সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / লামা পৌরসভায় নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি : অপরিকল্পিত আবাসনে কমছে কৃষিজমি

লামা পৌরসভায় নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি : অপরিকল্পিত আবাসনে কমছে কৃষিজমি

লামা পৌরসভায় নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি : অপরিকল্পিত আবাসনে কমছে কৃষিজমি, Lama Land - Rafiq -17.09.2023 (6). https://coxview.com/lama-land-rafiq-17-09-2023-6/
লামা পৌরসভার মধুঝিরি কলেজগেইট এলাকায় কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে জনবসতি।

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :

 

** ‘যত্রতত্র আবাসনে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি’।
** ‘সবচেয়ে বেশি কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে লামা পৌর এলাকায়’।
** ‘চাষের জমি, জলাশয় ভরাট, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, চলাচলের রাস্তাসহ নিয়ম না মেনে আবাসন তৈরি হওয়ায় জনজীবন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে’।

পার্বত্য জেলা বান্দরাবনের লামা উপজেলায় কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক আবাসন গড়ে উঠছে। কোথাও ফসলি জমি ভরাট করে, কোথাও জলাশয় ভরাট, কোথাও পাহাড় কেটে আবার কোথাও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, চলাচলের রাস্তা সহ অন্যান্য নিয়ম না মেনে একের পর এক আবাসন তৈরি হওয়ায় জনজীবন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


উপজেলার সবচেয়ে বেশি কৃষিজমি ভরাট করে অপরিকল্পিত আবাসন বাড়ছে লামা পৌরসভায়। একদিকে উন্নয়ন অন্যদিকে সমতল জমিতে বিভিন্ন এলাকা হতে আগত মানুষের বসতি স্থাপনের কারণে এখানে প্রতিবছর শতশত নতুন বসতি গড়ে উঠছে। দুঃখের বিষয় হল, এসব বসতির বেশিরভাগই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠার ফলে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

লামা পৌরসভায় নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি : অপরিকল্পিত আবাসনে কমছে কৃষিজমি, Lama Land - Rafiq -17.09.2023 (1). https://coxview.com/lama-land-rafiq-17-09-2023-1/

সরেজমিনে লামা পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবাসন হচ্ছে। কিন্তু আবাসন স্থাপনের কোন নীতিমালা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ বাড়ি নির্মাণের পর আশপাশে কোন জায়গা খালি রাখছেন না মালিকরা। এর ফলে ভবনগুলোর ভেতর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকছে। একইভাবে পাশে গড়ে উঠা অন্য বাড়িটিও অন্ধকার থাকছে। শুধু তাই নয়, বাজার এলাকায় ভবনগুলো নির্মাণে প্রাকৃতিক পরিবেশের চরম ক্ষতি করা হচ্ছে। এলাকার পুকুর, ডোবা, ছড়ার মতো খাল, ড্রেন, গলির রাস্তা ভরাট করেও নানা স্থানে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এর ফলে কখনো অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানো মতো পানিও পাচ্ছে না। চলাচলের রাস্তা না রেখে আবাসনের কারণে ফায়ার সার্ভিস, এ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন প্রবেশের পথও থাকে না। ফলে অনেক সময় আগুন লাগলেও অপরিকল্পিত স্থাপনার জন্য ফায়ার সার্ভিস সেখানে পৌঁছাতে পারে না। আর পৌঁছালেও জলাশয় ভরাট থাকায় পাওয়া যায় না পানি।


ইতিমধ্যে লামা পৌরসভার মধুঝিরি বিল, বড়নুনারবিল, চেয়ারম্যান পাড়া বিল, নয়াপাড়া বিল, কলেজগেইট এলাকার কৃষিজমি ভরাট করে জনবসতি গড়ে উঠেছে। নতুন করে ছাগলখাইয়া বিল, সাবেক বিলছড়ি বিল, কলিঙ্গাবিল, লামামুখ, শিলেরতুয়া ও হরিণঝিরি বিলে দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। খন্ড খন্ড করে বসতির জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। যার ফলে জায়গার মালিকরা নিজেদের জায়গা ছোট ছোট ওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলছে। এতে করে দ্রুত কমে যাচ্ছে কৃষিজমি।


লামা পৌরসভার বড়নুনারবিল পাড়া পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিত আবাসনের কারণে কৃষি জমি দিনদিন কমছে। অত্র এলাকার বাসিন্দা মংবাই মার্মা, মোঃ সুমন বলেন, পাড়ার ঢোকার একমাত্র রাস্তাটি এত সরু হয়ে গেছে যে, একটি রিকশা বা টমটম ডুকতে কষ্ট হয়। কোন বিপদে ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারেনা। ইতিমধ্যে বড় নুনারবিল বড় ফসলের মাঠটি দখল করে জনবসতি গড়ে উঠেছে। ফলে ফসলি জমি দ্রুত কমছে। সম্প্রতি গত আগস্ট মাসে লামায় ভয়াবহ বন্যায় যখন মানুষ নিজ নিজ ঘরে আটকে যায়, তখন রাস্তা না থাকায় তাদের উদ্ধারে পাড়ায় নৌকা পর্যন্ত ডুকানো যায়নি। শুধু ঘর-বাড়ি নির্মাণ করলে কোন আপত্তি ছিলনা। সমস্যা হচ্ছে কেউ পৌরসভার আবাসন নিয়মনীতি মানেনা। নিজের জায়গার চারপাশে জায়গা ছেড়ে ঘর তৈরি করা, চলাচলের রাস্তা উম্মুক্ত রাখার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া জলাশয় ভরাট সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু
আসলে কিছুই মানা হয় না। এর ফলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।


লামা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, বাজারের একমাত্র পুকুরটি দুষণ আর দখলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুকুরটি এখন ব্যবহার করা যায়না। এমনকি বাজারে আগুন লাগলে পানি পাওয়া যায়না। বাজারের একমাত্র পুকুরটি খনন করা জরুরি।


লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, বিল্ডিং স্থাপন করতে হলে কিছু নিয়ম কানুন থাকে। যারা বিল্ডিং করার অনুমতি চান আমরা তাদেরকে সেসব নিয়ম মেনে করার জন্য অনুমতি দিই। কিন্তু অনেকেই নিয়ম কানুন মানতে চান না। আমাদের পরিদর্শনকালে এসব যদি ধরা পড়ে আমরা ব্যবস্থা নিই।


লামা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন অফিসার মোঃ সাফায়েত হোসেন বলেন, এখানে বড় বড় স্থাপনা, বসতবাড়ি কিংবা শপিং মল তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোথাও ফায়ার সেফটিগুলো মানার বালাই নেই। এককথায় বেশিরভাগই অপরিকল্পিত আবাসন। অপরিকল্পিত আবাসন নির্মাণ হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার সময় কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে হবে। তাই ভবনগুলো যেন পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয় সেদিকে নজরদারি বৃদ্ধি করা দরকার।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/06/Shok-1.jpg

অ্যাড: হাসান সিদ্দিকী’র মাতার মৃত্যুতে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির শোক প্রকাশ

  প্রেস বিজ্ঞপ্তি :কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হাসান সিদ্দিকী এর মাতা ছকিনা ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/