ধারাভাষ্যকার নভোজত্ সিং সিধু বলছিলেন, ‘গেইল যেদিন খেলেন দুনিয়ার সবাই সেদিন প্রজা, গেইল একাই রাজা।’সিধুর কথা যে অমূলক নয় সেটা প্রমাণও করে দিয়েছেন গেইল। যতক্ষণ তিনি ক্রিজে ছিলেন ততক্ষণে কেউই বোধহয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জয়ের কথা ভাবতে পারেননি। তার আউট হওয়ার পর একটু করে আশা জাগাতে শুরু করে হায়দরাবাদ শিবির। শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর নবম আইপিএলের ফাইনাল ৮ রানে জিতে নিয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার-মুস্তাফিজর রহমানের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
২০০৯ সালে প্রবাসী (দক্ষিণ আফ্রিকা) আইপিএল প্রথম জিতেছিল হায়দরাবাদ (তখন দলের নাম ছিল ডেকান চার্জার্স হায়দরাবাদ)। এবার বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার ট্রফি জিতলো দলটি। বেঙ্গালুরুকে এখন যদি কেউ বলেন, আইপিএলের চোকার্স, সেটা বললে বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না। এবার নিয়ে তারা তিনবার ফাইনাল খেললো। কিন্তু একবারও ট্রফি জয়ের স্বাদ নিতে পারেনি।
ঘরের মাঠে ২০৮ রান তাড়া করতে নেমে বেঙ্গালুরুকে রকেট গতির শুরু এনে দেন গেইল। একপ্রান্তে চুপচাপ ছিলেন বিরাট কোহলি। অন্যপ্রান্তে বোলারদের চোখের জল নাকের জল এক করে ছেড়েছেন গেইল। ৩৮ বলে ৭৬ রান করে যখন থামেন গেইল ততক্ষণে ১০.৩ ওভারে বেঙ্গালুরুর স্কোরবোর্ডে উঠে গেছে ১১৪ রান। গেইল চারের চেয়ে ছক্কাই মেরেছেন বেশি। আট ছক্কার বিপরীতে বাউন্ডারী মেরেছেন চারটি।
গেইল ফিরে যাওয়ার পরও ম্যাচে ছিল বেঙ্গালুরু বিরাটের ব্যাটে। ৩৫ বলে ৫৪ রান করে বিরাট আউট হওয়ার পর থেকেই আস্তে আস্তে হায়দরাবাদের দিকে ম্যাচ ঘুরে যায়। চার মেরেছেন পাঁচটি, ছয় দুটি। এবি ডি ভিলিয়ার্স ৫ রান আউট হলে হায়দরাবাদের পথ পরিস্কার হয়ে যায়। পরে শেন ওয়াটসনকে (১১) ফেরালে ম্যাচ থেকেই ছিটকে পড়ে যায় বেঙ্গালুরু। শেষ পর্যন্ত তারা ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ২০০ রান তুলতে সক্ষম হয়।
বল হাতে হায়দরাবাদের হয়ে কাটিং দুটি, স্রান, মুস্তাফিজুর ও বিপুল শর্মা নেন একটি করে উইকেট। ব্যাট হাতে ১৫ বলে অপরাজিত ৩৯ ও বল হাতে দুই উইকেট নেয়ার সুবাদে ফাইনালের ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন হায়দরাবাদের বেন কাটিং।
এরআগে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ সবাইকে অবাক করে বেঙ্গালুরু বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে স্কোরবোর্ডে জমা করে ২০৮ রান। পুরো টুর্নামেন্টে হায়দরাবাদের ব্যাটিং ঘুরপাক খেয়েছে ডেভিড ওয়ার্নারকে কেন্দ্র করে। চিন্নাস্বামীর ফাইনালেও তাই হলো। ৬.৪ ওভারেই ওয়ার্নার-শিখর ধাওয়ান ওপেনিং জুটিতে তুলে ফেলেন ৬৪ রান। তখনই বোঝা গিয়েছিল ফাইনালে অন্য পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছে হায়দরাবাদ।
এটা তো সবার জানা যে, বিরাট কোহলি, ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের সামনে ১৫০ প্লাস রান করেও লাভ নেই। ধাওয়ান ২৫ বলে ২৮ রান করে ফিরলেও অধিনায়কের ব্যাট তখন বেঙ্গালুরু বোলারদের আছড়ে ফেলছিল বাউন্ডারীর বাইরে। দলীয় ১২৫ রানে যখন ওয়ার্নার ফিরছেন ততক্ষণে তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ৬৯। ৩৮ বলে খেলা তার এই ইনিংসে ছিল আটটি চার ও তিনটি ছক্কা।
যুবরাজ সিং আরও একবার দেখালেন বড় ম্যাচে অভিজ্ঞতা কতটা প্রয়োজন। ১৪৮ রানে আউট হওয়ার আগে ২৩ বলে চার বাউন্ডারী, দুই ছক্কায় তিনি খেলে দিয়ে গেছেন ৩৮ রানের ইনিংস।
তারপরও হায়দরাবাদের ইনিংস দুই শ পার হতো না যদি বেন কাটিং শেন ওয়াটসনের ওপর স্টিম রোলার না চালাতেন। ১৫ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলার পথে কাটিং একবার ছক্কা মেরে বল স্টেডিয়ামই পার করেন। তিন বাউন্ডারীর পাশাপাশি ছক্কা মেরেছেন চারটি। সবচেয়ে বেশি ঝড়টা গেছে শেন ওয়াটসনের ওপর দিয়ে। তিনি শেষ ওভারে ২৪ রানসহ ৪ ওভার বল করে ৬১ রান দিয়েছেন। একটি উইকেটও পাননি।
৪৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন বেঙ্গালুরুর ইংলিশ বোলার ক্রিস জর্ডান। এস অরবিন্দ ৩০ রানে ২টি ও যুবেন্দ চাহাল ৩৫ রানের বিনিময়ে পেয়েছেন ১টি উইকেট।
সূত্র:banglamail24.com
You must be logged in to post a comment.