সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / চলছে গণহত্যা : উখিয়া সীমান্তে ৫ রোহিঙ্গার লাশ

চলছে গণহত্যা : উখিয়া সীমান্তে ৫ রোহিঙ্গার লাশ

ফাইল ফটো

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে এবং নারীদের ধর্ষণ করছে। প্রতিদিন শত শত বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। হাফেজ, আলেম ওলামাসহ রোহিঙ্গাদের পৈশাষিক নির্যাতনের পর জবাই করে হত্যা করা হয়। তাদের লাশ জড়ো করে পুড়িয়ে দিচ্ছে।

বুধবার দুপুরে নাফ নদী পেরিয়ে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের আত্মীয় স্বজনেরা কাদে করে ৫ জন রোহিঙ্গার গুলিবিদ্ধ লাশ নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মনজুরুল হাসান খান বলেন, ৩ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলার লাশ আনজুমানপাড়া দিয়ে মৃত ব্যাক্তিদের আত্মীয় স্বজনেরা লাশগুলো এপারে নিয়ে এসেছেন। তবে তিনি তাদের নাম ঠিকানা জানাতে পারেনি। একই কথা বলেছেন, পালংখালীর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমদ।

এদিকে হাকিমপাড়া ও তাজুনিমার খোলার ৩০ হাজার রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন ও জয়নাল নির্মাণ করে দিচ্ছে বলে পালংখালীর বাসিন্দা কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ জানিয়েছেন। সে রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় নিয়ে জড়ো করে রাখার কথাও জানিয়েছেন। তবে অভিযুক্তরা এ ঘটনার কথা অস্বীকার করেন। দিয়েমিয়ানমার বুচিদং টংবাজার এলাকা থেকে ১শ কিলোমিটার পায়ে হেটে বুধবার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের পাশে রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন ৩০ জনের ৪ টি পরিবার। এরা হলেন, মোহাম্মদ নবী হোসেন (৫৫), মোহাম্মদ বেলাল (৪৭) তাহেরা বেগম (৩২),মোহাম্মদ কালু (৩০), মোহাম্মদ সালাম (২৮) নুর নাহার (২২), ইয়াছমিন আরা (২৬) মায়মুনা (৩) সেতারাসহ ৩০ জনের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারাই এসব তথ্য জানিয়েছেন।

৩ নং ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারের সেনাবহিনী গ্রামগুলো ঘিরে ফেলে এবং এরপর তারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। থেমে থেমে গুলি ও মাইন বিস্ফোরণের শব্দে কম্পন সৃষ্টি হয় সীমান্ত এলাকায়। সীমান্ত এলাকার স্কুল গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছেন। সীমান্ত এলাকার মানুষের স্বপ্ন শেষ, এখন একটাই চিন্তা কিভাবে নীপিড়িত রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্য করা যায়। আমার ইউনিয়নে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০ জন করে জঙ্গী সন্ত্রাস বিরোধি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মানবিক সেবা প্রদান করবে। গত ১১ দিনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা মুসলিমবিদ্বেষী বৌদ্ধদের হাতে লাগাতার হত্যা-নির্যাতন, ধর্ষণ ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে প্রায় এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এরই মধ্যে অন্তত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দাবি।

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু সিদ্দিক জানান, গত ১১ দিনে প্রায় ৯৫ হাজার রোহিঙ্গা এই ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ক্যাম্পে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য জায়গা হচ্ছে না। অনেকেই কক্সবাজার-টেকনাফ আরাকান মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তির মাঝি আবুল কালাম জানান, গত ১১ দিনে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বালুখালী ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ক্যাম্পের আশপাশে পাহাড়ে আরও অনেকে জড়ো হয়েছে। এসব লোকজন খোলা আকাশের নিচে চরম কষ্টে আছে। স্থানীয় লোকজন খাবার দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করছেন। তবে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য এখনও কোনো সাহায্য সংস্থা এগিয়ে আসেনি। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মন্জুরুল হাসান খান জানান, রোববার রাতে ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী সীমান্ত পয়েন্টে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুলিবিদ্ধ দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা বিজিবিকে খবর দেয়। পরে বিজিবি গিয়ে তা উদ্ধার করে। মঙ্গলবার তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই রোহিঙ্গা নারী ও শিশু আহত হয়েছে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, উখিয়ার রহমতেরবিল, থাইংখালী, রেজু আমতলী, তুমব্রু, জলপাইতলী, বাইশফাঁড়ি, ঘুমধুম, হোয়াইক্যং, উংচিপ্রাং, মৌলভীপাড়া, কান্জরপাড়া, নাইটংপাড়াসহ অন্তত ২২টি পয়েন্ট দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে। বনবিভাগের জায়গায় পাহাড়ে আবাসস্থল তৈরি করছে এসব রোহিঙ্গা। অনেকে আবার রাস্তার ধারে, বিদ্যালয়ের বারান্দায়, গ্রামের মসজিদের পাশের মক্তবে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী-শিশু। হিন্দু পরিবারের ৪৯৫ জন পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে উখিয়ায় কুতুপালংয়ের একটি মুরগির খামারে। আশ্রয় নেওয়া হিন্দু পরিবারের সদস্য স্বপন শীল জানান, তার বাড়ি রাখাইনের বলিবাজার গ্রামে। তাদের ১০টি বাড়ি-ঘরে আগুনে জ্বালিয়ে দেয় রাখাইন চেহারার লোকজন। ভয়ে তারা পালিয়ে এসেছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Election-Sagar-22-4-2024.jpeg

ঈদগাঁও উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ জনের মনোনয়ন দাখিল

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : নির্বাচন কমিশন ঘোষিত দ্বিতীয় ধাপের তফশিল অনুযায়ী আগামী ২১ মে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/