এম. রাসেল খাঁন জয়; কুতুবদিয়া :
সাগরে নির্বিচারে অপহরণ ও জলদস্যুতা বৃদ্ধির কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে উপকূলের জেলেরা। গত মঙ্গলবার হতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলেরর অদূরে সশস্ত্র জলদস্যু বাহিনী শতাধিক ফিশিং ট্রলার ডাকাতিপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করতে অপহরণ করেছে দেড়শতাধীক জেলেকে। জলদস্যুদের অপহরণের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের ১২ ফিশিংট্রলার গণডাকাতির শিকার হয়েছে এ পর্যন্ত। ডাকাতি করে ক্ষান্ত হয়নি দস্যুদলরা। প্রতি ট্রলার থেকে দুই তিনজন করে ২৫ জন জেলেকে তুলে নিয়ে সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলে আটক করে রেখেছে। জেলেদেরকে আটক রেখে জলদস্যুরা ট্রলার মালিকের মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবী করছে বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুতুবদিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ফিশিংট্রলার মালিকরা নিশ্চিত করেন। অপহৃত জেলেদের উদ্ধার করার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান ট্রলার মালিকগণ। সংবাদ সম্মেলনে ট্রলার মালিক রত্নসেন কোম্পানী, আলমগীর কোম্পানী, শেখ কামাল কোম্পানী, বিবিশন কোম্পানী, রশিদ আহমদ কোম্পানীসহ একাধিক ট্রলার মালিক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রলার মালিকরা বলেন, গত এক মাস ধরে সাগরে দস্যুতা করে গেলেও রহস্যজনকভাবে সাগররক্ষা বাহিনী কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ট্রলার মালিকরা ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে জেলেরা জলদস্যুদের ভয়ে সাগরে মাছ ধরতে যেতে সাহস করছে না। ট্রলার মালিকরা এ শুস্ক মৌসুমে সাগরে মাছ আহরণের জন্য কোটি কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে। জলদস্যুদের বেপরোয়া তান্ডবের কারণে সাগর অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। ৫ জানুয়ারী কুতুবদিয়ার উপকূল হতে শতাধিক ফিশিংট্রলার গভীর সাগরে মাছ ধরার জন্য যায়। গত মঙ্গলবার হতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা (১২হতে ১৪জানুয়ারী) পর্যন্ত সুন্দরবনের অদূরে বড়খারী ও মেহের আলীর চর এলাকায় মাছ ধরারত অবস্থায় কুতুবদিয়া উপকূলের আলী আকবর ডেইল কুমিরারছড়া এলাকার রত্নসেন কোম্পানীর এফ.বি সাগর-২, এফ.বি সাগর-৩ দুই ফিশিং ট্রলারের মাঝি সুজন জলদাস (৩২) মাঝি সুভাস জলদাস (২২) ড্রাইভার নুর হোসেন (৩৪) একই এলাকার আলমগীর কোম্পানীর এফ.বি হাজি ছৈয়দা খাতুন ট্রলারের মিন্টু জলদাস (৪০) রহিম ড্রাইভার (২৮) শেখ কামাল কোম্পানীর এফ.বি খাজা আজমীর ট্রলারের মাঝি নাছির উদ্দিন (৪৫) লেডু ড্রাইভার (৪১) বড়ঘোপ ইউনিয়ন এলাকার আলহাজ ছাবের আহমদ কোম্পানীর এফ.বি নাহিন ট্রলারের মাঝি মাহাবুবুল হক (৩৮) এফ.বি মাবিয়া ট্রলারের মাঝি মোঃ হোসেন (আজালা) (৩৭) সত্যরঞ্জন কোম্পানীর এফ.বি দূর্গা ট্রলারের মাঝি আজালা দাশ (৩৪) এফ.বি মা লক্ষি ট্রলারের মাঝি আনন্দ দাশ (৪৫) দিদার কোম্পানীর এফ.বি বায়তুশ শরফ ট্রলারের মাঝি মোঃ হাছান (কালাসোনা) (৩৫) রশিদ আহমদ (বইল্যা) কোম্পনীর এফ.বি সাহেলা ট্রলারের মাঝি জিয়াবুল হক (৪৩) গিয়াস উদ্দিন (কালাবদা) (৩৭) বিবিসন দাশ কোম্পানীর এফ.বি মা দূর্গা ট্রলারের মাঝি আদিনাথ দাশ (গুরাবুইজ্জ্যা) (৪৩) ইসমাইল কোম্পানীর এফ.বি আল্লারদান ট্রলারের মাঝি আলী হায়দার (কালু মাঝি) (৫৫) মনছুর কোম্পানীর এফ.বি ড্যানিস ট্রলারের ইউনুচ (৩২) মালিক মনছুর (৩০)কে জলদস্যুরা অপহরণ করে সুন্দরবন গহীন জঙ্গলে আটক রেখেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে ট্রলার মালিকরা দাবী করেন।
সম্মেলনে তারা আরো বলেন, সুন্দরবন সাগর এলাকার বড়খারি নামক স্থান ও মেহেরআলীচর থেকে জেলেদের অপহরণ করেছে দস্যুদল। রামপাল সেমনগর থানার রামপাল এলাকার ৬০/৬৫ জন অস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জলদস্যু মিলে মাষ্টার গ্রুপ আর হালিম গ্রুপ নাম ব্যবহার করে ১০/১২টি ট্রলার নিয়ে ভারী অস্ত্রের মহড়া দিয়ে জলদস্যুরা সাগরে ডাকাতিপূর্বক জেলে অপহরণ করে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি জলদস্যুরা এফ.বি সাগর-৩ ফিশিং ট্রলারের মালামাল লুট করে ট্রলারটি সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে।
You must be logged in to post a comment.