হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
কক্সবাজারের উখিয়ায় এক অজ্ঞাত নামা লাশের সন্ধান মিলেছে। মঙ্গলবার সকালে বালুখালীর পশ্চিম শিয়াইল্যা পাড়ার গভীর জঙ্গল থেকে নিহতের পরিহিত কাপড় ও পকেটে থাকা কাগজপত্র পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করেছে। নিহত যুবক উপজেলার বালুখালী গ্রামের মৃত গুরা মিয়ার ছেলে আলমগীর ভুলু (৩৫) বলে পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত ভূলূর হত্যাকান্ড নিয়ে এলাকাবাসীর কাজ থেকে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ২ জানুয়ারী উখিয়া থানার পুলিশ খবর পেয়ে এ উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালীস্থ শিয়াইল্যাপাড়া নামক পাহাড় থেকে বিকৃত অবস্থায় অজ্ঞাতনামা একটি গলিত লাশ উদ্ধার করে। লাশের শরীর ও মুখ মন্ডল বিকৃত থাকায় লাশটির পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ ও স্থানীয় জনতা।
গ্রামবাসী জানান, গত দেড় মাস পূর্বে বালূখালী পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত গুরা মিয়ার পুত্র আলমগীর ভূলু নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় কাঠুরিয়া বনে কাঠ সংগ্রহ করতে গেলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় কাপড়-ছোপড় দেখতে পেয়ে এলাকায় খবর দেয়।
খবর পেয়ে নিহতের পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় যে, উদ্ধার হওয়া লুঙ্গি, শার্ট, নিহত ব্যক্তির পার্সপোট সাইজের ছবি ও তার বড় পুত্র হাসনাতের ছবি এবং মূল্যবান কাগজপত্র সহ মোবাইল নাম্বার, নিখোঁজ হওয়া ভূলুর বলে প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হয়। নিখোঁজ ছেলের পরিহিত কাপড় দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মা, বোন ও তার পরিবার।
উখিয়া থানার এসআই জায়েদ নুরের নেতৃত্বে গত ২ জানুয়ারী একদল পুলিশ বালুখালীর শিয়াইল্যাপাড়ার ওই পাহাড় থেকে অজ্ঞাতনামা বিকৃত লাশটি উদ্ধার করেন। এসময় পুলিশ লাশটির বিস্তারিত পরিচয় সাংবাদিকদের জানাতে পারেনি। গত মঙ্গলবার ১৭দিন পর ঘটনাস্থলে কাঠুরিয়ারা কাপড়-চোপড় ও লুঙ্গি, শার্ট ও অন্যান্য আলামত দেখতে পেয়ে লাশটি নিখোঁজ আলমগীর ভুলু বলে নিশ্চিত হয় গ্রামবাসী। এছাড়া ভুলুর পরিবার এসব আলামত দেখে তারাও নিশ্চিত হয় এগুলো তাদের নিখোঁজ ছেলে ভুলুর। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, ঘটনাস্থল থেকে লাশের পরিহিত আলামত উদ্ধার ও সনাক্ত করে পুলিশ দ্রুত তদন্ত পূর্বক ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করে আইনগত ব্যবস্থা নিবে।
অজ্ঞাতনামা উদ্ধার হওয়া লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে গত মঙ্গলবার বিকালে শতশত নারী-পুরুষ নিহত ভূলুর বাড়ীতে ভীড় জমায়। নিহত ভুলুর ১০ বছরের হাসান ও ৭ বছরের শহিদুল নামক তার ২ ছেলে রয়েছে। তার স্ত্রীর নাম রোজিনা। ভূলু হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে এলাকার লোকজন জানান, আলমগীর ভূলু দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা চালান পাচারে জড়িত ছিল। ইয়াবা সংক্রান্ত ঘটনায় টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে অন্যব্যবসায়ীরা তাকে পরিকল্পিতভাবে গভীর অরণ্যে নিয়ে হত্যা করে।
নিহতের মা নুর নাহার বেগম জানান, উদ্ধার হওয়া কাপড়-চোপড় ও কাগজপত্রের আলামত দেখতে পেয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে অজ্ঞাতনামা লাশটি ছিল আমার ছেলে ভূলু। স্থানীয় আকবর আহমদসহ তার অপরাপর আত্মীয়রা এ ইয়াবা ব্যাবসার নিয়ন্ত্রণ করে বলে এলাকাবাসী জানালে, আকবরের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, র্যাবের ক্রস ফায়ারে হ্নীলার নুর মোহাম্মদ নিহত হওয়ার পর তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বকতিয়ার ইয়াবার গড়ফাদারের নিয়ন্ত্রণে আসে। অল্পদিনে কোটিপতি বনে যাওয়া এ বকতিয়ার তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন বলে তিনি দাবী করেন। বর্তমানে পালংখালী ইউনিয়নসহ উখিয়া-টেকনাফের একাধিক শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার রয়েছে বলে এলাকার সচেতন মহল জােিয়ছেন।
বালুখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে শিয়াইল্যাপাড়ার আস্তানায় শীর্ষ ইয়াবা গড ফাদারদের একটি সিন্ডিকেট সক্রিয়। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিনিয়ত অপহরণ, গুম ও খুনের সাথে জড়িত। গত কয়েক মাস ধরে ইয়াবা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে শিয়াইল্যাপাড়া নামক পাহাড়ে অনেক যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করেছে। তার দাবী নিহত ভুলু ওইসব ইয়াবা গডফাদারদের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। মূলত ইয়াবা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই নির্মম হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হয়েছে বলে আমার ধারনা।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বালুখালী শিয়াইল্যাপাড়া থেকে অজ্ঞাতনামা লাশটি আলমগীর ভুলু ছাড়া আর কেউ নয়।
You must be logged in to post a comment.