সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / আইন থাকলেও কার্যকর নেই : উখিয়ায় থেমে নেই পাহাড় কাটা

আইন থাকলেও কার্যকর নেই : উখিয়ায় থেমে নেই পাহাড় কাটা

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া :

কক্সবাজারের উখিয়ার সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনাঞ্চলে প্রকৃতির পেরাক খ্যাত পাহাড় কাটার রেওয়াজ দিন দিন বাড়ছে। আইন থাকলেও কার্যকর না থাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত মাটি পাচারকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে জীববৈচিত্র্য সহ বন্য পশু প্রাণী সম্পদ। পরিবেশবাদী সচেতন মহলের দাবী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা রুজু করা না হলে মাটি পাচার বাণিজ্য রোধ করা যাবে না।

সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় পাহাড় কাটা, অবৈধ বালি উত্তোলন ও বনভূমি জবরদখল প্রতিরোধে, বনকর্মীদের আরো স্বচ্ছতার সহিত দায়িত্বপালনের আহবান জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, পাহাড় কাটা প্রতিরোধ করতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে বনকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহযোগীতা করতে হবে। সমন্বয় সভায় উপজেলা সদর বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বনবিভাগের লোকবল স্বল্পতাকে পুঁজি করে ও মান্দাতার আমলের বন আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে একদল সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী মাটি পাচারকারী চক্র তাদের নিজস্ব ডাম্পার গাড়ী ব্যবহার করে পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছে।

বনকর্মীরা পাহাড় কর্তনে বাধা দিতে গেলে তাদের উপর পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়ে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পাহাড় কাটা, বনভূমি দখলসহ বন সম্পদ ধ্বংসের অভিযোগে উখিয়ার ৮টি বনবিটে গত ১ বছরে প্রায় শতাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক লোকজনকে। সদর বনবিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্মিত কুতুপালং বস্তির প্রায় ৩ শতাধিক ঝুঁপড়ি উচ্ছেদ করতে গেলে স্থানীয় অবৈধ সুবিধাভোগী কতিপয় দুর্বৃত্তদের লেলিয়ে দেয়া রোহিঙ্গারা বনকর্মীদের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থলে ৫ জন বনকর্মী আহত হয়েছে।

সরেজমিন জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি এলাকা ঘুরে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পরিবার পাহাড় কেটে বনভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করছে। পাশাপাশি মাটি পাচার করে অবৈধ টাকা আয় করছে দীর্ঘদিন থেকে। উখিয়া থানা পুলিশ বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে মাটি পাচারে ব্যবহৃত গাড়ী আটক করলেও অজ্ঞাত কারণ বশত: তা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার কারণে পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে।

এব্যাপারে ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম হোসেন জানান, সোনাইছড়ি এলাকায় যে পাহাড়টি কর্তন করা হচ্ছে সেটি তাদের নিজস্ব জোত জমি দাবী করায় তাকে কাগজপত্র উপস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি উখিয়া-টেকনাফ সড়ক সংলগ্ন বালুখালী টিভি রিলে কেন্দ্রের বিপরীতে পাহাড় কেটে মাটি পাচার করা হচ্ছে বেশ ক’দিন ধরে।

এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বালুখালী বনবিট কর্মকর্তা মোবারক আলী জানান, তিনি বিষয়টি জানতেন না। ঘটনাস্থল পরির্দশন করে নিষেধ করে দেওয়ার পর থেকে মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে। দোছরী বনবিট কর্মকর্তা গজ নবী জানান, তার এলাকায় পাহাড় কাটার ছবি সহ স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়েছে।

ইনানী প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান বাস্তবায়নে কর্মরত এনজিও সংস্থা শেড পরিচালিত ইনানী বন রক্ষা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, নির্বিচারে পাহাড় কর্তন, বন সম্পদ ধ্বংস ও বনভূমি দখলের ফলে অভয়ারণ্য লোকালয়ে পরিণত হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য তাদের আবাসস্থল হারিয়ে ফেলছে। বন পশু প্রাণী অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। তিনি অবিলম্বে পাহাড় কর্তনে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা রুজু করার দাবী জানিয়েছেন।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর কালিরছড়ায় অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে প্রার্থী হলেন নুরুল আমিন

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অসহায় ও হত দরিদ্র মানুষের মুখে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/