হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
আগে থেকেই আশ্রয় নেওয়া প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার চাপ সামলে নিতে হিমশিম খাচ্ছিল বাংলাদেশ। তার ওপর নতুন করে আশ্রয় নেওয়া আরো সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা রীতিমতো বিপাকে ফেলেছে দেশটিকে। সর্বশেষ এই সংখ্যা ১২ লাখের চেয়েও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব শরণার্থীর আশ্রয়, খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে একদিকে যেমন প্রচন্ড চাপ পড়ছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর; তেমনি সামাজিক পরিবেশ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে সচেতন মহল মনে করছেন। বিশেষ করে কেবল কক্সবাজারের উখিয়া এলাকাতেই এসব শরণার্থী আশ্রয় নেওয়ায় এখানকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা যেমন রয়েছে; তেমনি ভোগ্যপণ্য ও কর্মক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নতুন চাপ। এ ব্যাপারে উখিয়া সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, এসব শরণার্থী দেশের জনমিতির ওপর বিশেষ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এরা কোনো ধরনের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে না পারায় বিরুপ প্রভাব পড়বে দেশের মাথাপিছু আয়েও।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, এমনিতেই অতিবৃষ্টি ও বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই আঘাত হানছে দেশে। গেল বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ফসল সড়ক-রেলপথসহ নানা ধরনের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য বিদেশ থেকে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির পথ বেছে নিতে হয়েছে। এর মধ্যেই আবার নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে হলো বাংলাদেশকে। এর ফলে আর্থিক খাতেই সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। শুধু কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফই নয়, রোহিঙ্গারা পুরো বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ইয়াবা সরবরাহকারী, চোরাচালানি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। নানাভাবে তারা স্থানীয় শ্রমবাজার দখল করে আছে। এমনকি বাংলাদেশি ভোটার আইডি কার্ড গ্রহণ করে বাংলাদেশি নাগরিকও হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীর এই বিশাল চাপ সামলে নিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশকে বাংলাদেশের পাশে থেকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরতে চায় কিনা জানতে চাইলে অধিকাংশ রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, যতদিন না মিয়ানমারে আমাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা না হবে ততদিন তারা তাদের স্বদেশে ফিরতে নারাজ। গত ২৫ আগষ্ট থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু হওয়া নির্যাতন এখনো চলছে। তাই এখনো আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে ছুটে আসছে রোহিঙ্গারা। সামাজিক স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সূর্যোদয় সংঘের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈতক আমাদের কক্সবাজার।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ায় কক্সবাজারসহ ওই এলাকার পর্যটন, অর্থনীতি ও পরিবেশ ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে গাছপালা ও পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় ওই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানেই আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছে। এতে সরাসরি অর্থনৈতিক খাতে ভাগ বসাচ্ছে তারা। নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা নতুন করে কর্মক্ষেত্র খুঁজবে।
You must be logged in to post a comment.