সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / নাগরিকত্ব-নিরাপত্তা ও বসতভিটে ফিরে পেতে চায় রোহিঙ্গারা

নাগরিকত্ব-নিরাপত্তা ও বসতভিটে ফিরে পেতে চায় রোহিঙ্গারা

সংগৃহীত ফটো

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
আমরা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও বসতভিটে ফিরে পেলে স্বেচ্ছায় ফিরে যাবো মিয়ানমারে।মিয়ানমার সরকার বরাবরই এই তিনটি বিষয়ের কোনোটাই মানছে না। এসব বিষয়ে বারবার অনীহা প্রকাশ করে আসছে। এমনকি এই তিন মূল বিষয়ের বিপরীতে দেশটি এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে সেখানে আরো বেশি নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে রোহিঙ্গারা। ফলে মিয়ানমারের নতুন নতুন কৌশলে অনিশ্চিয়তায় পড়ল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। কারণ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এসব শর্ত পূরণ না হলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে ইচ্ছুক নন বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এসব শর্ত পূরণ ব্যতিরেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে নয় বলে মিয়ানমারকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব নেতাদের সাথে বহুবার উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও রোহিঙ্গা গবেষক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে মিয়ানমার।মিয়ানমার ভালো করেই জানে নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও নিজ বসতভিটে ফিরে না পেলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে না। বাংলাদেশও রাজি হবে না। বিশেষ করে জাতিসংঘ অনেক আগেই এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। মিয়ানমার প্রতিবারই ফিরিয়ে নেওয়ার চাপ বাড়লে নতুন করে কৌশল নেয়। এতে মিয়ানমারের লাভও হয়েছে। কারণ এসব চুক্তি ও নতুন নতুন প্রস্তাবের ফলে একদিকে যেমন সময়ক্ষেপণ করতে পেরেছে; তেমনি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি অন্যত্র ফেরাতেও সক্ষম হয়েছে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের চাওয়া শরণার্থী প্রত্যাবাসন লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির মতে, গত বছরের আগস্ট থেকে নতুন করে আসা ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত আছে। মিয়ানমারও মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে ফিরিয়ে নেওয়া তো দুরের কথা; উল্টো দেশটির নানা কূটকৌশলের কারণে পরিস্থিতি দিন দিন আরো জটিল হচ্ছে। মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের দেওয়া ১০ হাজার রোহিঙ্গার দ্বিতীয় তালিকা নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারকে দেওয়া ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার প্রথম তালিকা থেকে সাত দফা যাচাই-বাছাই করে মাত্র এক হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে দেশটি। এ রোহিঙ্গাদের নিজ বাসস্থানে না রেখে আলাদা ক্যাম্পে রাখার ও নাগরিকত্বের পরিবর্তে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড দেবে দেশটি।ফলে সংগত কারণেই বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এমনকি সর্বশেষ গত ১৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো সুখবর দিতে পারেনি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, রোহিঙ্গারা ততদিন স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে না, যতদিন না ফিরিয়ে নেওয়ার পর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এর জন্য দরকার ওদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া এবং নিজ বসতভিটেতে রাখা। এগুলো না হলে ফিরিয়ে নিয়েও লাভ নেই। কারণ পরে নাগরিক নয় বলে নতুন নির্যাতন শুরু হলে পুনরায় ওরা ফিরে আসবে। এ জন্য বাংলাদেশ প্রথম থেকেই নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি জোর দিয়ে আসছে। জাতিসংঘও বলছে অনুকুল পরিবেশ ব্যতিরেকে রোহিঙ্গারা যেতে চাইবে না। তাদের ফেরার জন্য মিয়ানমারে যাতে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সে বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো।

পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক এর সভাপতি সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। লোকজনের এমনভাবে ফেরার সুযোগ থাকা উচিত, যাতে তাদের অধিকারকে সম্মান জানানো হয় এবং একই সঙ্গে তারা নিজেদের বাড়িঘরে গিয়ে ওঠার সুযোগ পায়। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার মতো অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বড় উদ্যোগ হতে পারে সেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা। যে কারণে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে সেগুলোর সুরাহা হতে হবে। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সেখানে এমন পরিবেশ এবং জীবিকার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, যা আগে থেকেই তাদের ছিল। তিনি এমনও বলেন, নিজ বসতভিটেতে না রেখে আলাদা ক্যাম্পে রাখতে চাইলে রোহিঙ্গারা যেতে চাইবে না। কারণ সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। একইভাবে বিশ্ব নেতারা উখিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গেলে তাদের কাছে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব এবং বসতভিটে ফিরে পেলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। তারা এও জানান, আশ্রয় পেলেও বাংলাদেশে তারা থেকে যেতে চান না। নাগরিক মর্যাদা পেলে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান।

হুমায়ুন কবির জুশান,
উখিয়া কক্সবাজার।
০১৮১৯৫১৬০২০।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Sagar-23-4-2024.jpeg

ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কমিটি ঘোষণা : রিয়াজ সহ-সভাপতি মনোনীত

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :বাংলাদেশ ফরেস্ট রেঞ্জার’স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/