শহীদুল্লাহ কায়সার; কক্সভিউ :
২০ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটা। অন্যান্য দিনের মতো ছিল না কক্সবাজার সদর হাসপাতালের পরিবেশ। মানুষের রক্ত আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিল হাসপাতাল প্রাঙ্গন। রক্ত ঝরছিল গুলিবিদ্ধদের দেহ থেকে। আর আর্তনাদে তাঁদের স্বজনদের। রক্তাক্ত সকলেই মহেশখালী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনার শিকার। রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত যাঁদের সংখ্যা গুণে পাওয়া গেল সতের। এই সতের জনই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ঘোনারপাড়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে। তাদের কেউ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মকসুদ মিয়া আবার কেউবা সাবেক মেয়র সরওয়ার আজমের সমর্থক। তৌকির এবং নুর হোসেন নামে দু’ব্যক্তিকে আবার চট্টগ্রাম রেফার করেছেন চিকিত্সকরা। উন্নত চিকিত্সার জন্যই চমেক হাসপাতালে তাঁদের প্রেরণ করা হয়।
বিকেল থেকে ঘড়ির কাঁটা যখন বাঁ থেকে ডান দিকে সরে আবার স্ব-স্থানে। এইভাবে ঘুরছিল। হাসপাতালে কর্মরতদের ব্যস্ততাও ততোই বাড়ছিল। ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে ওয়ার্ড বয় পর্যন্ত সবারই বেড়ে গিয়েছিল ব্যস্ততা।
গুলিবিদ্ধদের চিকিত্সা দিতে গিয়ে জরুরী বিভাগ থেকে শুরু করে সার্জারি ওয়ার্ড পর্যন্ত এই ব্যস্ততা ছিলো চোখে পড়ার মতো। সবকিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি সবার নজরে পড়েছে সেটি হলো-হাসপাতালের ভেতরের মানবিকতা। মানবতা যে কোন জাত, বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণী, রাজনীতি বুঝে না সেটিরই প্রমাণ রাখলেন সবাই। ঘন্টা দু’য়েক আগেও যাঁরা মহেশখালী পৌরসভার ঘোনারপাড়া মাদ্রাসা মাঠে দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলেন। তাঁরাই হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের পাশাপাশি সিটে চিকিত্সা নিচ্ছেন। সহায়তা করছেন একে অপরকে। মকসুদ মিয়ার লোকজন এগিয়ে এসে খোঁজ খবর নিচ্ছেন সরওয়ার আজমের সমর্থকদের। সরওয়ার আজমের সমর্থরাও করছেন একই কাজ। হঠাত্ করে হাসপাতালের অভ্যন্তরে একটি টিভি চ্যানেলের বরাত দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে একটি খবর। চট্টগ্রামে নেওয়ার পথে মারা গেছেন মকসুদ মিয়ার এক সমর্থক। এ সময় সকলে আফসোস করলেও সহায়তা দিতে কার্পণ্য করেননি। পরে মৃত্যুর সংবাদটি গুজব এ কথা জানার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দেয় সকলের মধ্যে।
৩৫ বছরের এক যুবক আব্দুর রহিম এসেছিলেন সদর হাসপাতালে। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এই যুবক এসেছিলেন তাঁর দু’জন গুলিবিদ্ধ আত্মীয়ের সেবা করতে। যাঁরা ছিলেন সরওয়ার আজমের সমর্থক। কিন্তু হাসপাতালে এসে তাঁর সেই আত্মীয়ের পরিবর্তে বেশি সেবা করতে হয়েছে মকসুদ মিয়ার সমর্থকদের। কথা বলতেই হেসে বললেন, “দেখছেন না এখানে কোন পক্ষ নেই।” আব্দুর রহিমের মতো আরো অনেকেই এ কাজ করেছেন।
গতকালের সংঘটিত ঘটনায় যাঁরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাঁরা হলেন, গোরকঘাটার তৌকির উদ্দিন (৩২), ঘোনারপাড়ার আব্দুল করিম (২৮), দাসি মাঝির পাড়ার মো.রাসেল (১৭), মাতারবাড়ির মো.শরীফ, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার মো.জাহেদ, মহেশখালীর ঘোনারপাড়ার মাহামুদুল করিম (২২), দক্ষিণ পুটি বিলার নুরুল কবির, পোকখালীর মোবারক, মহুরির ডেইল এলাকার আব্দুস সবুর (৩০), একই এলাকার আবু ছিদ্দিক, পুটিবিলার রহমত উল্লাহ ও আব্দুস শুক্কুর, বড় মহেশখালীর এস.এম রহমত উল্লাহ, গোরকঘাটা সিকদার পাড়ার আব্দুল্লাহ, পুটিবিলার হেলাল উদ্দিন, সিকদার পাড়ার কামাল হোসেন এবং গোরকঘাটার মো.রশীদ। সদর হাসপাতালে রেজিস্টার থেকে সংগৃহীত তালিকায় উল্লিখিতদের নাম পাওয়া গেছে।
You must be logged in to post a comment.