বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৮.১ ধারায় প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল যে, “আদিবাসীদের জমি, জলাধার এবং বন এলাকায় সনাতনি অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশন গঠন করা হবে।” ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২২.১ ধারায় বলা হয়েছে যে, “ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জমি, বসতভিটা, বনাঞ্চল, জলাভূমি ও অন্যান্য সম্পদের সুরক্ষা করা হবে। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের বেহাত হওয়া ভূমি উদ্ধারের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের জন্য এভাবে নির্বাচনী অঙ্গীকার প্রদান করলেও বিগত ৭ বছরে এ বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পক্ষান্তরে সরকারী উদ্যোগে তথাকথিত ইকো-পার্ক, জাতীয় উদ্যান, সাফারী পার্ক, সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইত্যাদি নামে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের চিরায়ত ভূমি অধিকার খর্ব করে আদিবাসীদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
অপরদিকে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা আদিবাসীদের ভূমি জবরদখল করে চলেছে। তাই সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের বেহাত হওয়া জায়গা-জমি পুনরুদ্ধার ও ভূমি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করা অপরিহার্য।
আরো উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে “পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হবে” মর্মে অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ- বিশেষ করে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থা কার্যকরকরণ, ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদের পুনর্বাসন, ভূমি সমস্যা সমাধান, বেসামরিকীকরণ ইত্যাদি মৌলিক বিষয়সমূহ এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। বর্তমানেও চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর কোন প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এমতাবস্থায় সমতল আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ, দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ১৮ জানুয়ারী সকাল ১০ থেকে ১১ টায় কক্সবাজার পৌরসভা চত্বরে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার আঞ্চলিক শাখার সভাপতি থোইঅং বুবু’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মংথেন হ্লা রাখাইন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী গণমানববন্ধন কর্মসূচীতে সংহতি বক্তব্য রাখেন, জেলা ট্রেড ইউনিয়নের আহবায়ক অনিল দত্ত, বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টি চেয়ারম্যান জগদীশ বড়ুয়া পার্থ।
গণমানববন্ধনে কর্মসূচীতে পাঠ করেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার আঞ্চলিক শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ক্য জ অং। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, প্রচার সম্পাদক ছিং সুই মারমা, মংফ্রু মারমা, নিরন্ত অংছেন, প্রমূক।
You must be logged in to post a comment.