সাম্প্রতিক....

বিষয়: খৎনা

অনলাইন ডেস্ক :

খৎনা পরিভাষায় পুরুষাংগের অগ্রভাগ আবৃতকারী চামড়া ও নারীর যৌনাংগের পর্দা (ভৌগলিক কারণে পর্দা বা হাইমেন মেমব্রেন অনেক মোটা হয়) কেটে দেয়াকে খৎনা বলে। এছাড়াও ‘খৎনা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল—পুরুষের লিঙ্গাগ্রচর্মচ্ছেদন। পুরুষের শিশ্নমুণ্ডি আবৃত করে রাখা অগ্রত্বক কেটে বাদ দেওয়া। কেউ কেউ একে ‘মুসলমানি’ বলে থাকেন। ইসলাম ধর্মে এটি ‘সুন্নত’-এর একটি অংশবিশেষ।

খৎনা আমাদের সমাজে মুসলমানি বলে পরিচিত। আমাদের মুসলিম সমাজে এ সংস্কৃতি শত শত বছর ধরে চলে আসছে। এটি একটি মহান সুন্নত। পুরুষদের সুন্নত করার বিষয়টি মুসলমানরা তাদের ইসলামী সংস্কৃতির অংশ হিসাবে পালন করে।

খৎনা একটি ধর্মীয় প্রথা শুধু নয়, আধুনিক বিজ্ঞানও পুরুষদের খৎনার পক্ষে। কারণ এটি স্বাস্থ্যসম্মত। অনেকেই আবার পুরুষদের খৎনা বলতে পুরুষাঙ্গের বাড়তি ত্বক কেটে ফেলাকে বোঝায়।

মুসলমানি বা খৎনা একজন পুরুষের জীবন ঘনিষ্ট স্বভাব কর্ম। পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে যে অতিরিক্ত চামড়া পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথাকে ঢেকে রাখে তা কেটে বাদ দেওয়াকেই বলা হয় খৎনা বা মুসলমানি বা সারকামসিশন।

যুগে যুগে বড় বড় নবী-রাসুলও এ সুন্নত পালন করেছেন। ইসলাম ধর্মে বহু পালনীয় বা সুন্নতের মধ্যে এটিও একটি। মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টীয় ধর্ম বিশ্বাস মতে, আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.)-কে খৎনা করার নির্দেশ দেন। ওই সময় তার বয়স ছিল ৯৯ বছর। এ বয়সে তিনি ঐশী নির্দেশে নিজের খৎনা দেন। প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে খৎনা দেওয়া হয় ১৩ বছর বয়সে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর উত্তর পুরুষ হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসারী ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যেও খৎনা প্রথার প্রচলন ছিল। হজরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন ইহুদি পরিবারে।

জাতিসংঘের হিসাবে, বিশ্বের প্রতিটি ২০জন মেয়ে শিশু বা নারীর মধ্যে একজনের খৎনা করা হয়ে থাকে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় এফিএম বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন। তাছাড়া জাতিসংঘ বিশ্ব জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) ৬ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

মেয়েদের খৎনার মাধ্যমে মূলত ক্লাইটোরিসের একটি অংশ কেটে ফেলে দেয়া হয়। নারীদের খৎনার মানে হলো ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি কেটে ফেলা। ভগাঙ্কুর এবং আশেপাশের চামড়ার পুরোটাই বা আংশিক কেটে ফেলা, ভগাঙ্কুর, যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের চামড়া অপসারণ করে ফেলা এবং যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের অংশের চামড়ার অংশটি কেটে ফেলে পুন:স্থাপন করা। পুরুষ ও নারীর খৎনার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পুরুষদের পুরুষাঙ্গের ত্বকের যে অংশটি কেটে ফেলা হয় তা তেমন স্পর্শকাতর নয়। মেয়েদের ভগাঙ্কুর শরীরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থান। এটি কেটে ফেললে রক্ত বন্ধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এদিকে এই প্রথার উৎপত্তি আফ্রিকা-মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলে ঠিক কোন সময় হয়েছে তার সঠিক ধারণা নেই। তবে আফ্রিকা ও আরব দেশগুলোর নারীরা যেসব কুসংস্কারের শিকার তার অন্যতম হলো মেয়েদের খৎনা প্রথা। আফ্রিকার বিস্তৃত অঞ্চল এবং কোনো কোনো আরব দেশে মেয়েদের যে খৎনা প্রথা চালু আছে। সৌদি আরবে সউদ পরিবার ক্ষমতায় আসার পর মেয়েদের খৎনা নিষিদ্ধ করে। তারপরও বিভিন্ন আরব গোত্রে এ প্রথা দীর্ঘদিন চালু ছিল। এমনকি বেদুইনদের কোনো কোনো গোত্রের মধ্যে এখনো মেয়েদের খৎনা চালু রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

আইসল্যান্ড হচ্ছে প্রথম ইউরোপীয় দেশ যেখানে খৎনা নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হলো। আইসল্যান্ডের পার্লামেন্টে খৎনা নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে একটি বিল আনা হয়েছে। এ নিয়ে ওই দেশের মুসলিম ও ইহুদী সম্প্রদায়ের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার চাচ্ছে, চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কারণে খৎনা করা নিষিদ্ধ করতে। এ নিয়ে পার্লামেন্টে পেশ করা খসড়া বিলে কোনও শিশুর খৎনা করানোর জন্য ছয় বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কিন্তু মুসলিম এবং ইহুদী সংগঠনগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এটি তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার শামিল। এর আগে ২০০৫ সালে আইসল্যান্ডে এফজিএম ( ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন) বা মেয়েদের যৌনাঙ্গ ছেদ নিষিদ্ধ করা হয়।

সম্প্রতি রাশিয়ায় একটি বিল আনা হয়েছে, যেখানে মহিলাদের মুসলমানিকে (FGM- Female Genital Mutilation) একটি আইনি অপরাধ হিসেবেই দেখা হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন, শাস্তি হতে পারে দশ বছরের কারাবাস। রাশিয়ার পার্লামেন্টে এই বিলের সপেক্ষে বলা হয়, সভ্য সমাজে নাপরী যৌনাঙ্গের অঙ্গহানি বা নারীদের মুসলমানির মত বর্বর প্রথার কোনো স্থান নেই।

ইহুদিরা নবজাতকের অষ্ঠম দিনে, পাশ্চাত্য দেশসমূহে নবজাতকের হাসপাতাল পরিত্যাগের পূর্বে আর মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণত ৩-৬ মাস বয়সে ছেলেদের খৎনা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রথাগতভাবে বংশপরম্পরায় একাজে নিয়োজিত ‘হাজাম’ (খলিফা নামেও পরিচিত) দ্বারা নিজবাড়ীতে সাধারণত ৪-১০ বছর বয়সে ছেলেদের খৎনা করা হয় যদিও বিগত তিন চার দশকে বিশেষকরে শহরাঞ্চলে শল্যচিকিৎসক দ্বারা ব্যাথা ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশে হাসপাতালে খৎনা করার প্রচলন বেড়েই চলেছে। এ উপলক্ষ্যে মিষ্টিমুখ এমনকি ভোজেরও আয়োজন হয়ে থাকে। লক্ষণীয় যে লুঙ্গি পরিধানে অনভ্যস্ত শহরাঞ্চলের ছেলেরাও অন্তত ওই কয়েক দিন সুবিধাহেতু লুঙ্গি পরিধান করে থাকে। এটি একটি সামাজিক-লৌকিক আনুষ্ঠানিকতা, সৌন্দর্যের জন্য আনুষ্ঠানিকতা। সুন্নতে খৎনার এই অনুষ্ঠান একটি সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা। এটি শরিয়ার কোনো বিধান নয়।

খৎনার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

খৎনার দ্বারা শরীর অধিক পাকপবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে। খৎনা করালে শিশুদের মূত্রপথের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়। এর ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, জ্বর, খাবারে অনীহা এবং স্বাস্থ্য ভালো না হওয়া ইত্যাদি রোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে খৎনা করালে লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ও যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষের খতনা এইচআইভি বা এইডস প্রতিরোধে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে, এটি আংশিক সুরক্ষা দেয়।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Election-Sagar-22-4-2024.jpeg

ঈদগাঁও উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ জনের মনোনয়ন দাখিল

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : নির্বাচন কমিশন ঘোষিত দ্বিতীয় ধাপের তফশিল অনুযায়ী আগামী ২১ মে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/