সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / অপরাধ ও আইন / ফিরে দেখা ২০১৬ সীমান্ত এলাকা টেকনাফ –

ফিরে দেখা ২০১৬ সীমান্ত এলাকা টেকনাফ –

মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত : এক বছরে ২৩৮ কোটি ১০ লক্ষ টাকার ইয়াবা উদ্ধার

গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :

কক্সবাজার জেলার সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চলছে অব্যাহত ভাবে। এই মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় উঠেছিল বিদায়ী ২০১৬ সালে। বিদায়ী এক বছরের ব্যবধানে টেকনাফ ২ বিজিবি সদস্যদের হাতে আটক হয়েছে রেকর্ড পরিমান লক্ষ লক্ষ ইয়াবা ও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। কারণ এই বছরের শেষের দিকে পাশ্ববর্তীদেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মাঝে সাম্প্রাদায়ীক হামলা, লাগাতার সহিংসতায় শত শত বাড়ি-ঘরে আগুন, গণহারে মানুষ হত্যা, নারী-শিশুদের উপর অমানবিক নির্যাতন, এই নির্যাতন ও হত্যা থেকে নিজের প্রাণ বাচাঁতে সীমান্ত এলাকা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে শত শত রোহিঙ্গা। এই সমস্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে টেকনাফ উপজেলা সীমান্ত এলাকা ছিল টক অফ দা টাউন।

টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত জুড়ে ছিল টেকনাফ ২ বিজিবি সদস্যদের কড়া নজর দারী ও কড়া নিরাপত্তা। এত কিছুর মধ্যেও বিদায় নেওয়া ২০১৬ সালে এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত পাচার হয়েছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ও বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য। অনুপ্রবেশ করেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

বিজিবি সুত্রে জানা যায়, বিদায় নেওয়া ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ বিজিবি সদস্যরা টেকনাফ উপজেলার সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে দিন রাত পরিশ্রম করে, বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধার করেছে ২৩৪ কোটি, ৬০ লক্ষ, ৮১ হাজার ৬শত টাকা মূল্যমানের ৭৮ লক্ষ ২০ হাজার ২৭২ পিস মরণ নেশা ইয়াবা। এর মধ্যে ৬৯ লক্ষ ১৯ হাজার ৪৩৬ ইয়াবা হচ্ছে মালিকবিহীন। কারণ এই সমস্ত ইয়াবার সাথে কোন পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়নি বিজিবি।

অপরদিকে ৯ লক্ষ ৮৪৬ পিস ইয়াবাসহ বেশ কয়েকজন পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয় বিজিবি। তার পাশাপাশি ২০১৬ সালের বিদায়ী বছরের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২ কোটি ৬৭ লক্ষ ২৫ হাজার ৬শত টাকার বিদেশী মদসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদকসহ আটক করেছে বেশ কয়েকজন চোরাকারবারীর সদস্যদেরকে।

বিজিবি কাছ থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, বিদায়ী ২০১৬ সালে বিজিবি সদস্যরা দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে এই সীমান্ত এলাকা টেকনাফ থেকে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন অন্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উক্ত সময়ের ব্যবধানে এই এলাকা থেকে দেশী-বিদেশী পিস্তলসহ সর্ব মোট ৭টি অত্যাধুনিক অন্ত্র, ৯৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।

অনুসন্ধানে বিজিবি কাছ থেকে আরো জানা যায়, ২০১৬ সালের বিদায়ী এক বছরের ব্যবধানে মরণ নেশ ইয়াবা ও বিভিন্ন প্রকার মাদক এবং অবৈধ অস্ত্রের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে আটক হয়েছে ৩৯৬ জন অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী ও ইয়াবা পাচারকারী। এই সমস্ত ঘটনায় গত এক বছরে টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে ৮৭৬টি। উক্ত মামলা গুলোতে পলাতক আসামী হয়েছে ৭৬ জন অপরাধি।

এ ব্যাপারে টেকনাফের সচেতন মহল ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা অভিমত প্রকাশ করে বলেন, বিদায়ী ২০১৬ সাল ছিল বিপুল পরিমান মাদক পাচার ও লাগাতার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার। সারা বাংলাদেশের মানুষের নজর ছিল এই সীমান্ত এলাকা টেকনাফে। কারন বিদায় নেওয়া ২০১৬ সালের শেষের দিকে পাশ্ববর্তীদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর গণহারে নির্যাতন, গণহারে মানুষ হত্যা, শিশু হত্যা, ধর্ষণ এই সমস্ত ঘটনায় টেকনাফ উপজেলা আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা ছিল কঠোর ছাপের মুখে। তার পাশাপাশি এই সীমান্ত এলাকাটি অরক্ষিত হওয়ার কারনে সীমান্ত প্রহরীর প্রশাসনের সদস্যদের কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও মিয়ানমার থেকে পাচার হয়েছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ও বিভিন্ন প্রকার মাদক। বৃদ্ধি পেয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা।

তারা আরো অভিমত প্রকাশ করে বলেন, এই মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হলে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহযোগীতাকারী দালালদেরকে আইনের আওয়াতায় নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে বিদায়ী ২০১৬ সালের মত ধারাবাহিকভাবে বছরের পর বছর ধরে মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকবে।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বিদায়ী ২০১৬ সালের বিজিবি সদস্যদের বিভিন্ন অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা টেকনাফ উপজেলায় মাদক পাচার প্রতিরোধ ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমাদের সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা নিয়ে পরিশ্রম করে যাচ্ছে রাত-দিন। সেই ধারাবাহিকতার সফলতা হিসাবে আমাদের সদস্যরা বিদায়ী বছরের উক্ত সময়ের ব্যবধানে উদ্ধার করেছে লক্ষ লক্ষ ইয়াবা ও কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের মাদক। তার পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতেও আমাদের সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তার সফলতা হিসাবে বিদায়ী ২০১৬ সালে শত শত রোহিঙ্গা বোঝাই প্রায় তিন শতাধিক নৌকাকে আটক করার পর স্ব-দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও রোহিঙ্গাদের সহযোগীতাকারী দালালদেরকে আটক করতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমরা মাদক পাচার প্রতিরোধ ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আরো সক্ষম হব।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষায় শক্তিশালী কমিশন গঠন করার প্রস্তাব -এমএএফ’র সেমিনারে

  প্রেস বিজ্ঞপ্তি : প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আন্দোলন সংগ্রাম ও রাজনৈতিক সম্প্রীতির চারণভূমি চট্টগ্রাম। নানা কারণে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/