সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / আন্তর্জাতিক / ধ্বংসাবশেষে জীবিত আটকা অনেকে

ধ্বংসাবশেষে জীবিত আটকা অনেকে

সুনামিতে ধসে পড়া একটি মসজিদ। ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে ধসে পড়া ভবনের নিচে এখনো আটকা পড়ে আছে কয়েক ডজন মানুষ। তাদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকর্মীরা একটি হোটেল ও শপিংমলের সামনে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন, কিন্তু ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পনের কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না। এতে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

১ অক্টোবর, সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আটকা পড়া ব্যক্তিরা কিছু খাবার ও পানি পেয়েছেন, একইসঙ্গে তারা বের হয়ে আসার জন্য চিৎকার করছেন।

২৮ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সুলায়েসি দ্বীপের পালু শহরে সুনামি আঘাত হানে। সন্ধ্যার পর পর ওই শহরে তিন মিটার (১০ ফুট) উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ে। হাসপাতাল, হোটেল, বিক্রয় কেন্দ্রসহ প্রায় এক হাজার ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিধসের কারণে রাস্তা বন্ধ এবং সেতু ধসে পড়ায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা ধসে পড়া জায়গায় মাটি খুড়ে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৮৩২ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা।

নিহত ব্যক্তিদের সমাধির জন্য জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা পরিকল্পনা করেছে, যেখানে প্রায় ৩০০ মৃতদেহের সমাধি সম্ভব।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো দিন ও রাতের বেলায় উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করেছেন।

পালু থেকে বিবিসির সাংবাদিক জানিয়েছেন, ম্যাম্বোরো হেলথ ক্লিনিকের সামনে পাঁচ বছর বয়সী একজন শিশুকে স্ট্রেচারে দেখা গেছে, যার একটি পা ভেঙে গেছে। ওই শিশুকে একাই পাওয়া গেছে, তার পরিবারের সদস্যরা কোথায় আছেন জানা যায়নি। ক্লিনিকের চিকিৎসক স্যাসোনো বলেন, ‘আমরা জানি না তার পরিবারের সদস্যরা কোথায় এবং সে কোথায় বাস করত, তাও বলতে পারছে না।’ চিকিৎসক জানান, তার ক্লিনিকে কোনো জনবল নেই এবং চিকিৎসাপথ্যও শেষের পথে।

ওই ক্লিনিকে অনেক মৃতদেহ রয়েছে এবং এসব থেকে সেখানকার বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।

ডা. স্যাসোনো বলছেন, রোগের বিস্তার ঠেকানোর জন্য মৃতদেহগুলোকে সমাধি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো শুরু করেছে। আমরা অপেক্ষায় আছি, তাদের স্বজনরা এসে মৃতদেহ নিয়ে যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। ছবি: এএফপি

সাগরের তীরে এখন শুধু ইট-পাথরের টুকরো পড়ে আছে, যেখানে আগে মাছশিকারিদের গ্রাম ছিল। শুক্রবারের সুনামির প্রবল ঢেউয়ে স্থানীয়দের নৌকা ও গাড়িসহ সব চুরমার হয়ে গেছে। এখন কেউ কেউ তাঁবু তৈরি করে খোলা আকাশের নিচে থাকছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ধসে পড়া একটি শপিংমলের ভেতরে অনেকের মোবাইলের সংকেত পাওয়া গেছে এবং রোয়ে রোয়ে হোটেলের ধ্বংসাবশেষ থেকে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

একজন স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মী থালিব বাওয়ানো বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ধসে পড়া হোটেলের ভেতরে আটকে পড়া ৫০ জনকে উদ্ধারে মাত্র তিনজন উদ্ধারকর্মী রয়েছেন। ‘আমরা অনেকের কান্না ও চিৎকার শুনতে পাচ্ছি, এমনকি শিশুরও’, বলেন থালিব।

থালিব বলেন, ‘তারা আমাদের সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করছেন। বাইরে থেকে আমরা তাদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছি, যেন ভয় না পেয়ে সাহস পায়। কারণ তারা জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝিতে রয়েছে।’

তাদের কাছে পানি ও খাবার পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তাদের বাইরে বের করার জন্য তারা চিৎকার করছেন।

হারানো স্বজনকে খুঁজছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এএফপি

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বিমানবন্দর ধস ও যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় উদ্ধারকাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে সাহায্য পৌঁছাতেও বেগ পেতে হচ্ছে।

সুনামিতে শহরের প্রধান হাসপাতাল ধসে পড়েছে। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতাল ভেঙে পড়ায় আহতদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে, কোথাও কোথাও ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর টম হোয়েলস বলেন, ‘এখানের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পথ্য নেই, আহতদের রাখার জন্য জায়গা নেই, ক্ষতিগ্রস্তদের যদি চিকিৎসা ও আশ্রয় না দেওয়া হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। আমরা কিছু আশ্রয়স্থলে শিশুদের জন্য খেলা পাঠিয়েছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, গ্রিনিচ সময় সন্ধ্যায় সুলায়েসির কেন্দ্রে ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। তাৎক্ষণিকভাবে সতর্কতা জারি করা হলেও ঘণ্টাখানেক পর তা তুলে নেওয়া হয়।

ধসে পড়া ভবনে আটকা রয়েছেন অনেকে। কিন্তু তাদের উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ছবি: এএফপি

দেশটির জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান মুহাম্মদ সায়্যুগি সংবাদ সংস্থা শনিবার এএফপিকে বলেন, ‘অনেক মরদেহ পড়ে আছে, আমরা সঠিক সংখ্যাটা জানি না। এটাও নিশ্চিত নয় যে তাদের মৃত্যু ভূমিকম্পে নাকি সুনামিতে হয়েছে।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় দঙ্গালা শহরে প্রথমে আঘাত হানে ভূমিকম্প। এতে একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। সন্ধ্যার পরও পালু শহরের সৈকতে ‘বিচ ফেস্টিভ্যালে’র প্রস্তুতি চলছিল। ভূমিকম্পের পর সুনামির আঘাতেই মৃতের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাগুলো।

চিকিৎসা নিতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। ছবি: এএফপি

দঙ্গালা ও পালুতে তিন লাখ লোকের বসবাস। এখন পর্যন্ত পালু শহরের নিহতের খবর পাওয়া গেলেও দঙ্গালার খবর বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দেশটির লম্বক দ্বীপে ৭.০ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়।

সূত্র:priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/06/Missile-Iran.jpg

শব্দের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি দ্রুতগামী ইরানের হাইপারসনিক

‘ফাত্তাহ’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ছবি প্রকাশ করেছে আইআরএনএ। অনলাইন ডেস্ক : ইরান তাদের প্রথম হাইপারসনিক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/