সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / অপরাধ ও আইন / রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন করে দিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা : ২৫ দিনে আটক ১৫০ জন দালাল

রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন করে দিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা : ২৫ দিনে আটক ১৫০ জন দালাল

গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :

বিগত কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চলছে বর্বরতা, জুলুম, নির্যাতন ও গণহারে মানুষ হত্যা।

সেই সূত্র ধরে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। আর পালিয়ে আসা অসহায় নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি সঠিক স্থান নির্ধারণ করে, পরিবার নিয়ে সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করার জন্য ক্যাম্প তৈরী করা হয়।

অথচ এই অসহায় রোহিঙ্গাদের জিম্মী করে নিজের ফসলি জায়গায় অথবা সরকারী বনভূমি দখল করে বসতি স্থাপন করার জন্য সহযোগীতায় লিপ্ত রয়েছে।

তার পাশাপাশি রোহিঙ্গা যুবক যুবতীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে, কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা যুবক যুবতী মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা মরণ নেশা ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত। কারণ; রোহিঙ্গারা টাকার লোভে পড়ে যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারে। তাদেরকে ব্যবহার করে টেকনাফ উপজেলার অসাধু ব্যক্তিরা রাতারাতি বনে যাচ্ছে কোটিপতি।

এদিকে রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৫ আগস্ট থেকে বর্মী সেনাদের লাগাতার অত্যাচারে মাত্র ২৬ দিনের ব্যবধানে টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকার মানবিক সহায়তা দিতে অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে কারণ এরা নির্যাতিত মুসলিম জাতি।

মিয়ানমার সরকারের বর্বরতার চিত্রগুলো যখন সারা বিশ্ববাসীর নজরে পড়ে। আর বিশ্বনেতারা কড়া কড়া প্রতিবাদ করে জ্বালাময় বক্তব্য দিয়ে আসলেও এই অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে না কেউ। বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণের সহযোগীতা আসছে কিন্তু তাদেরকে বসতি স্থাপন করে দেওয়ার জন্য বুকে টেনে নিচ্ছে না কেউ।

অপর দিকে স্থানীয় অসাধু ব্যক্তি ও পুরাতন রোহিঙ্গারা মিলে বিভিন্ন কৌশলে অসহায় রোহিঙ্গাদের জিম্মী করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। টেকনাফ উপজেলা ঘুরে এই সমস্ত গোপন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

তথ্য সুত্রে আরো জানা যায়, স্থানীয় রোহিঙ্গা প্রীতি দালাল চক্রের রোহিঙ্গা মিলে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিষ পত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের থাকা খাওয়ার জন্য সরকার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও এই অসাধু অর্থ লোভী দালাল চক্রের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে নিজ নিজ এলাকায় বসতি স্থাপন করে দিচ্ছে এবং সেই সমস্ত ঝুঁপড়ি ঘর গুলো তৈরী করে একটি রুম থেকে প্রতিমাসে ৫ শত থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করছে।

টেকনাফ উপজেলা হ্নীলা ইউনিয়ন, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ঘুরে এই সমস্ত গোপন তথ্যের আসল রহস্যের চিত্র চোঁখে পড়ে।

আবার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষং পাহাড়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন করার জন্য সরকার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারন করে দেয়, অথচ এই পাহাড়ে রয়েছে অসাধু দালাল চক্র। এই দালাল চক্রের সদস্যরা নতুন ঘর তৈরী জায়গা ভাড়াসহ বিভিন্ন কৌশলে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিষ গুলো।

নির্যাতিত অসহায় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে এই সমস্ত গোপন তথ্য। ২০ সেপ্টেম্বর নতুন আসা ভুক্তবোগী কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে জানা যায়, অসহায় রোহিঙ্গারা যখন তাদের নির্ধারিত বসতি স্থলে যায়, ঠিক তখনি ওৎ পেতে থাকা দালাল চক্রের সদস্যরা তাদেরকে জিম্মী করে বসতি স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি দমকি দিয়ে নগদ অর্থ আদায় করে নিচ্ছে।

তারা আরো বলেন বাংলাদেশে আগে আসা পুরাতন রোহিঙ্গারাই এই সমস্ত অপরাধে বেশীর ভাগ লিপ্ত রয়েছে এবং তাদেরকে সক্রিয় ভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছে স্থানীয় অসাধু দালাল চক্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা জানান, মাথা গোজার জন্য এক ঠুকরো জমিতে নিজে ঘর বেঁধে নিয়েছি কিন্তু জায়গা ভাড়ার কথা বলে জমিনের মালিকে প্রতিমাসে টাকা দিতে হচ্ছে। তার পাশাপাশি সরকারের দেওয়া নির্ধারিত পাহাড়ী জমিতে ঘর তৈরী করতে গেলে প্রথমে দালাল চক্রের হাতে তাদের নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করতে হয়। যাদের কাছে নগদ টাকা রয়েছে তারা টাকা পরিশোধ করে বসতি স্থাপন করতে পারছে। আর যাদের কাছে দেওয়ার মতো কোন টাকা নেই, তাদেরকে পরবর্তীতে টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে শাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

নাম না জানা এক রোহিঙ্গা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন রাখাইন সেনা ও মগদের অত্যাচারে দেশ ছাড়া হয়ে কোন রকমে মাথা গোজার ঠাঁই মিলেছে, যদি দালাল চক্রকে টাকা না দিই তাহলে এখানেও থাকতে পারবো না। এই সামান্য টাকার জন্য আমাদের কোন চিন্তা নেই

বাংলাদেশে বসতি স্থাপন করতে পেরেছি এটাই আমাদের কাছে বড় পাওয়া।

এব্যপারে টেকনাফ উপজেলার সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে না গেলে আর কয়েক দিন পর রোহিঙ্গাদের আগ্রাসনে নষ্ট হয়ে যাবে এই এলাকার যুব সমাজ, বাড়বে ইয়াবা পাচারসহ নানা প্রকার অপরাধ। আর হয়রানীর শিকার হবে স্থানীয় অসহায় মানুষ গুলো। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহার করবে রোহিঙ্গা যুবক যুবতীদেরকে।

লোকালয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মাঈন উদ্দিন খাঁন জানান, যে সমস্ত রোহিঙ্গা এখনো সরকারের দেওয়া নির্দিষ্ট স্থানে না গিয়ে তাদের ইচ্ছে মত এবং অসাধু ব্যক্তিদের আশ্রয় পশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে এখনো সময় যত্রতত্র ভাবে যেখানে সেখানে না থেকে সঠিক জায়গায় চলে যাওয়ার।

তিনি এব্যপারে আরো বলেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় নিয়ে এসে প্রশাসনের সদস্যদেকে খবর দেওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি। যদি সঠিক সময়ের মধ্যে লোকালয়ে থাকা রোহিঙ্গারা নির্দিষ্ট স্থানে না গিয়ে থেকে যায়, তাহলে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় পশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে বাধ্য হবে। তার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জিম্মী করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেওয়া এবং জড়িত থাকার অভিযোগে এই পর্যন্ত ১৫০ জন দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রধান করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Election-Sagar-22-4-2024.jpeg

ঈদগাঁও উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ জনের মনোনয়ন দাখিল

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : নির্বাচন কমিশন ঘোষিত দ্বিতীয় ধাপের তফশিল অনুযায়ী আগামী ২১ মে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/