“এমন দেশটি কোথাও খোঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি ”
পাহাড়ি সৌন্দয্যের অন্যতম দর্শণীয় স্থান বান্দরবানের নীলাচল। বর্ষায় পাহাড় সাজে রাজকন্যার মতো। লক্ষ্য করলে দেখা মিলে মেঘ পাহাড়ের খেলা। ইচ্ছে হলেই ছুঁয়ে দেখতে পারে পর্যটকরা। সবুজ বৃক্ষরাজি সঙ্গতায় শান্তির পরশ থাকে চারদিকে। প্রকৃতি সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে সৌন্দর্য বিকাশে। বর্ষায় রুপসী বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন এলাকা নীলাচলের সৌন্দর্য থাকে ভিন্ন। সাদা মেঘ ছুঁয়ে যায় বর্ষার নীলাচলে।
যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার ফাঁকে কিছুটা প্রশান্তি পেতে এ বর্ষাতেই ঘুরে আসুন বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট নীলাচলে। বর্ষার ছোঁয়ায় পাহাড়গুলো যেন ফিরে পায় নতুন প্রাণ। সবুজের আবরণে ঢাকা পড়ে চারিদিক। বর্ষায় নীলাচল ভ্রমনের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এ মৌসুমে পর্যটকদের ভীড় কিছুটা কম থাকে। হানিমুন, আনন্দ ভ্রমণ ও পরিবার নিয়ে ঝামেলাহীন পরিবেশে ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ স্থান হতে পারে নীলাচল। তাই সবুজে মোড়ানো প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্য এবং মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হলে এ বর্ষা ঋতুকেই বেছে নিন।
সম্প্রতি নীলাচলে নতুন আকর্ষণ হিসেবে যোগ হয়েছে ‘ঝুলন্ত নীলা’ ‘নীহারিকা’ এবং ‘ভ্যালেন্টাইন’ পয়েন্ট নামে বেশ কিছু স্পট। প্রত্যেকটি স্পট একেবারেই আলাদা। যেখান থেকে নীলাচলের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পাহাড়গুলোর ঢালুতে দেখতে পাবেন তংচংগ্যা, মার্মা, বম সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রাম। পাহাড়ি গ্রামগুলো দেখতে চাইলে পায়ে হেঁটে পাহাড়ের পাদদেশে চলে যেতে পারেন। সাবধান, বর্ষায় পাহাড়ি রাস্তা বেশ পিচ্ছিল ও বিপদজনক।
নীলাচল বান্দরবান জেলা শহরের নিকটবর্তী পর্যটন কেন্দ্র। এটি জেলা সদরের প্রবেশ মুখ টাইগার পাড়ার পাশাপাশি অবস্থিত। এখানে পর্যটন কেন্দ্র দুটি। নীলাচল জেলা প্রশাসন ও শুভ্রনীলা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সার্বিক তত্ত্ব্বধানে এ পর্যটন কেন্দ্র দুটি পরিচালিত হয় । এ পর্যটন কেন্দ্রের উচ্চতা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২হাজার ফুট। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এই পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত। পাহাড়ের উপর নির্মিত এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার দৃশ্য দেখতে খুবই মনোরম।
বান্দরবান শহর থেকে ভাড়ায় চালিত বেবি ট্যাক্সি, চান্দের গাড়ি, জিপ নিয়ে ১৫/২০ মিনিটে নীলাচল যাওয়া যায় খুব সহজেই। ভাড়া গুণতে হবে ৪শত-৮শত টাকা। নীলাচলে পাহাড়ের ঢালুতে রয়েছে ৩টি নীল রঙের দৃষ্টিনন্দন কটেজ ও জেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি রেস্টহাউজ। কটেজগুলো ভাড়ায় পাওয়া যায়, আর রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপন করতে হলে আগেই নিয়ে নিতে হবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি।
নীলাচলে রয়েছে স্কেপ নামের একটি আকর্ষণীয় রেস্টুরেন্ট। যেখানে সাধারণ পর্যটকদের জন্য সূর্যাস্থ পর্যন্ত অবস্থান করার অনুমতি রয়েছে। তবে রিসোর্টের অতিথিরা সর্বক্ষণ সেখানে থাকার সুযোগ পাবেন।
যোগাযোগঃ
ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন, সেন্টমার্টিন পরিবহন ও বিআরটিসির এসি ও নন এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া ৬শ থেকে ১হাজার ২শ টাকার মধ্যে। এছাড়া সড়ক, রেল কিংবা আকাশ পথে চট্টগ্রাম হয়ে সহজেই যাওয়া যায় বান্দরবান। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে পূরবী, পূর্বাণী পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে সকাল ৬ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ভাড়া ১১০-১৩০ টাকার মধ্যে।
বান্দরবান শহরের বাস ষ্টেশন থেকে জীপ, ল্যান্ড ক্রু জার, ল্যান্ড রোভার ভাড়া নিয়ে যেতে হবে অথবা বান্দরবান শহরের সাঙ্গু ব্রীজের কাছে টেক্সি ষ্টেশন থেকে টেক্সি ভাড়া নিয়ে নীলাচল ও শুভ্রনীলায় যেতে পারেন। জীপ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার ৬শত-৭শত টাকা, টেক্সি ৩শত টাকা নিয়ে থাকে।
লেখক: মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সভাপতি, লামা রিপোর্টাস ক্লাব, লামা, বান্দরবান।