মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়ার ঈদ বাজার। পৌরশহরে অভিজাত বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলোতে পুরোদমে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। সকাল থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলছে বিকিকিনি। দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
চকরিয়া পৌরশহরের বিভিন্ন বিপণিবিতান ও এলাকা ঘুরে ঈদবাজারের এমন চিত্রই দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা বেশ আগ্রহ নিয়েই কেনাবেচা করছেন। নামীদামি মার্কেট ও বিপণি বিতান গুলোর ব্যবসায়ীরা জানান, উচ্চবিত্তদের বড় একটি অংশই চকরিয়ার চেয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে পোশাকসহ বিভিন্ন ঈদপণ্য কিনতে বেশি পছন্দ করেন। আর নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন চকরিয়ার বিভিন্ন শপিং মল থেকে ঈদেও বাজার সারছেন।
চকরিয়ার শাহ ওমরাবাদ এলাকার বাসিন্দা গৃহকর্তী খালেদা আক্তার জানান, নিজের জন্য, শ্বাশুরী ও স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের ছোট-বড় সবার জন্য এবার ৩৫ হাজার টাকার পোশাক কিনা হয়েছে। ঈদেও দিন মেহমানদের আপ্যয়নের জন্য আরো ১০-১২ হাজার টাকার নাস্তার বাজার বাকী রয়েছে।
চকরিয়া পৌরশহরের বাসিন্দা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য এ.এস.এম আলমগীর হোসাইন জানান, ‘এবারের ঈদে তাঁদের বাজেট ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে বাচ্চাদের পোশাক কেনা হয়েছে। শিগগির পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কেনাকাটা শেষ করবেন।’
ওশান সিটি মার্কেটের “কারুশৈলী” স্বত্তাধিকারী মুকুল কান্তি দাশ ‘এবারের ঈদের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে নারীদের পোশাক বাজরিও মাস্তানি। এছাড়া ইন্ডিয়ান লেহেঙ্গার কদরও রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। ঝড়-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকায় এবার সকাল থেক গভীর রাত পর্যন্ত ধুন্ধুমার বেচাবিক্রি হচ্ছে।’
হাজেরা শপিং সেন্টারের ‘মনে রেখ’ ক্লথ স্টোরের মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন লাখ টাকা বেচাবিক্রি হচ্ছে। ২২ রমজানের পর কেনাবেচা আরও বাড়বে। অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি এখনও বেতন বোনাস পাননি। হয়তো দুই একদিনের মধ্যে তাঁরা বেতন পেয়ে কেনাকাটা করতে আসবেন।
চকরিয়া পৌর শহরের ওশান সিটি, সিটি সেন্টার, আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্স, নিউ মার্কেট, রূপালী শপিং কমপ্লেক্স, চকরিয়া সুপার মার্কেট, চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্স, রওশন মার্কেট, হাজেরা শপিং সেন্টার, রূপজাহান প্লাজা, বাবুল শপিং কমপ্লেক্স, সোসাইটি মসজিদ মার্কেট, সমবায় সমিতি মার্কেটে রয়েছে ছোট-বড় অন্তত এক হাজার কাপড়-চোপড় ও জুতা-স্যান্ডেলের দোকান।
এসব দোকানে শোভা পাচ্ছে মেয়েদের লেহেঙ্গা, বাজরিও মাস্তানি, জামদানি, মসলিন ও কাতান শাড়ি, প্লাজো প্যান্ট, আপেল প্লাজো ও ঢোল প্যাণ্ট, ইন্ডিয়ান কুর্ত্তি, দেশিয় তৈরি থ্রি-পিছ, স্কাট টপস, জিন্স প্যান্ট, বেনারশি, ছেলেদের নবাবী পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, ফতুয়া, টি-শার্ট, প্যান্ট এবং ছোটদের জন্য রয়েছে বাহারি ডিজাইনের তৈরি পোশাক।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইন্ডিয়ান লেহেঙ্গা সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা, বাজরিও মাস্তানি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা, জামদানি শাড়ি ছয় হাজার, কাতান তিন থেকে চার হাজার টাকা, মসলিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা, প্লাজো প্যান্ট ২৫০-৩০০ টাকা, আপেল প্লাজো ৩০০-৪০০ টাকা, ঢোল প্যান্ট ৭০০ টাকা, দেশিয়া থ্রি-পিছ আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, ইন্ডিয়ান কুর্ত্তি ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছেলেদের পাঞ্জাবী বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে নয় হাজার টাকা পর্যন্ত দামে।
ওশান সিটি ও আনোয়ার শপিং মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বখাটেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নারী ক্রেতারা। এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বখাটেদের কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে। পাশাপাশি চুরি-ছিনতাইও ভেড়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ কোনো আইননানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য লাঠে উঠবে।
তবে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.কামরুল আজম বলেন, ‘চকরিয়া পৌর শহরের বিপনীবিতানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। যেখানেই ঝামেলা হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ হাজির হচ্ছে।’
You must be logged in to post a comment.