সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের ঘোষণায় পাহাড় উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা

সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের ঘোষণায় পাহাড় উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা

Pahar - Rafiq-Lama 11.05.16 news 2pic f1 (3)

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :

৮ মে রবিবার রাজধানীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলায় ৪টি সেনা বিগ্রেড রেখে অবশিষ্ট সকল সেনাক্যাম্প পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটি পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতি সম্প্রদায় ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও বাঙালি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ মনে করছে এই ধরনের উদ্যোগ পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে।

ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রতিবাদে পাহাড়ে বাঙালিদের প্রায় সবকটি সংগঠন বিবৃতি দিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালী সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে পালন করা হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। পাশাপাশি ক্যান্টনমেন্ট প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের আহবায়ক ও সাবেক স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান সাংবাদিককে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চারটি বিগ্রেড রেখে বাকিগুলো প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এটা মূলত পার্বত্য চুক্তিরই অংশ। চুক্তির মধ্যে এটা আগে আলোচিত হয়েছে। চুক্তির পর এরই মধ্যে ১৮টি বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু সেই হারে এখান থেকে ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি। এখানকার আঞ্চলিক দলগুলোসহ নাগরিক সমাজেরও দাবি হলো অত্র অঞ্চল থেকে ক্যাম্পগুলো শীঘ্রই প্রত্যাহার করা হোক। এখানে সিভিল প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, সিভিল প্রশাসনের কর্তৃত্ব এখানে স্থাপিত হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এদিকে বাঙ্গালি সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর উক্ত ঘোষণা বাস্তবায়ন করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এটি কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কামাল সাংবাদিককে জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যখন অত্যন্ত নাজুক।

প্রতিদিনই অত্র অঞ্চলে চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা-গুমসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে যখন চিন্তায় মগ্ন এখানকার প্রশাসন যন্ত্র; ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রীর মুখে সেনাবাহিনীর চারটি বিগ্রেড রেখে বাকি সেনা-ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণায় হতাশ হওয়ার পাশাপাশি ক্ষুব্ধ হয়েছে পার্বত্যবাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অংশের প্রধানমন্ত্রী নন। তিনি একটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে খুশি করার জন্যই এই বক্তব্য দিয়েছেন বলে আমি মনে করছি।

পার্বত্য চুক্তির আলোকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বান্দরবান জেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুহুল আমিন। তিনি বলেন ১৯৯৭ এর ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশের প্রায় সকলেই আশ্বস্থ হয়েছিলো এবং আশা করেছিলো যে পাহাড়ে একটা শান্তিপূর্ন পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি। বিশেষ করে এখন পাহাড়ে অপহরণ, চাঁদাবাজি, হত্যা ও গুম বেড়েছে। যতদিন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে অপহরণ-চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অত্র অঞ্চলে বিরাজমান থাকবে, ততদিন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসকল অস্ত্রধারী-সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা রয়েছে, তাদের মোকাবেলার জন্য সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। পার্বত্য এলাকায় সার্বভৌমত্য রক্ষায় ও পাহাড়ি বাঙ্গালীদের বর্তমান যে সম্প্রতি রয়েছে তা রক্ষায় সেনা বাহিনী অত্যান্ত দরকার বলে তিনি বলেন।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় পার্বত্য অঞ্চল থেকে অনেক অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকালীন ২৩২টি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প থেকে গত ১৮ বছরে ১১৯টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁও উপজেলা নিবার্চন থেকে ২ চেয়ারম্যান ও ১ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সরে দাঁড়ালেন

নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : নানান কল্পনা ঝল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/