এম.রাসেল খাঁন জয়; কুতুবদিয়া :
১৯৯১’র সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। এ’দিনের দিবাগত রাতে কুতুবদিয়াসহ গোটা উপকূলে হঠাৎ বাতাসের সর্বোচ্ছ গতিবেগ ঘন্টায় ২৬০ কিঃমিঃ ও জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চতা ছিল প্রায় ২০ ফুট। ইতিহাসের ভয়াবহতম প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপ কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। দীর্ঘ ২২ বছর পরে ও মানুষের জানমাল ও সহায় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠেনি। মুছে যায়নি স্বজন হারা মানুষের বেদনা। সেই ৯১’র বিভীষিকাময় দৃশ্য মানুষের মনে পডলে বুকফাটা আর্তনাদ ও আহাজারী লক্ষ্য করা যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় এলাকার ১লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ক্ষয়ক্ষতি হয় ১০ হাজার ৫০০ কোটির মত এবং গৃহহারা হয়ে পড়ে ১ কোটি মানুষ। তখন দ্বীপ রক্ষা বেড়িবাধের অবস্থা তেমন খারাপ ছিলনা। দীর্ঘদিন পর সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবাণীকে মানুষ তেমন পাত্তা দেয়নি। তাছাড়া মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য তেমন কোন আশ্রয় কেন্দ্র ও ছিলনা। নানাবিধ কারণে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। বর্তমানে কুতুবদিয়ার উল্লেখযোগ্য বেড়িবাঁধ নেই তবে নির্মাণাধীন এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রায়ন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়নি। বিজ্ঞানিদের মতে চরম জলবায়ু ঝুকিতে রয়েছে দ্বীপ ও উপকূলীয় এলাকা। এ অবস্থায় ৯১’র মত ঘূর্ণিঝড় ও ২০০৭’র সিডরের মত দূর্যোগের সৃষ্টি হলে ৯১’র চেয়ে আরো বেশী প্রাণহানীর আশংকা রয়েছে।
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট’র তথ্য মতে ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়ার ৬ ইউনিয়নে ৯ হাজার ১৫, সরকারী তথ্যে প্রায় ১৫ হাজার ও বেসরকারী তথ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বর্তমানে কুতুবদিয়ার লোকসংখ্যা ২ লাখের কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় আশ্রায়ন কেন্দ্র রয়েছে ৭১ টি। জনসংখ্যা অনুপাতে আশ্রায়ন কেন্দ্রের সংখ্যা অতীব নগন্য। নির্মাণ ত্রুটির কারণে আশ্রায়ন কেন্দ্রগুলো জরাজীর্ণ ও ময়লা আর্বজনায় ভর্তি হয়ে অযত্নে অবহেলায় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। তা’ছাড়া অধিকাংশ আশ্রায়ন কেন্দ্রে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল গরুর গোয়াল, হাঁস-মুরগীর খামার, কৃষি ও জেলে কাজের যন্ত্রপাতির গুদাম হিসাবে ব্যবহার করছে। বিভিন্ন দূর্যোগকালীন সময়ে আশ্রায়ন কেন্দ্রগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় সাধারণ মানুষ মাথা গুজার ঠাই পায়না। ইফাদ সংস্থার মাটির মুজিব কিল্লাযুক্ত ১২টি আশ্রায়ন কেন্দ্র গুলো ও বেদখলে রয়েছে।
কুতুবদিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের সাথে কথা বলে জানা গেছে জনসংখ্য অনুপাতে আরো অন্তত শতাধিক আশ্রায়ন কেন্দ্রের দরকার। সদ্য নির্বাচিত বড়ঘোপ ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান তার এলাকায় ৪টি আশ্রায়ন কেন্দ্র দরকার।
উত্তর ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ দৌল্লাহ বলেন তার এলাকায় জনসংখ্যা অনুপাতে আরো ১০ টি আশ্রায়ন কেন্দ্র দরকার। কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যন আজমগীর মাতবর জানান তার এলাকায় জনসংখ্যা অনুপাতে আরো ৮টি আশ্রায়ন কেন্দ্র দরকার। লেমশীখালীর ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোছাইন জানান, তার এলাকায় আরও ১৫টি আশ্রায়ন কেন্দ্র দরকার। দক্ষিণ ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান তার এলাকায় ১২টি আশ্রায়ন কেন্দ্র দরকার।
এদিকে আজকের এই দিনে নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল খতমে কুরআনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হচ্ছে।
You must be logged in to post a comment.