উখিয়ায় ইউপি নির্বাচনের আগাম হাওয়া : ছাত্র-নেতাদের কারণে দলীয় প্রার্থীরা দুশ্চিন্তায়

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া :

কক্সবাজারের রাজনৈতিক সচেতন উপজেলা উখিয়া। বিএনপি-জামায়াতের দূর্গ বলে পরিচিত এই উপজেলায় ভোটে ও সংগঠনে শক্তিশালী হলেও উখিয়ার বিএনপি-জামায়াত মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ও বৌদ্ধ-মন্দিরে হামলা নাশকতার মামলার কারণে প্রথম সারির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। এতকিছুর পরেও গেল উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছিলেন। বর্তমানে উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে বিএনপি-জামায়াত ও ২টিতে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান রয়েছেন।

সরেজমিন পালংখালী ইউনিয়ন ঘুরে ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির গফুর উদ্দিন চৌধুরীর জনসমর্থনে ফাটল ধরাতে পারেনি। আগামী ইউপি নির্বাচনে এই ইউনিয়ন থেকে জুয়েল আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে আওয়ামীলীগের এক অংশের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

অপরদিকে কক্সবাজার জেলা ছত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ জানান,এলাকায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ, রাস্তা-ঘাট ও মসজিদ মাদ্রাসায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি। অতীতে শাহাদাৎ হোসেন জুয়েলের বাবাসহ তিনি পর পর ৪বার ইউপি নির্বাচনে ফেল করেছেন।জনগণ তাদেরকে আর দেখতে চায়না। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। আমি এই মামলা আইনি মোকাবিলা করবো। সমপ্রতি এখানে এক যুবলীগ নেতা খুন হয়। এ খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যকার কোন্দল আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বর্তমানে এখানে দুটি গ্রুপে বিভক্ত আওয়ামীলীগ। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহাদাত হোসেন জুয়েল ও অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক ছাত্র নেতা আলী আহমদ। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চান জামায়াত। জামায়াতের একটি সূত্র বলছে, এই ইউনিয়নে তাদের দলীয় সু-শৃংখল কার্যক্রমসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী রয়েছে।তাই তারা এবার চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান, কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রশিবির নেতা মোহাম্মদ শাহ জাহানকে।

রাজা পালং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। তিনি এমপি আবদুর রহমান বদির শ্যালক। এক ভোটার জানান, অর্থ ও আধিপত্য দুটিই তার রয়েছে। তাই তিনি এবারও নির্বাচিত হবেন। রাজাপালং ইউনিয়নের ৫ বারের নির্বাচিত সফল চেয়ারম্যান মাদার তেরেসা স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বিএপি নেতা শাহ কামাল চৌধুরীকে পরাজিত করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার বিএনপি থেকে শাহ কামাল চৌধুরীকে আবার দাঁড় করাবেন এটা অনেকটা সুনিশ্চিত।

এদিকে বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তহিদুল আলম তহিদের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানান, আগামী রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অধ্যাপক তহিদুল আলম তহিদকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান তার আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসী। এখানে জামাতের কোন নেতাকর্মীকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মুজিবুল হক আজাদ এবারও চেয়ারম্যান পদে লড়বেন বলে জানা গেছে।

রত্নাপালং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা নুরুল কবির চৌধুরী। তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। তাকে অনেকে জামায়াত নেতা আবার অনেকে বিএনপি নেতা হিসেবে চেনে। তার সদাচালাপ ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তিনি এবারও ফিট বলে মনে করছেন ভোটাররা। এ ইউনিয়নে বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী এবার নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। তবে সাবেক সাংসদ শাহ জাহান চৌধুরীর আস্থাভাজন ও বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিশ্বস্থ সহচর বিএনপি নেতা খাইরুল আলম চৌধুরী চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াবেন বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন।

জামায়াতের পক্ষ থেকে এ ইউনিয়নে উপজেলা জামায়াত আমীর মাওলানা আবুল ফজলকে চেয়ারম্যান পদের জন্য অনেকটা নিশ্চিত করেছেন। সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল হুদা এবার আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচন করার পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েছেন। তাছাড়া সাবেক উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কবি আদিল উদ্দিন চৌধুরী ও চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াতে পারেন বলে এক ভোটার জানিয়েছেন।

হলদিয়া পালং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা কামাল উদ্দিন মিন্টু সাংবাদিকদের জানান, তিনি পাহাড় সমান ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কোরবানির গরু চুরির মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি এবারও নির্বাচন করবেন। আওয়ামীলীগ থেকে বাদশা মিয়া চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি থেকে ফজল করিমসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। জামায়াত ও এখানে প্রার্থী দিতে চায়।

জালিয়া পালং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। আওয়ামীলীগের ছৈয়দ আলমসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। জামায়াত ও প্রার্থী দেবেন বলে জানা গেছে।