সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গাদের পদভারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ

উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গাদের পদভারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ

 

গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :

বিশ্বের শ্রেষ্ট পর্যটন নগরী হিসাবে খ্যাত কক্সবাজার জেলা এখন রোহিঙ্গাদের দখলে। এমন কোন এলাকা নেই যেখানে রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন হয়নি। চারিদিকে শুধু রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। এর মধ্যে বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে।

কারণ এই দুই উপজেলা হচ্ছে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা। পার্শ্ববর্তীদেশ মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার জের ধরে বিগত ১৯৭৮ সাল থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ শুরু করে এই রোহিঙ্গারা।

এরপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে রোহিঙ্গাদের আগমনের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। বর্তমানে স্থানীয় জনগণের চেয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন সূত্রে তথ্য নিয়ে আরো জানা যায়, গত ২৫ আগষ্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার সূত্র ধরে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে উখিয়া-টেকনাফে আবারো অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা।

স্থানীয়রা দাবী করছেন বর্তমানে এই রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১৫ লক্ষ। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের পদভারে উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার সাধারন মানুষ এখন বড় বিপাকে। কারণ রোহিঙ্গাদের আগমনের ঢল এবং আশ্রয়ের প্রেক্ষিতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। তার পাশাপাশি যাতায়াত ভাড়া, বনজসম্পদ, শ্রমবাজার, এলাকা গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়ক পরিবহণ, যানবাহন ও যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফ এই ২টি উপজেলা প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুর। লবণ, চিংড়ী, পান, সুপারী, মৎস্য ও বন-সম্পদ জাতীয় অর্থনীতেতে বেশ অবদান রেখে যাচ্ছে এই দুই উপজেলা। সরকার পর্যটন ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতিপূর্বে সরকার টেকনাফের সাবরাং কাটাবনিয়া ও নাফ নদীর বুকে জেগে উঠা জালিয়ারদ্বীপকে অর্থনৈতিক জোন হিসাবে ঘোষানা দিয়েছে। এতে জুলন্ত ব্রীজসহ পর্যটন বান্দব অত্যাধুনিক বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

এছাড়া স্মরণকালের এ ২টি উপজেলার সমূদ্র উপকূল দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত হবার পর এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে গেছে। দেশী ও বিদেশী পর্যটক এখন সাগর পাড়ে এক দীর্ঘ মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সরকার এ ২টি উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামো এবং পর্যটন ব্যবস্থার অগ্রাধিকার দিকে শত কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। যাহা খুব শ্রীঘ্রই শুরু হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া নাফ নদীর তীরে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমার (৫৫০ মিটার) ট্রানজিট নির্মিত হয়েছে। শীঘ্রই এ জেটি শুভ উদ্বোধন হবে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা জানায়।

অপরদিকে ২০১৭ সালে ১৯ অক্টোবর শাহপরীরদ্বীপের বিধ্বস্ত বেড়ীবাঁধ নির্মাণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) ১০৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রকল্পের কাজের ফলক উম্মোচন করেছেন উখিয়া টেকনাফ থেকে নির্বাচিত সাংসদ আব্দুর রহমান বদি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না করতেই ফের মিয়ানমার থেকে প্রায় ৯ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে উখিয়া টেকনাফ সীমান্ত উপজেলায় আশ্রয় নেয়। এ দুই উপজেলার জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫০ হাজার এবং নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গা ১২ লাখ সহ মোট ১৮ লাখ ৫০ হাজার জনসংখ্যার পদভারে শেষ হয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের রুপরেখা গুলো। লক্ষ, লক্ষ রোহিঙ্গাদের আগমন এবং আশ্রয়ের প্রেক্ষিতে বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এই এলাকার সাধারন মানুষ। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, যাতায়াত ভাড়া দ্বিগুণ। আর দিনের পর দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বনজসম্পদ। শ্রমবাজারও চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের দখলে।

এব্যাপারে স্থানীয় সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা অভিমত ও আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, এই ভাবে প্রতিনিয়ত মানবিকতার দোহাই দিয়ে যদি রোহিঙ্গাদের আগমন ঢল আসতে থাকে এবং নির্দিষ্ট একটি স্থানে আবদ্ধ করা না হয়,তাহলে পুরাতন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় পশ্রয় পেয়ে তাদের জনস্রোতের পদতলে বিলীন হয়ে যাবে এই পর্যটন নগরী উখিয়া-টেকনাফ।

তারা স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী তুলে আরো বলেন, যে সমস্ত অসাধু ব্যক্তিরা মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের এই দেশে চলে আসার জন্য সহযোগিতা করে আসছে এবং আশ্রয় পশ্রয় দিচ্ছে তাদেরকে আইনের আওয়াতাই নিয়ে আসলে রোহিঙ্গাদের আগমনের ঢল কিছুটা হলেও কমে আসবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Election-Sagar-22-4-2024.jpeg

ঈদগাঁও উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ জনের মনোনয়ন দাখিল

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : নির্বাচন কমিশন ঘোষিত দ্বিতীয় ধাপের তফশিল অনুযায়ী আগামী ২১ মে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/