ডেস্ক সংবাদ :
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে র্যাব-২ একটি দল তার গুলশান-২ এলাকায় ৩৬ নম্বর সড়কে তার ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্টে এ অভিযান চালায়। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ, ইয়াবা ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করে র্যাব।
ফেসবুকে ২০ লাখের বেশি ফলোয়ার হেলেনা জাহাঙ্গীরের। বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এই ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা, যিনি যুক্ত রাজনীতির সঙ্গেও। বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত এই ব্যবসায়ীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। এবার তার গুলশানের বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র্যাবের একাধিক টিম।
ফেসবুকে বেশ সক্রিয় হেলেনা জাহাঙ্গীর মূলত একজন নারী উদ্যোক্তা হলেও কিছুদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ আসনের উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কিন্তু মনোনয়ন পাননি।
কুমিল্লার মেয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে তার উত্থান হয়েছে অল্প সময়ের মধ্যে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় তার। হেলেনার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর।
স্বামীর সংসারে হেলেনা জাহাঙ্গীর পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন; শেষ করেন স্নাতকোত্তর। এরপর শুরু করেন তার উদ্যোক্তা জীবন।
জানা গেছে, হেলেনা জাহঙ্গীর প্রিন্টিং, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ‘জয়যাত্রা’ নামে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনেরও মালিক তিনি। সব মিলিয়ে ১০ হাজারেও বেশি কর্মী আছে তার এসব প্রতিষ্ঠানে।
হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসার বাইরে বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি রোটারি ক্লাবের একজন মেজর ডোনার। মেজর ডোনার হিসেবে তিনি এ বছর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন। এ ছাড়া তিনি গুলশান সোসাইটি, গুলশান অব কমিউনিটি ক্লাব, গুলশান জগাসর ক্লাব, ইন্টারন্যাশনাল জন্টা ক্লাব, ইন্টারন্যাশনাল ইনার হুইল ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, ডব্লিউইভি, উত্তরা লেডিস ক্লাবের সক্রিয় সদস্য।এর মধ্যে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইনার হুইল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল ও গুলশান হেলথ ক্লাবের নির্বাহী সদস্য। হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক। এ ছাড়া তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সক্রিয় সদস্য তিনি।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে। উইকি ফ্যাক্টসাইডার নামের একটি ওয়েবসাইটে তার পেশা হিসেবে অ্যাংকর বা উপস্থাপক উল্লেখ করা হয়েছে। হেলেনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালে তারা বিয়ে করেন। তিনি তিন সন্তানের জননী।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। সেই সূত্রে জন্ম কুমিল্লায় হলেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী, সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে।
এফবিসিসিআই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক গণমাধ্যমকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের দেয়া সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের সময় স্বামী জাহাঙ্গীর আলম নারায়ণগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠিত পোশাক কারখানার জিএম পদে চাকরি করতেন। পাশাপাশি সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসার সঙ্গেও সংশ্লিষ্টতা ছিল।
তবে গৃহিণী হিসেবে বসে না থেকে পড়াশোনা শেষ করে হেলেনা জাহাঙ্গীর শুরুতে চাকরির চেষ্টা করেন। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য ইন্টারভিউও দিয়েছেন তিনি। একদিন চাকরি খোঁজার সূত্র ধরে চলে যান স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের অফিসে। সেখানে স্বামীর অফিস কক্ষ দেখে তিনি ঠিক করেন নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার। স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান স্বামী জাহাঙ্গীর আলম।
বিয়ের ছয় বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১ তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে তিনি শুরু করেন প্রিন্টিং ও অ্যামব্রয়ডারি ব্যবসা।
সম্প্রতি চাকরিজীবী লীগ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নেতা বানানোর আহ্বান জানানোর একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে বিতর্ক জন্ম দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। কথিত এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করা হয়।পরে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটি থেকে তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়।
গত রবিবার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উপকমিটির সদস্যসচিব ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ সই করেন। এতে বলা হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ হতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
You must be logged in to post a comment.