সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ধর্মীয় / মনসা পূজার ইতিকথা

মনসা পূজার ইতিকথা

https://i0.wp.com/coxview.com/wp-content/uploads/2023/08/Puja-Manasha.jpg?resize=540%2C330&ssl=1

অনলাইন ডেস্ক :

সৃষ্টির আদিকাল থেকে সর্প বিষধর প্রাণী। ভারতবর্ষে সর্প পূজা একটি প্রাচীন অনুষ্ঠান। মনসা সাপের দেবী। তিনি মূলত লৌকিক দেবী। পরবর্তীকালে পৌরাণিক দেবী রূপে স্বীকৃত হন। শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি ঘরে ঘরে মনসা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

পূরাণ অনুযায়ী জানা যায়, দেবাদিদেব মহাদেবের মানস কন্যা হলেন মা মনসা। মনসা সাপের দেবী। তিনি মূলত লৌকিক দেবী। পরবর্তীকালে পৌরাণিক দেবী রূপে স্বীকৃত হন। মনসা পূজার মুখ্য উদ্দেশ্য সাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া। সর্পের দেবী হিসেবে যুগ যুগ ধরে মা মনসা পূজিত হচ্ছেন ভক্তদের কাছে। শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে মা মনসার পুজো হয়। অন্যান্য পূজার মত সাধারণ পূজা বিধি অনুসরণ করতে হয় ৷

আষাঢ় মাসের কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিকে বলা হয় নাগপঞ্চমী৷ এই সময় বাড়ির উঠানে সিজ গাছ স্থাপন করে মনসা দেবীর পূজা করা হয়৷ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে ও মনসা পূজার বিধান আছে। বর্তমানে সার্বজনীনভাবে মনসা দেবীর মন্দিরে মনসা পূজা করা হয়৷ আবার পারিবারিক পর্যায়ে পারিবারিক মন্দিরে ও মনসা দেবীর পূজা করা হয় ৷

দেবী মনসার জন্ম সংক্রান্ত অনেক বিতর্ক রয়েছে। কোন কোন কবি বলেছেন মনসার জন্ম পদ্মবনে নয়, কেতকী অর্থাৎ কেয়াবনে। এজন্য তার নাম ‘কেতুকা’। আবার কেউ বলেছেন মনসা অযোনিসম্ভবা, শিববীর্যে পাতালে তাঁর জন্ম। এই জন্য অনেকেই তাঁকে ‘পাতাল-কুমারী’ বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তাঁর এই জন্মের ঘটনাটি আকস্মিক।

একদিকে মনসা এবং চন্ডী আবার অন্যদিকে চাঁদ সদাগর এবং মনসার দ্বন্দ্বের কাহিনী লোকমুখে বহুকাল থেকে প্রচলিত। চন্ডীর ভয়ে মনসাকে শিব ফুলের সাজিতে ভরে নিয়ে বাড়িতে আসেন। অলৌকিক উপায়ে মনসা বোধ হয় পত্রতুল্য হালকা হয়ে গিয়েছিল। শিব চন্ডিকে সাজিতে হাত দিতে বারণ করে চলে গেলেন ইন্দ্র-সদন। চন্ডী এসে ফুল সরিয়ে মনসাকে দেখে হতবাক চন্ডী। স্বামীর চরিত্র জানতেন শিব ভোগের নিমিত্ত একে এনেছে তা বিবেচনা করে মনসাকে সম্ভাব্য সতীন ভেবে দ্বন্দ্ব শুরু করলেন। ফলস্বরূপ চন্ডীর হাত দিয়েই ঘটল – জ্বলন্ত অঙ্গারে মনসার বামচক্ষু কানা হয়ে যায়।

হিন্দু লোককথা অনুযায়ী, চাঁদ সদাগর ছিলেন শিবের ভক্ত। মনসা চাঁদের পূজা কামনা করলে শিবভক্ত চাঁদ তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। কাহিনীর শেষে দেখা যায় চাঁদ সদাগর মনসার পূজা করতে বাধ্য হয়। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি ঘরে ঘরে মনসা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

কেউ কেউ মনসা প্রতিমা বানিয়ে পূজা করে থাকে। আবার কেউ কেউ পঞ্চ সর্পের ফণা যুক্ত প্রতিমার পূজা করে। গোত্র ও অঞ্চল ভেদে প্রথার ওপর ভিত্তি করে মনসা দেবী বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রূপে তার ভক্তদের দ্বারা পূজিত হয়ে থাকেন।

চৈতন্যদেবের সময় বাংলাদেশে মাটির প্রতিমা গড়ে ঘটা করে মনসা পূজা হতো। মনসা পূজা দুভাবে হয়ে থাকে- কোনও কোনও পূজায় পাঠা বলি দিয়ে হয়। আবার পাঁঠাবলি ছাড়াও পূজা হয়। আইনি জটিলতার কারণে এখন আর বলি প্রথার চল বিশেষ নেই। মনসা পূজার প্রতিমাতেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ মনসা প্রতিমা বানিয়ে পূজা করে থাকে। আবার কেউ কেউ পঞ্চ সর্পের ফণা যুক্ত প্রতিমার পূজা করে। গোত্র ও অঞ্চল ভেদে প্রথার ওপর ভিত্তি করে মনসা দেবী বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রূপে তার ভক্তদের দ্বারা পূজিত হয়ে থাকেন।

পূজার আরম্ভে সংকল্প গ্রহণ মনসার প্রতিমা স্থাপন, আচমন, চক্ষুদান প্রভৃতি বিধি অনুসরণ করতে হয় ৷ এছাড়া মনসার ধ্যান আবাহন মন্ত্র পাঠ এবং পূজার মন্ত্র পাঠ করতে হয় ৷ অতঃপর স্নান মন্ত্র পাঠ করে মহাদেবীকে স্নান করাতে হয় এবং অষ্ট নাগ মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে দেবীর পূজা আরম্ভ করতে হয় ৷ শেষে পুষ্পাঞ্জলী ও প্রণাম মন্ত্রের মাধ্যমে পূজা সমাপ্ত করতে হয় ৷ সবশেষে দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় ৷ মনসা দেবীর পূজা করলে সাপের ভয় থাকে না ৷

অনেক নামের মধ্যে দেবীর এক নাম ‘বিষহরী’। সর্পবিষ হরণ করার অদ্বিতীয় কৌশল দেবীর জানা আছে বলেই এই নাম। মনসাপুজো সাধারণত শ্রাবণ সংক্রান্তি বা আষাঢ়ী পঞ্চমীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, দেশে যখন প্রবল বর্ষাকালের সময়। এই সময়েই সাপ ও বিষাক্ত কীটের আধিক্য দেখা দেয় দুর্বার গতিতে। সুদূর অতীতে, যখন চিকিৎসাশাস্ত্র এত উন্নত হয়নি, তখন সর্পদংশনের চিকিৎসা হত মন্ত্র, ওষধি, ক্রিয়া ও দৈব, এই চার প্রকারে। এই চারটে পদ্ধতিই ছিল মনসাদেবীর কৃপার ওপর নির্ভরশীল। সেই কারণেই সর্পদ্বারা ঘটিত মৃত্যু বা সর্পদংশন এড়াতে সর্পদেবী মনসার পূজার প্রচলন। আবার কোথাও কোথাও দেবীর পরিবর্তে দেবীর প্রতীক হিসেবে অনন্ত, বাসুকি, পদ্ম, মহাপদ্ম, তক্ষক, কুলীর, কর্কট, শঙ্খ— এই অষ্টনাগও পূজিত হন।

দেবীর বাহন
সরস্বতীর মতো দেবী মনসার বাহন হংস। বাহনকে দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে মনসাও জ্ঞানযুতা, জ্ঞানলক্ষণা। দেবী মনসার জ্ঞানশক্তি মনোময়। শুদ্ধযোগ ও আধ্যত্ম জ্ঞানের সাধন সিদ্ধি দেবী মনসার দান।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষায় শক্তিশালী কমিশন গঠন করার প্রস্তাব -এমএএফ’র সেমিনারে

  প্রেস বিজ্ঞপ্তি : প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আন্দোলন সংগ্রাম ও রাজনৈতিক সম্প্রীতির চারণভূমি চট্টগ্রাম। নানা কারণে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/