মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আতংক থেকে মুক্তি পেলেও মানুষের কষ্ট শেষ হয়নি এখনো। লোকালয়ে প্রবেশ করা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের পানি বের না হওয়ায় তিনদিন ধরে দুই উপজেলার অন্তত ১০ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্নস্থানে আশ্রয়ে রয়েছে টানা তিনদিন। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ ও গ্রামীণ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
রোয়ানু’র তান্ডবে আংশিক ও সম্পূর্ণ ১৩ হাজার বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় ৪০ হাজার মানুষ বাসস্থান সমস্যায় ভুগছে। তারা খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। আশ্রয় নেয়া মানুষকে শুকনো খাবার দেয়ার পাশাপাশি পূণর্বাসন করতে বরাদ্দ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে উপজেলা প্রশাসন। পানি না নামায় ক্ষতি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ নিরুপন করা যায়নি। তবে, যেখান থেকেই পানি নামছে সেখানেই ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। জোয়ারের তোড়ে মগনামা জেটিঘাট ধসে পড়ায় পেকুয়া-কুতুবদিয়া যোগাযোগে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনগণকে।
পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়া মোহাম্মদ মোস্তাফিজ ভুইয়া জানান, রাজাখালীর নিরাশ্রয় ১৩’শ মানুষকে তিনদিন ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। হাজার মানুষ দূর্ভোগে পড়লেও পুরো উপজেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিনটন চাউল ও ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভোক্তভোগীদের তোপের মুখে পড়ার ভয়ে ইউপি সদস্যরা ওই অপর্যাপ্ত চাউল নিতে চাচ্ছেনা।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খান জানান, উপজেলার তিন ইউনিয়ন রাজাখালী, উজানটিয়া ও মগনামায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখানকার ৩০টি গ্রামের মানুষ এখনও পানি বন্দি। পানি থাকায় ক্ষতির পুরো হিসাব করা সম্ভব হয়নি।
চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ্য সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইলিয়াছ পেকুয়ার দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে অনেক পরিবারকে সাহায্য করেছি। পর্যাপ্ত সাহার্য্য পেতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবো।
চকরিয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহাসান উল্লাহ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার পর্যন্ত ৮ মেট্রিক টন চাউল ও ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম জানান, কিছু কিছু এলাকা ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির একটি বিবরণ বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে তৈরী করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। আংশিক তথ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি দেখানো হয় মত্স্য খাতে। প্রায় ৩০ কোটি টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে। পুরো ক্ষতির হিসাব দিতে মত্স্য বিভাগকে বলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ৭হাজার ১’শ টি বসতঘর আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ২.৬২ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তা ও ৬.৫০ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তা আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ২.৫৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৮৬.২০ হেক্টর সম্পূর্ণ ও ১.৩৫ হেক্টর আংশিক ফসল নষ্ট হয়ে কৃষকদের ক্ষতি হয় ২ কোটি ২৬ লাখ ৫’শ টাকার। এছাড়া ক্ষতির সম্পূর্ণ হিসাব নিরুপন করতে কয়েক দিন লাগবে বলে তিনি জানান।
You must be logged in to post a comment.