কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওতে জেঁকে বসছে শীত। বাড়ছে দুর্ভোগ। তার পাশাপাশি শীত নিবারণে নিম্ন আয়ের মানুষজন ফুটপাতে অল্প দামে শীত কাপড় কিনতে ভিড় করছে। কেউ খড়কুটো দিয়ে শীত নিবারণে ব্যস্তমুখর হয়ে পড়েছে। আবার অন্য কেউ অল্প দামে শীত কাপড় কিনে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এর পরেও কমছে না শীত। রাত যত গভীর হয় ততই ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ে। বাড়ীর চালে টুপুর টাপুর কুয়াশার শব্দ শীতের আগমনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তেমনি করে পর্যটন শহর কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার খ্যাত জেলা সদরের বহুল আলোচিত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ঈদগাঁও বাজারসহ বৃহত্তর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারেও চলতি শীত মৌসুমে তথা শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন বিপনী বিতাণের চেয়ে নানা ফুটপাতে গরম কাপড় বিকিকিনি বেশ জমে উঠছে। এতে করে গ্রামের সাধারণ লোকজন এ মৌসুমে অল্প দামে উত্সাহমুখর পরিবেশে গরম কাপড় কিনতে পেরে বড়ই খুশি হতে দেখা যাচ্ছে।
জানা যায়, বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ছয় ইউনিয়ন- ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, চৌফলদন্ডী, পোকখালী ও ঈদগাঁওয়ের গ্রামগঞ্জে গরম কাপড় বিক্রেতারা এখন ঈদগাঁও বাজারের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জেও শীত কাপড় বিকিকিনির ধুম পড়েছে। বেশ কয়েকজন গরম কাপড় ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা প্রতিবছরের ন্যায় এবছরের শীত মৌসুমেও এ ব্যবসাকে কাজে লাগাচ্ছে। দীর্ঘ বছর ধরে ঈদগাঁওতে ব্যবসা করে যাওয়া গরম কাপড় ব্যবসায়ী কুমিল্লার আল আমিনের মতে, চলতি শীত মৌসুমে গরম কাপড় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ইনশাআল্লাহ এ ব্যবসা জমিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে তার পাশাপাশি অপরাপর ব্যবসায়ীরাও চলতি মৌসুমে এ ব্যবসা হাতছাড়া করতে রাজি নয়। অপরদিকে সদরের ঈদগাঁওয়ের পাশাপাশি জেলাব্যাপী ধীরে ধীরে শীত জেঁকে বসছে। গ্রামাঞ্চলের কয়েক ক্রেতার মতে, বাজারে বিভিন্ন বিপনি বিতানে শীতকাপড়ের দাম চড়া হওয়ায় আমরা এখন ফুটপাতমুখী। সেখানে স্বল্পদামে শীতের কাপড় পাচ্ছি। আবার গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতি শীত মৌসুমে অর্ধাহারে অনাহারে থেকেও ছেলেমেয়েদের জন্য কিংবা নিজেদের জন্য শীতকাপড় কিনতে পারছে না অনেকে।
দেখা যায়, অনেকে সারাদিন রিক্সা চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে পরিবার-পরিজনের জন্য এক মুঠো খাবার জোগাড় করতে পারলেও এ প্রচন্ড শীতে শীত নিবারনের লক্ষ্যে নেই কোন গরম কাপড়। দুর্ভোগ আর দূর্গতির চিত্র চোখে পড়ছে গ্রামগঞ্জের অসহায় তথা নিম্ন আয়ের মানুষের দিকে। তাই এ মৌসুমে অসহায় – পীড়িত মানুষের পাশে বিত্তবানদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান সচেতন মহল।
উল্লেখ্য যে, ঈদগাঁও বাজারসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা তথা পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, কক্সবাজার সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শীত মৌসুমে অসহায় পথকলি ছিন্নমূল পীড়িত লোকজনের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করার আহবান ও জানিয়েছেন অনেকে। গ্রামগঞ্জের অনেকে চলতি শীত মৌসুম শুরুর পূর্বে বস্ত্রের অভাবে অভাবী মানুষগুলো অসহায় জীবন যাপন করছে। ছোট ছোট শিশু, বৃদ্ধদের অবর্ণনীয় কষ্ট শীতবস্ত্রের অভাবে খালি গায়ে বের হতে হয় অনেককে। যতই শীতের মাত্রা বাড়ছে, ততই আতংকে দিন যাপন করছে দরিদ্র, অসহায় মানুষেরা। কারণ যখন শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে তখন তাদের শীতের কষ্ট আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সকল বিত্তবান কিংবা নানা সংগঠনের উচিত শীতের শুরুতেই অসহায়-পীড়িত মানুষদের পাশে দাড়ানো, শীতবস্ত্র প্রদান করে সহায়তার হাত বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।
সেই প্রয়োজনের তাগিদে সামাজিক সংগঠনগুলো কাজ করলে অনেক শীতার্ত মানুষ শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাবে। কারণ একটি শীতবস্ত্র একজন অসহায় শীতার্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। তাই জেলা জুড়ে শীত মৌসুমের শুরুতে শীতার্ত লোকজনের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করার আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।
অন্যদিকে ঋতু পরিক্রমায় দেশের প্রকৃতিতে চলছে হেমন্তকাল। আর সে হেমন্ত আসতে না আসতেই শীতের আমেজ লক্ষ্যণীয়। শীতের কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যাওয়া দিগন্ত রেখা এবং ধু ধু সবুজ বিলে ঘাসে কিংবা ধানের পাতায় শিশিরই জানান দেয় শীতের আগমনী বার্তা। শীতের এই বার্তা ধীরে ধীরে বয়ে আসছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। রাতে ঘুমানোর সময় গ্রামাঞ্চলের অনেকেই গরম কাথা ব্যবহার করছে। তার পাশাপাশি সারা দিন কড়া রোদ থাকলেও সন্ধ্যার পর হালকা ঠান্ডা বাতাসে শান্ত হয়ে আসছে প্রকৃতি।
You must be logged in to post a comment.