স্তন মেয়েদের মাতৃত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক। স্তন ক্যান্সার নামক মরণব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে যে কোন সময়। এবং সঠিক সময়ে সচেতন না হলে কেড়ে নিতে পারে নারীর মহামূল্যবান প্রাণ।
স্তন ক্যানসার কেন হয়?
নির্দিষ্ট কোন কারণ এখনো জানা যায়নি তাই একাধিক কারণকে স্তন ক্যানসার এর জন্য দায়ী করা হয়ঃ
১। মা-খালা এদের থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২। অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসার প্রকোপ বেশি।
৩। একইরকমভাবে যারা সন্তানকে কখনো বুকের দুধ পান করাননি তাদের স্তন ক্যানসার বেশি হয়।
৪। ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তন ক্যানসারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলাদের থেকে অনেক বেশি।
৫। বয়স যত বাড়ে স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।
৬। অল্প বয়সে বাচ্চা নিলে, দেরীতে পিরিয়ড শুরু হলে, তাড়াতাড়ি পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে স্তন ক্যানসারের প্রকোপ বেড়ে যায়।
৭। একাধারে অনেক দিন জন্ম নিরোধ পিল খেলেও স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উপরোক্ত কারণগুলো স্তন ক্যানসার হওয়ার সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়।
স্তন ক্যানসারের লক্ষন
১। সাধারণত ৩০ বছর-এর পূর্বে এই রোগ কম হয়।
২। বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তার-এর শরণাপন্ন হয়।
৩। বুকে চাকা সেই সাথে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।
৪। কখনো কখনো বুকে চাকা বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে।
৫। নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হিসাবে দেখা দিতে পারে।
৬। কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মত ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।
৭। অনেক সময় যে বুকে ব্যথা সেদিকের হাত ফোলা নিয়েও আসতে পারে।
৮। এগুলো ছাড়া স্তন ক্যানসার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে যেমন-হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ইত্যাদি।
কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যাবে
১। মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের এক্সরে
২। স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম
৩। চাকা বা টিউমার থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়বে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের কি কি চিকিত্সা আছে, সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তম। তাছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি।
কিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা যায়
১। ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করতে হবে। কোন চাকা পাওয়া যায় কিনা। চাকা পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
২। বয়স ৫০-এর উপরে হলে বছরে ১বার মেমোগ্রাম করতে হবে।
৩। কোন প্রকার সন্দেহ হলে ডাক্তার-এর সাথে দেখা করতে হবে।
এই রোগ এড়ানোর উপায় কি?
যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি। তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হল-
১। ৩০ বছর বয়স থেকে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করুন।
২। রিক্স ফ্যাক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করুন। যেমন-ফ্যামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে।
৩। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ১ম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।
৪। সন্তানকে বুকের দুধ পান করান।
৫। টাটকা শাক-সবজি ও ফল খান।
৬। সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হন।
৭। ধূমপান ও এলকোহল পরিহার করুন।
মনে রাখবেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিরূপণ করলে এবং চিকিত্সা করলে আপনি অনেকদিন সুস্থ থাকবেন। সার্জারি করার সময় টিউমারটি বগলে লসিকা গ্রন্থিসহ অপসারণ করলে এই রোগ পুনর্বার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অসম্পূর্ণভাবে টিউমার অপসারণ করলে এই রোগ আবার হতে পারে। বর্তমানে অপারেশন টেকনোলজি অনেক উন্নতি লাভ করেছে যার ফলে এই রোগের চিকিত্সা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। তাছাড়া এডভান্স ব্রেস্ট ক্যান্সারে এখন টিউমার ফেলে দিয়ে ব্রেস্ট এরিয়া রিকস্ট্রাকশনও করা হচ্ছে।
[তথ্যঃ ডাঃ এম এ হাসেম ভুঁইয়া, হেলথ ম্যাগাজিন]
ফাতেমা খাতুন: জেনারেল ও কলোরেক্টাল সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক, সার্জারি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।/সূত্র:গ্লোবটুডেবিডিডটকম,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.