জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মোট ১৬টি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে আটটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়। বাকী আটটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়।
বুধবার আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত ৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩টিতে মৃত্যদণ্ড, ২টি অভিযোগে যাবজ্জীবন ও ৩টি অভিযোগে খালাস দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
যে তিন অভিযোগে ফাঁসি বহাল
অভিযোগ-২ : এই অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ মে নিজামীর পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে পাবনার দুটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। এই অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন।
অভিযোগ-৬ : এই অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৭ নভেম্বর নিজামীর নির্দেশে পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা অভিযান চালিয়ে ৫২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখা হয়েছে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে।
অভিযোগ-১৬ : এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বিজয়ের উষালগ্নে ব্যাপকভাবে দেশের বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই হত্যাকাণ্ডের দায় নিজামীর ওপর পড়ে। এই অভিযোগেও ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।
দুই অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল
অভিযোগ-৭ : এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩ নভেম্বর নিজামীর দেওয়া তথ্য অনুসারে বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলীকে পাকিস্তানি সেনারা আটক ও হত্যা করে। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
অভিযোগ-৮ : এই অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৩০ আগস্ট নিজামী ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরোনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে সেখানে আটক রুমী, বদি, জালাল, আলতাফ মাহমুদকে হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা দেন।
এই অভিযোগেও ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
আপিলে যে ৩ অভিযোগ থেকে খালাস :
অভিযোগ-১ : এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৪ জুন পাবনা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউসে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তাঁকে নির্যাতন এবং ১০ জুন ইছামতী নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছেন।
অভিযোগ-৩ : এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শারীরিক শিক্ষা কলেজে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। নিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন। এই ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের রায়ে এই অভিযোগ থেকে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ-৪ : এই অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৮ মে নিজামী, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পাবনার করমজা গ্রামের নয়জনকে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। করমজা গ্রামের হাবিবুর রহমানকে নিজামীর পরিকল্পনায় হত্যা করা হয়। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে মৃত্যদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের রায়ে এই অভিযোগ থেকে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: রাইজিংবিডিডটকম,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.