সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / অপরাধ ও আইন / মোবাইল কোর্ট চালিয়েও লামায় বন্ধ হচ্ছেনা বালু উত্তোলন : কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ পরিবেশবাদীদের

মোবাইল কোর্ট চালিয়েও লামায় বন্ধ হচ্ছেনা বালু উত্তোলন : কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ পরিবেশবাদীদের

https://coxview.com/wp-content/uploads/2021/08/Balo-Rafiq-18.08.2021-7.jpg

মোবাইল কোর্ট চালিয়েও লামায় বন্ধ হচ্ছেনা বালু উত্তোলন

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :

পার্বত‍্য জেলা বান্দরবানের লামায় কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছেনা বালু সন্ত্রাস। উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও কিছু হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বালু তোলার মেশিন ধ্বংস ও বালু জব্দ করে আসলেও পরেরদিন হতে উক্ত স্থানে আবারো চলে বালু উত্তোলন। এমনকি মোবাইল কোর্টে জব্দকৃত বালুর স্টক হতেও বালু বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। এই যেন এক মগের মুল্লুক!

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়ন (ফাঁসিয়াখালী, সরই, আজিজনগর, ফাইতং) থেকে প্রায় সারা বছরই বালু উত্তোলন করা হয়। বর্ষা এলে উত্তোলনের মাত্রা বেড়ে যায়। অস্বাভাবিক বালু তোলার কারণে পাহাড়, জমি, ফসলের মাঠ, নদী-খালের পাড় ও মানুষের বসতবাড়ি ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। চলতি বর্ষায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি খাল, হারগোজাছড়া ও ফাঁসিয়াখালী ছড়া থেকে বালু তোলার কারণে ৩০/৩৫টি বসতবাড়ি নদী-খালের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। অসংখ্য ফসলের মাঠ ভেঙ্গে গেছে। শুধুমাত্র বালু তোলার কারণে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি খালের উপর নির্মিত পিসি গার্ডার ব্রিজ, ইয়াংছা খালের উপর নির্মিত বনপুর বড় মার্মা পাড়া ব্রিজ, ফাঁসিয়াখালী ছড়ার উপর নির্মিত বড়ছনখোলা ব্রিজ, সরই ইউনিয়নের পুলু খাল নির্মিত হাসনা ভিটা ব্রিজ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। য কোন সময় ব্রিজগুলো ভেঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

https://coxview.com/wp-content/uploads/2021/08/Balo-Rafiq-18.08.2021-3.jpg

সরই ইউনিয়নের ভাইগ্যার দোকান পাড়া, ছালাম মেম্বার পাড়ার বালু তোলার দশ্য।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি, মালুম্যা, ভাল্লুকখাইয়া ঝিরি, লাইল্যামার পাড়া, কালাপাড়া, আব্দুল্লাহ ঝিরি, কাগজীখালা, সাপরগাড়া, হারগোজা, ফাঁসিয়াখালী ছড়া সহ বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন চলছেই। ফাঁসিয়াখালির বগাইছড়ি খালের এমন কোনো স্থান নেই যেখান বালু উত্তোলন হচ্ছে না। সরই ইউনিয়নের আমতলী, পুলু খাল, ভাইগ্যার দোকান পাড়া, ছালাম মেম্বার পাড়া ও আমির হামজা পাড়ায় বালু উত্তোলন হচ্ছে। আজিজনগর ইউনিয়নের মিশন পাড়া, ইসলামপুর ও ৯নং ওয়ার্ড আমতলী এলাকা, কিল্লাখোলা এলাকায় সহ ফাইতং ইউনিয়নের ফাদুরছড়ায় বারোমাস বালু উত্তোলন হয়। এ নিয়ে পত্রিকায় অসংখ্যবার খবর প্রকাশিত হলেও এর কোনো প্রভাব পড়ছে না এই বালুখেকোদের ওপর। মাঝেমধ্যে নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। তবে মূল বালু উত্তোলনকারী ও বালু ব্যবসায়ীরা অভিযানের আওতার বাইরে রয়ে যায়।

https://coxview.com/wp-content/uploads/2021/08/Balo-Rafiq-18.08.2021-1.jpg

ফাঁসিয়াখালীর বগাইছড়ি ও হারগোজা এলাকায় বালু উত্তোলন বিদ্ধস্ত এলাকা।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি এলাকার এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, উপজেলা প্রশাসন বিজিবিকে সাথে নিয়ে গত কয়েকদিন আগে বগাইছড়িতে ৩টি বালুর মেশিন ও কয়েকটি বালুর স্তুপ জব্দ করে নিয়ে যায়। তারপরের দিনই ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বগাইছড়ির এরশাদুর রহমান আরো ৪টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা শুরু করে। এমনকি সরকারি জব্দকৃত বালুর স্তুপ থেকে ট্রাক করে বালু বিক্রি করছে।

https://coxview.com/wp-content/uploads/2021/08/Balo-Rafiq-18.08.2021-2.jpg

ফাঁসিয়াখালীর বগাইছড়ি ও হারগোজা এলাকায় বালু উত্তোলন বিদ্ধস্ত এলাকা।

উপজেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, গত ৯ আগস্ট লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজা রশীদ আজিজনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আমতলী পাড়া দুইটি বালি উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার এবং পাইপ নষ্ট করা হয়। এছাড়া মোবাইল কোর্ট কর্তৃক তিনটি বালির স্তুপ জব্দ করা হয় এবং গত ১৬ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরই ইউনিয়নের ৭ ও ৫নং ওয়ার্ডের ছালাম মেম্বার পাড়া এবং ভাইগ্যার দোকান পাড়া এলাকায় অবৈধ বালি উত্তোলন প্রতিরোধ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। ৫টি স্থানে চারটি বালি উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত ড্রেজার এবং পাইপ নষ্ট করা হয়। মোবাইল কোর্ট কর্তৃক পাঁচটি বালির স্তুপে প্রায় ৪ লক্ষ ঘনফুট বালি জব্দ করেন। উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট শুধুমাত্র বালুর ড্রেজার ধ্বংস ও বালু জব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় দোষীরা বিচারের আওতায় না আসায় বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছেনা বলে মনে করছনে স্থানীয়রা।

https://coxview.com/wp-content/uploads/2021/08/Balo-Rafiq-18.08.2021-5.jpg

আজিজনগর আমতলী এলাকায় অবৈধ বালু তোলার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট।

উপজেলা পরিবেশ রক্ষা পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক রুহুল আমিন বলেন, বালু তোলে পরিবেশ ধ্বংসের কাছে নিয়োজিত কারা বিরুদ্ধে কোনো আইনী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। নামমাত্র অভিযান বালু উত্তোলন বন্ধ হবেনা।

https://coxview.com/wp-content/uploads/2021/08/Balo-Rafiq-18.08.2021-6.jpg

আজিজনগর আমতলী এলাকায় অবৈধ বালু তোলার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট।

বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুস সালাম বলেন, বালুখেকো বেশ কয়েকজনের নাম তালিকাভুক্ত করে তা চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর পাঠিয়েছি। তাদের নামে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজা রশিদ বলেন, জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে আরো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট চলমান থাকবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

পরিবেশ অধিদপ্তরকে পকেটে রেখে ইটভাটা চালায়- ভাটা মালিক https://coxview.com/brickfield-rafiq-13-03-2024-1/

পরিবেশ অধিদপ্তরকে পকেটে রেখে ইটভাটা চালায়- ভাটা মালিক

লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ফাদুরছড়া এলাকার সেভেন বিএম ইটভাটায় পাহাড় কাটা হচ্ছে ও জ্বালানোর জন্য ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/