প্রকাশ্যে বন্দুক প্রদর্শনকারী রাসেল সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েও বহাল তবিয়তে
নিজস্ব প্রতিনিধি; চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে কতিপয় যুবক এখন উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়ার পাশাপাশি নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে তারা। তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ড নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন করায় সাংবাদিকদের হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে। লিখিত-অলিখিত অভিযোগ করলেও অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা অস্ত্র উদ্ধার না করে অস্ত্রবাজদের সাথে সাংবাদিককে আপোসের প্রস্তাব দিচ্ছে পুলিশ।
এছাড়া ওই অস্ত্রবাজরা নিজেদের মধ্যেও হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চকরিয়া পৌরশহর। ফলে যেকোন সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারী বিকালে ছাত্রলীগ পরিচয় দেয়া দু’গ্রুপ বালিকা বিদ্যালয় সড়কে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়। এসময় রাসেল চন্দ্র সুশীল দেশীয় তৈরী বন্দুক নিয়ে কিরিচিধারী প্রতিপক্ষকে ধাওয়া দেয়। এসময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলে আহত হয় শিক্ষক হৃদয় রঞ্জন দাশ। এঘটনায় সংবাদ পত্রে সংবাদ প্রকাশ পেলে ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছাড়াও হত্যার হুমকি দেয়ায় চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছোটন কান্তি নাথ। এছাড়া বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়ায় মৌখিক অভিযোগ করেন চকরিয়া প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুকুল কান্তি দাশ। এই অভিযোগ করার পরও পুলিশ রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠে রাসেলের নেতৃত্বাধীন অস্ত্রবাজরা।
আরো জানা যায়, অস্ত্র প্রদর্শন ও সাংবাদিককে হুমকি দেয়ার ঘটনাটি আপোস করে দিতে প্রকাশ্যে প্রস্তাব দেয় থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান। কক্সবাজার জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত সদস্য ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুকে আপোস করে দিতে প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আগে সাংবাদিকরা আপোস-বৈঠক করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
এদিকে, ১২ জানুয়ারী বিকালে অস্ত্রবাজ দু’গ্রুপ সিটি সেন্টারের সামনে মারামারিতে লিপ্ত হয়। এদিন সন্ধ্যায় ওশান সিটিতে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সশস্ত্র একপক্ষ অন্যপক্ষকে ধাওয়া দিলে মগবাজারস্থ কোর্ট এলাকায় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় রবিন নামের এক ছাত্রলীগ নেতা। এসময় আহত রবিনকে ধাওয়াকারীরা পেটানোর চেষ্টা করলে তাকে রক্ষা করে প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঘটনার সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র বহন করতে দেখা যায় বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়। থানার সামনে দিয়ে এ ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে পুলিশ।
অন্যদিকে, সশস্ত্র মহড়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ওসিকে অনুরোধ করলে ওসি সাংবাদিকদেরই সহায়তা চান অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে। এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে অস্ত্রবাজদের অনৈতিক ব্যবসা থেকে নিয়মিত বখড়া পাওয়ায় পুলিশ শত অপকর্ম দেখেও না দেখার বান করে যাচ্ছে।
অপরদিকে, বালিকা বিদ্যালয় সড়কে বেশ ক’জন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাসেলের নেতৃত্বে অস্ত্রবাজ ১০-১২ জন উশৃঙ্খল তরুণ যুবকের কারণে আমরা ব্যবসা করতে পারছিনা। ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত হাটাচলা করা লোকজনও ভীত সন্ত্রস্ত। সড়ক লাগোয়া বাসিন্দারাও হামলা আতংকে বাস করছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো.মতিউল ইসলাম বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয়-আশ্রয় দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে। অনৈতিক যেকোন কর্মকান্ডের সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের হুমকি দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
You must be logged in to post a comment.