পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘাঁটি পাঞ্জাব। প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির মোট আসনের অর্ধেকের বেশি এখানে। দেশটির সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাঞ্জাবে যে দল আসন গেড়ে বসতে পারবে পুরো পাকিস্তান হবে তারই।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটির ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) পাঞ্জাব শাসন করছে। এবারের নির্বাচনে পাঞ্জাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এনের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে ইমরান খানের তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) পার্টি। জরিপ বলছে, নির্বাচনে নওয়াজ ও ইমরান খানের দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে পাঞ্জাব প্রদেশের ভোটই ব্যবধান গড়ে দিতে যথেষ্ট। বিশ্লেষকরা বলছে, পাঞ্জাবই হতে যাচ্ছে এবারের জাতীয় নির্বাচনের মূল যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে যে জয় পাবে, তারাই মূলত সরকার গঠন করতে পারবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে, মোট ১০ কোটি ৬০ লাখ নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে মোট আসন সংখ্যা ৩৪২।
এর মধ্যে সরাসরি নির্বাচিত ২৭২টি। যেখানে পাঞ্জাবে সবচেয়ে বেশি ১৪১টি আসন। সিন্ধু প্রদেশে ৬১, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ৩৯, বেলুচিস্তানে ১৬, কেন্দ্রশাসিত উপজাতীয় এলাকায় ১২ ও কেন্দ্রের রাজধানী সংলগ্ন (ইসলামাবাদ) ৩টি আসন রয়েছে। পাঞ্জাব প্রদেশ নওয়াজ শরিফের জন্মস্থান। পিএমএল-এনের শক্ত ঘাঁটি। মূল লড়াইটা হবে এখানেই। গত ১০ বছর ধরে এখানে ক্ষমতার আসনে রয়েছে পিএমএল-এন। প্রদেশটির সদ্য বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নওয়াজের ছোট ভাই ও দলের প্রধান শাহবাজ শরিফ। পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরের এনএ-১৩২ (লাহোর-১০) আসন থেকে লড়ছেন তিনি। নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন না হলে শাহবাজই হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
পিএমএল-এনের শক্তিশালী ঘাঁটিতে প্রতিদ্বন্দ্বীরা কতটা দাঁত ফোটাতে পারবেন সেটাও লক্ষণীয়। সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষা বলছে, জনপ্রিয়তার সূচকে নওয়াজের দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই। দলটির নেতা ইমরান খান বিরোধী রাজনৈতিক মুখ হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপজয়ী পাক ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বারবার বিয়ে করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। এতে তার ভাবমূর্তিতে কতটা কালি লেপটেছে সেটা বলে দেবে পাঞ্জাবের ভোট। পিটিআই দলটি পাঞ্জাবের মাটিতে পিএমএল-এনকে বেগ দিতে না পারলে জয়ের আসা দুরস্ত।
ভোট কারচুপিতে আশ্চর্য না তরুণরা : এবারের নির্বাচনে পাকিস্তানে জমিদারতন্ত্রের পতন চায় তরুণরা। দেশটিতে যেসব দল জমিদারতন্ত্রের মাধ্যমে বৈষম্য টিকিয়ে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠছে তারা। এ বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার অবসানে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তরুণরা। শহর থেকে গ্রামে জমিদার ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে নতুন প্রজন্মের এই ভোটাররা। আগামীর পাকিস্তানকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তুলতে চায় তারা। আজকের নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায়। আবার কারচুপির যে জোর আশঙ্কা, তাতেও আশ্চর্য নয় তারা।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে পাকিস্তান টুডে জানায়, স্বাধীনতার তিন বছর পরই ১৯৫০ সালে পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয়ভাবে জমিদার প্রথার উচ্ছেদ হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রথার উচ্ছেদ হলেও ৭০ বছর পর এসেও সদর্পে তা বিরাজমান। অল্প কিছু মানুষ নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের সিংহভাগ জমি।
সূত্র:deshebideshe.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.