafiq-5-2-24-2/
লামার গজালিয়া ইউনিয়নের সাপমারাঝিরি এলাকায় বমু খালের দু’পাড়ে তামাক ক্ষেত।

বিএটিবি লামা পৌরসভার লামামুখ এলাকার কৃষক মোঃ মালু মিয়া বলেন, অন্যান্য তামাক কোম্পানি চেয়েও এই কোম্পানি চাষীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও লাভের বিষয়টি খেয়াল রাখে। বিএটিবি কৃষকদের কম শ্রমে অধিক লাভবান ও সময় বাঁচাতে নতুন নতুন কৃষি সরঞ্জাম (ইন্টারকাল্টিভেটর, রিজ মেকার, রোটাভেটর, মিনি পাওয়ার টিলার) সংযোজন করেছেন। লামা পৌরসভার রাজবাড়ি গ্রামের সবজি চাষী নজরুল ইসলাম, শাহ জাহান মিয়া সহ আরও অনেকে জানান, তামাক চাষীদের অগ্রিম লাগিয়তের কারণে সবজি চাষের জন্য জমি পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও মূল্য বেশি হওয়ায় অনেক সময় জমি লাগিয়ত নেয়া সম্ভব হয় না।


উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব মতে, গত মৌসুমে প্রায় ৮১০ হেক্টর ও চলতি মৌসুমে কোম্পানিগুলো উপজেলায় ৯০০ হেক্টর অর্থাৎ ২ হাজার ২২৩ একর জমিতে তামাক চাষ করেছে। তবে কৃষি অফিসের পরিসংখ্যানটি সঠিক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর কোম্পানিগুলোও রেজিস্ট্রেশনকৃত চাষির সংখ্যা ও জমির পরিমাণ কত তা কৌশলগত কারণে তারা এড়িয়ে যাচ্ছেন। পৃষ্টপোষকতা, বিক্রয়ের নিশ্চয়তা ও বিকল্প কিছু পেলে চাষিরা এ চাষ ছাড়বেন বলে জানান তারা।


সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে সরকারি জমিতে ও বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকায় তামাক চাষ হচ্ছে। সরকার তামাক চাষের বিরোধীতা করছে কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি অফিসের অব্যবস্থাপনা এবং অবহেলার কারণে চাষীরা তামাক চাষের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বেপরোয়া তামাক চাষের ফলে পরিবেশ ও সমাজের নানা ক্ষতি, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানি ও নেশাগ্রস্থতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। পৌরসভার সাবেক বিলছড়ি, ছাগলখাইয়া, হরিণঝিরি, কলিঙ্গাবিল, সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, মাতামুহুরী নদীর রাজবাড়ী পয়েন্ট, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা, বনপুর সহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাড়ি আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সর্বত্রই তামাক চাষ করা হয়েছে। উপজেলা প্রতিটি বড় বিল, নদী-খাল-ঝিরির পাড় সহ আবাদী অধিকাংশ জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু তামাক চাষ। নদী-খালের ৫০ ফুটের মধ্যে তামাক চাষে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে নদীর দু’পাড়ে তামাক চাষ করছে কৃষকরা।


এদিকে অর্ধশত তামাক চাষীদের উপর জরিপ চালিয়ে জানা যায়, ৪ কানি তথা ১৬০ শতক তামাক জমির তামাক পুড়ানো জন্য ১টি তামাকচুল্লী প্রয়োজন হয়। প্রতি কানির তামাকে ৩ লোড (তামাক পুড়ানোর প্রক্রিয়া) করে ৪ কানি জমি হতে উৎপাদিত তামাকে প্রায় ১২টি লোড হয়। প্রতি লোড তামাক পুড়াতে ৬দিন সময় লাগে আর ৪০ মণ লাকড়ি প্রয়োজন হয়। এতে করে ১২টি লোডের মাধ্যমে ৪ কানি জমির তামাক পুড়াতে ১টি তামাকচুল্লীতে এক মৌসুমে ৪৮০ মণ বা ১৯২০০ কেজি লাকড়ি লাগে। উপজেলার প্রায় ৫ হাজার তামাকচুল্লীতে এক মৌসুমে ২৪ লক্ষ মণ বা ৯ কোটি ৬০ লক্ষ কেজি বনের লাকড়ি প্রয়োজন হয়। যাতে করে বিস্তৃর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে।


জাপান ট্যোবাকো ইন্টারন্যাশনাল এর লামা ডিপো ম্যানাজার খগেন্দ্র চন্দ্র দাশ বলেন, এবছর আমাদের কোম্পানীর তামাক চাষীর সংখ্যা প্রায় ২৭৮ জন। ঢাকা ট্যোবাকো ভেঙ্গে জাপান ও আকিজ নামে ভিন্ন দুইটি কোম্পানী হওয়ায় আমাদের চাষ কমেছে। তামাক চাষে মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে।


তামাক চাষ নিয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশ্রাফুজ্জামান বলেন, যেভাবে তামাক চাষের আবাদ বাড়ছে তা যথারীতি অত্র জনপদের জন্য হুমকি স্বরুপ। ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে সরকার কর্তৃক স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য সহ নানান পদক্ষেপ সরকার ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষি পন্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও জনসচেতনতাই পারে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে। সরকারিভাবে তামাক চাষ বন্ধে সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Sagar-23-4-2024.jpeg

ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কমিটি ঘোষণা : রিয়াজ সহ-সভাপতি মনোনীত

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :বাংলাদেশ ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/