সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / আমি আমার জন্মভূমি হারিয়েছি- ছেলে কখন জন্মভূমি হারাবে তার অনিশ্চিয়তায়

আমি আমার জন্মভূমি হারিয়েছি- ছেলে কখন জন্মভূমি হারাবে তার অনিশ্চিয়তায়

উখিয়া মধুরছরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
কুতুপালং মধুরছরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) আলি আকবর বলেন, ক্ষুধা নিবারনের জন্যে খাদ্য যেমন প্রয়োজন তেমনি নামাজের জন্যে আমাদের জায়গা প্রয়োজন। মিয়ানমারে আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার পায়নি। এখানে এসে আমরা ক্ষুধা নিবারনের জন্যে খাদ্য যেমন পাচ্ছি তেমনি নামাজ পড়ার জন্যে যথেষ্ট জায়গা পেয়েছি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পর্যাপ্ত মসজিদ রয়েছে। তাই আমরা মহাখুশি।

গত বছরের আগস্ট মাসে রাখাইন প্রদেশের মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন। থাইংখালী তাজিনিমারখোলা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা শফি উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এখনো গণহত্যা চলছে। এখনো যে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা রাখাইনে রয়ে গেছেন- তারা নানা ধরনের অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। এখানে আমরা শান্তিতে আছি। প্রিয় জন্মভূমি মিয়ানমারে যা পায়নি তার চেয়ে বেশি এখানে পাচ্ছি। আমাদের সন্তানরা ক্যাম্পে লেখা-পড়া করছেন।

বালুখালী ক্যাম্পের আল কায়েস বলেন, শিক্ষা, স্বাস্হ্য সেবা, খাদ্য নিরাপত্তাসহ সব রকমের সুযোগ সুবিধা আমরা পেয়ে যাচ্ছি। তবে মাতৃভূমির প্রতি যে আবেগ স্বদেশ প্রেম আমরা তা বুঝাতে পারব না। স্বজনহারা যে কষ্ট তা মনে হলে নিজেদের খুবই অসহায় মনে হয়।

থাইংখালী ক্যাম্পের আয়েশা ছিদ্দিকা বলেন, বাবা মা ভাইকে হারিয়ে স্বামীর সাথে পালিয়ে এসে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি এক বছর আগে। এই ক্যাম্পে আমার এক ছেলের জন্ম হয়েছে। তার বয়স এখন এক বছর। নাম এরদোয়ান। এরদোয়ানের জন্ম বাংলাদেশের এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আমি আমার জন্মভূমি হারিয়েছি। জানিনা আমার ছেলে তার জন্মভূমি কখন হারাবে। অনিশ্চিয়তায় আমাদের জীবনযাত্রা।

চল্লিশ বছরের এক রোহিঙ্গা নারী নাম তার ফাতেমা। তিনি জানান, বিবাহ উপযুক্ত তিন মেয়ে ঘরে রয়েছে তার।এদের মধ্যে দুই বোন কোরআনের হাফেজা। মিয়ানমারে আমাদের অট্রালিকা ছিল। এখানে ঝুপড়ি ঘরে সবাই মিলে থাকতে হচ্ছে। মেয়েদের বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, জোরপূর্বক মিয়ানমার সরকার আমাদেরকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

এদিকে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এরদোয়ানের স্ত্রী এ্যামিনিসহ বিশ্বের বড় বড় নেতারা উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নারকীয় তান্ডব, নির্বিচারে হত্যা, ও ধর্ষণের বর্ণনা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিশ্ব নেতারা। বিশ্ব নেতাদের রোহিঙ্গা শিশুরা জানিয়েছেন, তাদের জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। অনেক শিশু সন্তানের বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিষ্ঠুর নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি অনেক শিশু।

বিশ্ব নেতারা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের কথা শুনে তাদের বুকে জড়িয়ে নেন। তাদেরকে সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কিন্তু এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার মতো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা না যাওয়ায় স্থানীয়রা হতাশ হয়েছেন। স্থানীয় নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে এখানকার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসহ কর্মক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নতুন চাপ। বর্তমানে কক্সবাজারে চারজন বাংলাদেশীর বিপরীতে একজন রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Sagar-23-4-2024.jpeg

ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কমিটি ঘোষণা : রিয়াজ সহ-সভাপতি মনোনীত

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :বাংলাদেশ ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/