অনলাইন ডেস্ক :
পিরিয়ডস চলাকালীন কি যৌন মিলন নিরাপদ? পিরিয়ডের সময় এটা করা যাবে না, ওটা করা বারণ বা ওই সময় যৌন মিলন উচিত কিনা তা নিয়েও মনে উঁকি মারে হাজারটা প্রশ্ন! অনেকেই মনে করে পিরিয়ডের সময় সেক্স করাটা অস্বাস্থ্যকর।
প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নারীদের পিরিয়ড হয়ে থাকে। এসময় নারীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। পিরিয়ড কমপক্ষে তিন দিন থেকে শুরু করে সাত দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ সময় স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে জানতে চান- পিরিয়ড চলাকালীন শারীরিক সম্পর্ক হলে কোনো সমস্যা হয় কিনা?
মাসিক (Menstrual Cycle) বা ঋতুস্রাব একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যেখানে মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নারীর যোনি পথ দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে। পিরিয়ড তাকে প্রতি মাসে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। প্রতি চন্দ্র মাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে, তাকেই পিরিয়ড বা ঋতুচক্র বলে। ১০ থেকে ১৪ বছর হতে ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত এই ঋতুস্রাব চলমান থাকতে পারে। ৩-৭ দিন অবধি এই ঋতুকাল স্থায়ী হয়। পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে ও চলাকালীন নারীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। পিরিয়ড কমপক্ষে তিন দিন থেকে শুরু করে সাত দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। পিরিয়ডের সাথে যেহেতু নারীর সন্তান ধারণের ব্যাপারটি জড়িত, সেহেতু দাম্পত্য জীবনও পিরিয়ড দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত। পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকে। এছাড়া অনেকের মতেই পিরিয়ডের রক্ত একটা অপবিত্র, নোংরা এবং লজ্জাকর জিনিস।
আপনি সেক্স করবেন কিনা তা একান্তই আপনার নিজস্ব ব্যাপার। তবে কিছু সাবধানতা গ্রহন করে করুন। পিরিয়ডের সময় ওরাল সেক্স অনেকের কাছেই বিব্রতকর লাগে। তবে অনেকেই এটা করে থাকে। অনেক ছেলেই আবার পিরিয়ডের সময় ওরাল সেক্স দিতে ভালবাসে। পিরিয়ডের সময় মেয়েদের যৌনিতে রক্ত লেগে থাকে বলে অনেক ছেলেই সে স্বাদ পছন্দ করে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক মেয়েই পিরিয়ডের সময় ওরাল সেক্স চায় না এবং অস্বস্তি বোধ করে, আবার অনেকেই বেশ এনজয় করে। দুই জনের মানসিকতার উপর নির্ভর করে তাই এসময় ওরাল সেক্স করা উচিত।
পিরিয়ডের সময় অনেক সময়ই অনেকের খিঁচুনি হয়। শারীরিক সম্পর্ক তখন অব্যর্থ ওষুধের মতো কাজ করে। সেক্সের পর শরীর ও মন অনেকখানি রিল্যাক্স হয়ে যায়। যেটা খিঁচুনি অনেকাংশে কম করে। পিরিয়ডের যন্ত্রণায় রাতে অনেকে ঘুমাতে পারেন না এমন অনেকে আছেন। তবে পিরিয়ড চলাকালীন শারীরিক সম্পর্ক, দেহে হরমোন নিঃসরণ সংক্রান্ত যে পরিবর্তনগুলো হয়, তার ফলে যন্ত্রণার প্রকোপ কিছুটা কমে। ঘুম বাড়ে।
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক হলে রক্তপাত স্বাভাবিকের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে। তাই পিরিয়ড চলাকালীন শরীরিক সম্পর্ক নয়। পিরিয়ড চলাকালীন কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা অনেক নারী আছেন যারা জরায়ু সমস্যায় ভোগেন। তাই প্রত্যেক নারীর উচিত নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া।
ইসলামের দৃষ্টিতে মাসিকের সময় যৌন মিলনঃ
পবিত্র কুরআ’ন এ আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আর আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয সম্পর্কে। বলে দেন, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগণ থেকে বিরত থাকো এবং যতক্ষন না তারা পবিত্র হয়ে যায় ততক্ষণ তাদের নিকটবর্তী হবে না। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়, তখন গমন কর তাদের কাছে, যে ভাবে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং যারা অপবিত্রতা হতে বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারা/আয়াত-২২২)। সুতরাং স্বামীর জন্য জায়েয হবে না স্ত্রী সহবাস করা যতক্ষন না স্ত্রী হায়েয থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করে পবিত্র হয়।
উপকারিতা :
- পেইন রিলিফের কাজ করে
- পিরিয়ড চলাকানীন সেক্সে, দেহে হরমোন নিঃসরণ সংক্রান্ত যে পরিবর্তনগুলো হয়, তার ফলে যন্ত্রণার
- প্রকোপ কিছুটা কমে।
- ঘুম ভালো হয়।
- পিরিয়ডের সময় হ্রাস করে।
অপকারিতা :
- মাসিকের সময় জরায়ু ও যোনির অম্লভাব থাকে না। তাই এটি খুব সহজেই রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
- অনাকাঙ্ক্ষিত রক্ত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
- যৌন বাহিত রোগের সম্ভাবনা।
- পুরুষ লিঙ্গে রক্ত লেগে যৌনমিলনে তার অরুচি জন্মাতে পারে।
- মিলনের সময় এবং পরবর্তীতে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
- কোন যৌনবাহী রোগ (Sexual transmited disease) থাকলে একে অপরের দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে।
- জরায়ু মুখ ঘোরে যেতে পারে, যা পরবর্তীতে মারাত্মক কুফল বয়ে আনতে পারে।
- পিরিয়ড চলাকালীন শারীরিক সম্পর্কে শরীর থেকে প্রভাবিত রক্ত পেটের অন্য কোনো অংশে ঢুকে যেতে পারে।
টিপস :
- ইসলামের দৃষ্টিতেও পিরিয়ডের সময় যৌনমিলন সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে।
- মাসিকের সময় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে দুইজনের সম্মতিতে।
- মাসিকের সময় ব্যাথা এড়াতে সহবাস থেকে বিরত থাকা উত্তম।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় নিকটে রাখা।
- কনডম ব্যাবহার করা।
- ভিন্ন আসনে সহবাস করা।
- মাসিকের সময় হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকায় রাগ, বিরক্তি, জেদ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। তবে অতিরিক্ত রাগ এ সময় শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
পিরিয়ড চলাকালীন কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ অনেক নারী আছেন যারা জরায়ু সমস্যায় ভোগেন। পিরিয়ড যেহেতু এটি নারীর স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়া। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শারীরিক, মানসিক অবস্থা খেয়াল করে সহবাসের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
You must be logged in to post a comment.