সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / লামায় জেঁকে বসেছে শীত : শীতবস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে ফুটপাতে

লামায় জেঁকে বসেছে শীত : শীতবস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে ফুটপাতে

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :

পৌষের শুরুতে ঘন কুয়াশা আর শিশিরের সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় শীত জেঁকে বসেছে পাহাড়ে। এতে করে বান্দরবানের লামায় পাহাড়ি জনপদের ছিন্নমূল ও গরিব মানুষের দুর্ভোগও শুরু হয়েছে। শীতের প্রকোপে সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থায় আছে এ উপজেলার শ্রমজীবী মানুষ। তাই শীতবস্ত্র কিনতে তাদের ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) লামা বাজারের কোট বিল্ডিং সামনে রাস্তার পাশের হকারে কাপড় কিনতে আসা গৃহিনী শরিফা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তাদের আট সদস্যের পরিবার। ছেলে ও মেয়ের জন্য অভিজাত দোকান থেকে গরম কাপড় কেনা সম্ভব না। তাই পুরনো কাপড়ের দোকানে এসেছেন।

এদিকে ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত মার্কেটগুলোতে গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। শহরের অলিতে-গলিতে কাপড়ের দোকান সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়িরা। এসব দোকানে কম দামে বিদেশি পুরোনো গরম কাপড় পাওয়া যায়। প্রতিদিন গ্রাম ও শহরের শত শত নারী-পুরুষ আসছেন এ দোকানগুলোতে। সকাল থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব দোকান খোলা থাকে। কম পয়সায় পছন্দের গরম কাপড় দেখে শুনে কিনছেন ক্রেতারা।

লামা শহরে সপ্তাহে দুইদিন (শনিবার, মঙ্গলবার) হাট বসে। বাজারের অলিগলি ও রাস্তায় মৌসুমি ব্যবসায়ী ছাড়াও ফুটপাতে দোকান বসে। ফুটপাতের দোকানদার মোঃ ইসলাম বলেন, সব শ্রেণি পেশার মানুষ আমাদের কাছে গরম কাপড় কিনতে আসে। ৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে সুয়েটার, ট্রাওজার, জ্যাকেট, মাফলার, মাংকি ক্যাপ, প্যান্ট, সার্ট ও মোজা সহ হরেক রকমের শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সস্তায় পাতলা কম্বল বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। তিনি আরো জানান, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারই বেশি। সেই সঙ্গে ভ্যান চালক, রিকশা চালক, দিন মজুরসহ হতদরিদ্র ও শীতার্ত মানুষ শীতবস্ত্র কিনছেন।

লামা পৌরসভার বড় নুনারবিল এলাকার জিয়াউর রহমান আদিব (৩৯) বলেন, ‘শীতের পোশাক বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এখান থেকে ইচ্ছেমতো কম দামে গরম কাপড় কেনা যায়’।

লামা বাজারের মৌসুমি কাপড় ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, আমরা সারা বছর কাপড় নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ফেরি (বিক্রি) করি। মহাজনরা চট্টগাম থেকে বিদেশি পুরনো কাপড়ের চালান নিয়ে আসেন। আমরা কেজি দরে সেগুলি কিনে বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি করি। এতে আমরাও লাভবান হই, গরিব মানুষও সস্তায় কাপড় কিনতে পেরে উপকৃত হয়।

উপজেলার সাবেক বিলছড়ি গ্রামের কৃষক আলী আহমদ বলেন, “পৌষ মাস আসছে, শীতটাও বেশি পড়ছে। এই শীতে মানুষের খুউব কষ্ট হইতাছে। ঠান্ডার কারণে বের হতে পারতাছি না। আবার কাজে না গেলে সংসারও চলে না।”

লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, ‘পুরনো কাপড় না আসলে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়তো। তবে যেভাবে শীতের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে, এবার শীত খানিকটা বেশি হবে। হকারদের নিদিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় তারা ফুটপাত দখল করে দোকান বসাচ্ছে।’

লামার রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, লামায় বাঙ্গালীর পাশাপাশি ১১টি নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। দুর্গম পাহাড়ে বসবাস করা মানুষগুলোর অবস্থা আরো করুণ। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে লামা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৬৯০টি করে মোট ৫ হাজার ৫২০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এসব কম্বল দ্রæত ইউনিয়ন পরিষদ গুলো তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মাঝে বিতরণ করবে। তবে এই সংখ্যা উপজেলার ছিন্নমূল জনগণের তুলনায় অপ্রতুল।

লামা সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ রোবিন বলেন, ‘শীতের সঙ্গে ঠান্ডা জনিত রোগ বালাই বাড়ছে। সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়াসহ কিছু ভাইরাসজনিত রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা যায়। বাতাসের আর্দ্রতার পরিবর্তন ঘটে, বাতাসে ধুলোবালি বেশি থাকে, তাই শীতকালে এসব রোগ বেশি হয়। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে অ্যাজমা কিংবা হাঁপানি এবং শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে যতটা সম্ভব ধূলিকণা এড়িয়ে চলতে হবে। এজন্য মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। একইসঙ্গে রোটা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কারণ শীতকালে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। তাই পানিকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। তাহলে এসব রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে।

লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৫ হাজার ৫২০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আরও শীত বস্ত্র চাওয়া হয়েছে। আরো শীতবস্ত্র আসার সম্ভাবনা রয়েছে’।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Election-Sagar-22-4-24.jpeg

ঈদগাঁওতে দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও : ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/