সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কক্সবাজারের শুটকি গরীবের পাত থেকে অভিজাতদের খাবার মেন্যুতে

কক্সবাজারের শুটকি গরীবের পাত থেকে অভিজাতদের খাবার মেন্যুতে

কক্সবাজারের শুটকি গরীবের পাত থেকে অভিজাতদের খাবার মেন্যুতে

কক্সবাজারের শুটকি গরীবের পাত থেকে অভিজাতদের খাবার মেন্যুতে

অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সভিউ:

কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহি খাবার শুটকি। সমগ্র বাংলাদেশের এমনকি বিদেশেও শুটকির জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার। বাঙালী বলতেই শুটকি খেতে পছন্দ করেন। বাংলাদেশের শুটকি বাজার মূলত সাগর তীরবর্তী কক্সবাজার নির্ভর।

এক সময়ে এ শুটকি গরীবের পাতে থাকলেও এখন সেই শুটকি অভিজাতদের খাবার মেন্যুতে চলে গেছে। অনেকের কাছেই অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুস্বাদু খাবার শুটকি মাছ।

জানা যায়, সামুদ্রিক মাছের সংকটের কারণে বাজারদাম চড়া হলেও শুটকি খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়নি মোটেও। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় শুটকি ক্রমশ খদ্যবিলাসে পরিনত হচ্ছে। শুটকি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এ অঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবিকা।

কক্সবাজার জেলার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ শুটকি উত্পাদনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতও হয়ে থাকে।

কয়েক বছর আগেও কক্সবাজার শহরে শুটকিমাছ বিক্রি হতো স্থানীয় বড় বাজারের ছোট ছোট শুটকির দোকান কিংবা কানাইয়ার বাজার ও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সড়কের ফুটপাতে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গাতে। এখনো ঐ বাজারের দোকানগুলোতে বিক্রি হলেও বর্তমানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ বার্মিজ মার্কেট ও সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টের অভিজাত দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশবিদেশের পর্যটকরা এসব পরিপাটি সুন্দর দোকান থেকে ঝকঝকে পলিথিন মোড়ানো নানা জাতের মাছের শুটকি অনায়াসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি শুটকি বিলাসীদের জন্য কক্সবাজার ই-সপ নিয়ে এসেছে বিভিন্ন জাতের শুটকি অর্ডারের অনলাইন ব্যবস্থা।

সরেজমিনে আরো জানা যায়, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া, গোরকঘাটা, তাজিয়াকাটা, কুতুবজোম, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ, খুদিয়ারটেক, আলিআকবর ডেইল, অংজাখালী, পশ্চিম ধুরুং, টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, জালিয়াপাড়া, সদর উপজেলার নাজিরারটেক, খুরুশকুল, সমিতিপাড়া, চৌফলদন্ডিসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় বিপুল পরিমাণ শুটকি তৈরী হয়।

কক্সবাজার জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০/১৫ ট্রাক অর্থাত্ ৮০ থেকে ১০০ টন শুটকি মাছ চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাধারণতঃ ভাদ্র মাস থেকে ফাল্গুন (সেপ্টেম্বর- ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত শুটকি মাছ উত্পাদিত হয়। যতদিন সূর্য্যরে তীব্র তাপ পাওয়া যায় ততদিন শুটকি উত্পাদিত হয়।

সাগরে ধরা পড়া শুটকি মাছের মধ্যে রয়েছে রূপচাঁদা, ছুরি, লাক্কা, কুরাল, সুরমা, শৈল, কাচকি, চিংড়ি, মলা, লইট্ট্যা, গইন্যা, বাইলা, ফাইস্যাসহ প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ। কক্সবাজারে শুটকি শুকানোর সবচেয়ে বড় মহাল কক্সবাজার শহর সংলগ্ন পশ্চিম সাগরের তীরে নাজিরারটেকে এলাকা। প্রায় ১শ’ একর এলাকা জুড়ে শতশত বাঁশের মাচায় নানা জাতের মাছ শুকানো হয়। মাছকে মাছি ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য প্রকৃতিকভাবে সুর্য্যে প্রখর তাপ ব্যবহার করা হয় বলে শুটকী উত্পাদনের সাথে জড়িতরা বলেন।

এ ব্যাপারে অনলাইনে শুটকি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার ই-সপের স্বত্বাধিকারী লিটন দেবনাথ সৈকত বলেন, এমন একসময় ছিল পোকামাকড় ও মাছির কারণে অনেক মূল্যবান শুটকি নষ্ট হয়ে যেতো। তাই ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের কীটনাশক শুটকিতে ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন মাছগুলো সূর্য্যরে প্রখর তাপে ভালোভাবে শুকিয়ে স্বচ্ছ বাতাস নিরোধক স্বাস্থ্য সম্মত পলিথিনের প্যাকেটে সংরক্ষণ করা হয়।

বার্মিজ মার্কেটের সবচেয়ে বড় দোকান মোল­া শুটকি বিতানের মালিক আবদু রাজ্জাক বলেন, শুটকি মাছ দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য কিছুদিন আগেও মারাত্মক কিটনাশক ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে ভেজাল তদারকি বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে এসব কাজ কারবার। একই কথা বলেছেন, ঐ মার্কেটে অবস্থিত সৈকত শুটকি মালিক মোহাম্মদ আলী, রাঙ্গাবালী শুটকি বিতানের মালিকরা দাবী করেন, তাদের দোকানের শুটকি কীটনাশক মুক্ত।

সুত্রে জানা যায়, ১৯৭২-১৯৭৩ স্বাধীনতার পর পর শুটকি রপ্তানী খাতে সরকারের আয় হয়েছে ১৭ হাজার ৯শ টাকা। ১৯৮৫-৮৬ সালে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮ লক্ষ টাকা, ১৯৮৬-৮৭ অর্থ সালে আয় হয়েছে ১২ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা, ১৯৮৭-৮৮ সালে ১৫ কোটি ০৫ লক্ষ টাকা, ১৯৮৯-৯০ অর্থ বছরে ১৭ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা, ১৯৯০-৯১ অর্থ সালে ২০ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ৬১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মত শুটকি মাছ রপ্তানী করে আয় হয়।

শুটকি রপ্তানীকারকদের সূত্রে আরো জানা গেছে, গরমের সময় অর্থাত্ ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক এ তিন মাস যখন দক্ষিণের বাতাস শুরু হয় তখন মাছির ডিম পাড়ার মৌসুম। এসময় মাছি বসলেই ৬ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা ফোটা শুরু হয় এবং শীত মৌসুমে বাতাস যখন উত্তর থেকে প্রবাহিত হয় মাছি বসলেও ডিম হয় না। তাই এসময়ে শুটকী উত্পাদনকারীরা কীটনাশক বিহীন শুটকি মাছ উত্পাদন করেন।

ব্যবসায়ীদের সুত্রে জানা গেছে, শুটকি মূলত রপ্তানী হয় সৌদি আরব ও হংকং এ। কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার বন্ধ স্বাস্থ্য সম্মত শুটকী তৈরী, বর্ষা মৌসুমে শুটকি তৈরীর প্রযুক্তি সরবরাহ এবং এখাতে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে শুটকি রপ্তানীতে অনায়াসে ১শ কোটি টাকার অধিক বৈদেশীক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে বলে এ সম্পর্কিত ব্যবসায়ীরা মনে করেন।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/