সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ভ্রমণ ও পর্যটন / সৌন্দর্যের লীলাভূমি নাইক্ষ্যংছড়ি 

সৌন্দর্যের লীলাভূমি নাইক্ষ্যংছড়ি 

https://i0.wp.com/coxview.com/wp-content/uploads/2022/08/Travel-Naikhongchari-Upaban.jpg?resize=540%2C304&ssl=1
নাইক্ষ্যংছড়ি হ্রদের উপর রয়েছে একটি ঝুলন্ত সেঁতু।

মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম :
সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি পাহাড়ঘেরা ঝর্ণারাজিতে মন ছুঁয়ে যায় হিমশীতলতায়। চারপাশে পাহাড় মাঝখানে ঝিরি বেয়ে গেলেই এসব ঝর্ণার সন্ধান পাওয়া যায়। তিনটি বড় ঝর্ণার আশপাশে আরো দু’টি ছোট ঝর্ণা রয়েছে। এমন ঝর্ণা বা জলপ্রপাত কার না ভালো লাগে।

 

উল্লেখ্য নাঞা অর্থ দেবতা বা ভুত আর টং অর্থ হলো পাহাড়। মার্মাদের বিশ্বাস ছিল যে, ওই পাহাড়ে দেবতা বা ভুত থাকে। আর এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের নাম দিয়েছিল নাঞাস্চং। মার্মা ভাষায় স্চং শব্দের অর্থ হলো খাল। এই কারণে এই খালের নাম হয়েছিল নাঞাস্চং (দেবতার বা ভুতের খাল)। অনেকে মনে করেন যে, নাঞাটং বা নাঞাস্চং থেকে নাইক্ষ্যং শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল।

 

জানা যায়, পাহাড় এবং গভীর অরণ্যের এই দুর্গম অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল মার্মা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। এরা স্থানীয় একটি পাহাড়ের নাম দিয়েছিল নাঞাটং। তার নীচে পাড়া ঘেষে ছোট একটি খাল প্রবাহিত। যা আজও আছে। যাকে তারা নাম দিয়েছিল ‘‘দেবতার খাল’’ পাহাড়টিকে দেবতার পাহাড়। তাদের ভাষায় ‘‘নাঞা’’ অর্থ দেবতা বা ভূত টং অর্থ পাহাড় আর এক অর্থে নাঞা অর্থ দেবতা বা ভূত স্চং অর্থ খাল। নাঞাস্চং (দেবতার বা ভুতের খাল)। অনেকে মনে করেন যে, নাঞাটং বা নাঞাস্চং থেকে নাইক্ষ্যং শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল। এখানে ভিন্ন ভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় সহাবস্থানে বসবাস করে আসছে। বাঙালি, মারমা, চাক, মুরুং, তংঞ্চগ্যা, চাকমা, ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন স্ব স্ব ভাষায় কথা বলে।

 

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের সর্বশেষ জেলা হল পার্বত্য জেলা বান্দরবান। আর বান্দরবান জেলার অর্ন্তগত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তর-পূর্বে আলীকদম উপজেলা ও লামা উপজেলা; উত্তরে লামা উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা; পশ্চিমে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা, রামু উপজেলা ও উখিয়া উপজেলা এবং দক্ষিণ-পূর্বে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত। বান্দরবান জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১২৩ কিলোমিটার।

 

নাইক্ষ্যংছড়ি থানা ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয় এবং ১৯৮২ সালে উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রয়েছে ৫টি ইউনিয়ন। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, বাইশারী, ঘুমধুম, দোছড়ি ও সোনাইছড়ি।

 

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের পশ্চিমে মহাজনঘোনা এলাকা (লেকেরপাড়) পাহাড়ের চূড়ায় কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে হ্রদ গড়ে তোলা হয়। এ হ্রদটিকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে ‘উপবন পর্যটন কেন্দ্র’। এই হ্রদের উপর রয়েছে একটি ঝুলন্ত সেঁতু। এছাড়া দেশের একমাত্র বৃহৎ গয়াল প্রজনন কেন্দ্র এই উপজেলায় অবস্থিত। সরকারী এক তথ্য অনুযায়ী এখানে রয়েছে- নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন কেন্দ্র (উপবন লেক), জারুলিয়াছড়ি লেক, বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঘুমধুম কুমির প্রজনন কেন্দ্র, চাকঢালা ঝর্ণা, জারুলিয়াছড়ি ঝর্ণা, রেজু ঝর্ণা, ক্রোক্ষ্যং ভিউ পয়েন্ট, দোছড়ি ছাগলখাইয়া ভিউ পয়েন্ট, সোনাইছড়ি ভিউ পয়েন্ট।

 

উঁচুনিচু পথ, পাহাড়ের শরীর জুড়ে ঘন সবুজের সমারোহ যেন এঁকেবেঁকে চলে গেছে গভীর থেকে আরো গভীরে। প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে এখানে মেলে ধরেছে তার সৌন্দর্যের মায়াজাল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নাইক্ষ্যংছড়ি। এখানেই রয়েছে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু। হৃদ আর ব্রীজের মোহনীয় রূপ চারপাশের পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপ বিচারে এটি রাংগামাটি, বান্দরবানের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কিন্তু সরকারী উদ্যোগ ও প্রচার প্রচারণার অভাবে সেই তিমিরেই পড়ে আছে নাইক্ষ্যংছড়ি শৈলশোভা পর্যটন কেন্দ্র। মানুষ এখনো ভালো করে জানেনা এই দর্শনীয় স্থানটির কথা।

 

অনাবিল সৌন্দর্যের অপর নাম নাইক্ষ্যংছড়ি শৈলশোভা হ্রদ। উঁচু–নীচু, ছোট–বড় পাহাড় আর চারপাশেরই সবুজের সমারোহ। এখানকার প্রকৃতির অসাধারণ রূপ বার বার কাছে টানে মানুষকে।

 

‘শৈলশোভা হ্রদ’-এর অবস্থান নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন কেন্দ্রের সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গের ঢালে। হ্রদটি কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে ১৯৯৪ সালে। একেবারেই মিয়ানমার সীমান্তের পিঠ ঘেঁষে শুয়ে আছে হ্রদটি। হ্রদের দুই ধারে দৃষ্টিনন্দন হরেক প্রজাতির লতগুল্ম আর সারি সারি উঁচু বড়সড় গাছগাছালি। পাখির কলকাকলি আর হ্রদের নীলাভ জলে দাপাদাপি নজরে পড়বে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা রুই-কাতল, শোল-বোয়ালের।

 

পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নাইক্ষ্যংছড়ির উপবন লেক। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে প্রায় ছয় একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে ১৯৯১ সালে উপবন পর্যটন লেক পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলে প্রশাসন। স্পটের সৌন্দর্যবর্ধনে গড়ে তোলা হয় ঝুলন্ত সেতু, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি, গোলঘর, টয়লেটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। লেকের শান্ত জলের ওপর দৃষ্টি নন্দন ঝুলন্ত সেতু মূলত আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। লেকের জলে ঝুলন্ত সেতু। দুই পাশে বন, আর শান্ত নয়নাভিরাম পরিবেশ। ঝুলন্ত সেতুতে চড়ে ও ওয়াচ টাওয়ারে উঠে বনের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করছেন এই পর্যটনকেন্দ্রে।

 

ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্পট। বিভিন্ন সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেক।

 

কীভাবে যাবেন :
ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে রামু বাইপাসে নেমে অথবা রেলপথে রেলস্টেশন থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে নাইক্ষ্যংছড়ি যাওয়া যায়। এছাড়া সড়কপথে বা আকাশপথে কক্সবাজার গিয়ে সেখান থেকেও রামু হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি যাওয়া যায়। আবার বান্দরবান সদর থেকেও লামা ও আলীকদম হয়ে মাইক্রোবাস যোগে নাইক্ষ্যংছড়ি যেতে পারেন।

 

এছাড়াও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা স্টেশন থেকে পূর্বদিকে মরিচ্যা-পাতাবাড়ি হয়ে বরইতলী আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে সিএনজি/টমটম (ব্যাটারিচালিত গাড়ি) বরইতলী নামক স্থান দিনে বাইক, নোহা ও মাঝারি বাস নিয়েও যাওয়া যাবে। চারিদিকে দৃষ্টি দিলে দেখা সবুজের সমারোহ। সেই সাথে পাখির কিচির-মিচির বনের নিস্তব্ধতাকে জাগিয়ে রাখে সারাক্ষণ। একবার বেড়াতে গেলে বারবার যেতে ইচ্ছে করে ভ্রমণ পিপাসুদের।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Sagar-23-4-2024.jpeg

ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কমিটি ঘোষণা : রিয়াজ সহ-সভাপতি মনোনীত

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :বাংলাদেশ ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/