সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / বালুখালী বস্তিতে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন

বালুখালী বস্তিতে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া :

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমরা এপারে এসে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সহায় সম্পদ, আত্মীয় স্বজন হারিয়ে রোহিঙ্গাদের বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে এপারে এসেও কোন কূলকিনারা পাচ্ছে না। অসহায় অবস্থায় ফেল ফেল করে চেয়ে থাকে অবুঝ ও নিস্পাপ শিশুরা। ক্ষুধার জ্বালায় মায়ের কাছে খাবার চাইলে, মা সন্তানদের সান্তনা দিয়ে কোন রকমে ডাল ভাত রান্না করে খাওয়াচ্ছে। পুষ্টিকর খাবার এসব শিশুদের ভাগ্যে জুটে না।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সফরকে সামনে রেখে মিয়ানমারের মংডু প্রদেশে সেনা তান্ডব আগের তুলনায় কমেছে। যে কারণে সীমান্তের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ভাঁটা পড়েছে। তবে কুতুপালং ও সীমান্ত সংলগ্ন বালুখালীর বনভূমিতে বসবাসরত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা খাদ্য, ওষুধ, বাসস্থান ও শীত বস্ত্রের অভাবে মানবেতর দিন যাপন করছে। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা আক্রান্ত হলেও তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়া সীমান্তের জিরো পয়েন্টের ১ কিলোমিটার পশ্চিমে ১০৫ হেক্টর বনভূমিতে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন ঘুরে দেখে এসব তথ্য জানা যায়। এসময় বালুখালী বস্তির ১নং ব্লকের মাঝি আব্দুল করিম জানায়, তার ব্লকে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। যাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র, বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও স্বজনহারা মহিলা। পরিবারে পুরুষ না থাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেকেই এখনো পর্যন্ত ঝুঁপড়ি নির্মাণ করতে পারেনি। কারো না কারো আত্মীয়তার সুবাধে ঝুঁপড়িতে কোন রকম রাতযাপন করছে। এসময় মিয়ানমারের নাইচ্ছং পাড়া থেকে ২ শিশু সন্তান নিয়ে আসা রহিমা আক্তার (২৩) জানায়, আমার স্বামী আব্দুল্লাহ (২৭) নিখোঁজ হয়ে গেছে প্রায় দেড় মাস। বর্মী সেনার জুলুম থেকে রক্ষা পেতে পাড়ালিয়াদের সাথে বালুখালী বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখনো ঝুঁপড়ি নির্মাণ করতে পারিনি। ছোট ছেলে জাহেদের (২) গায়ে প্রচন্ড জ্বর। টাকার অভাবে চিকিৎসাও নিতে পারিনি।

পাশে তার মামা রকিবুল্লাহর ঝুঁপড়িতে রাতযাপন করেন বলে সে জানায়। পার্শ্ববর্তী আরেক বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী, ২ সন্তান নিয়ে চারজনের একটি পরিবার কোন রকম পলিথিনের নিচে রাত কাটাচ্ছে। জানতে চাওয়া হলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানায়, রাতে পলিথিন থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশার পানি পড়ে। কাপড় চোপড় যা আছে তাও ভিজে যায়। ঠান্ডায় একটি ছেলে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। পাশের ঝুঁপড়িতে দেখা গেল ৭০ বৎসরের বয়োবৃদ্ধ আশরফ আলী জ্বরে কাঁতরাচ্ছে। তার মেয়ে ছমিরা (১৮) জানায়, টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা নিতে পারিনি। এম.এস.এফ হাসপাতালে গিয়েছিলাম সেখানে কিছু ওষুধ দিয়েছে, তাও জ্বর কমেনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আবছার জানান, তার এলাকায় গড়ে ওঠা বস্তিতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকেই অসচ্ছল পরিবার। এসব পরিবারগুলোতে পূণবাসন করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে অনেক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়রা যে যার সাধ্যমত শীতবস্ত্র, চাল, প্রভৃতি বিতরণ করছে। তথাপিও প্রচন্ড ঠান্ডায় বেশ কিছু বয়োবৃদ্ধ ও শিশু আক্রান্ত হয়েছে।

স্থানীয় চিকিৎসক ডাক্তার আনোয়ার ফয়সাল জানান, প্রচন্ড কুয়াশায় পলিথিন থেকে বৃষ্টির মতো পানি নির্গত হওয়ার কারণে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা ঠান্ডা জনিতে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেই টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছে না। আইওএম’র ফিল্ড কোর্ডিনেটর সৈকত বিশ্বাস জানায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজারেও অধিক রোহিঙ্গাদের ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ার মেম্বার জানান, প্রথম দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যক্তিবর্গ এসব রোহিঙ্গাদের নগদ টাকা ও শীত বস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেলাও ইদানিং তাও কমে গেছে। যে কারণে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আলাপ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর কালিরছড়ায় অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে প্রার্থী হলেন নুরুল আমিন

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অসহায় ও হত দরিদ্র মানুষের মুখে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/