সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ক্রীড়া / এ জয় মহাকাব্যিক

এ জয় মহাকাব্যিক

এমন উল্লাস তো মুশফিককেই মানায়। ছবি: এএফপি

এক কথায় ইতিহাস! প্রেমাদাসা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ইতিহাসের সাক্ষী হলো বাংলাদেশের ক্রিকেট।চারপাশে শুধুই সমালোচনা। হাড়ির তলায় গিয়ে ঠেকেছিল দলের আত্মবিশ্বাস। কষ্ট আর হতাশা যেন পোড়াচ্ছিল খুব। তাতেই তেতে উঠল বাংলাদেশ দল। ভাগ্য আর সামর্থ্যে চড়ে নতুন গল্প লেখার ‘ঝুঁকি’ নিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। ভয়কে জয় করতে সময় নিলেন সব মিলিয়ে ৪০ ওভার। সফল হলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। নিদাহাস ট্রফিতে ৫ উইকেটে হারাল সেই শ্রীলঙ্কাকে, যাদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল এই বাংলাদেশ।

কলোম্বোয় শনিবার বিকেল থেকে বৃষ্টি। ম্যাচ গড়াবে কি না, তা নিয়েই শঙ্কা ছিল। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হেরেছে মুশফিকুর রহিম-সাব্বির রহমানরা। তাই এই ম্যাচে জয় ছাড়া ভাববার অন্য কোনো সুযোগ ছিলো না। মহাকাব্যিক জয় হলো বাংলাদেশের। সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস।

কদিন আগে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টির সিরিজের দুটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। এমনকি নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৯৩ রানের সংগ্রহ তুলেও জয় পায়নি তামিম ইকবালরা।

নিদাহাস ট্রফিতে সেই শ্রীলঙ্কা দলেরই দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্য পার করে ফেলল বাংলাদেশ। সেটাও আবার ২ বল হাতে রেখেই। সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডও যেমন হলো, তেমনই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের তালিকাতেও নতুন রেকর্ডের মালা পরাল মুশফিকরা।

মাঠের পারফরম্যান্সে তল খুঁজে পাচ্ছিল না বাংলাদেশ দল। সঙ্গে সমালোচনার ভার কাঁধগুলো যেন আরও ভারি করে ফেলছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামার আগের দিন তাসকিন আহমেদের কণ্ঠে ছিল আকুতি।

সংবাদ সম্মেলনে এই ফাস্ট বোলার বলেছিলেন, ‘সবকিছু সময়ের ওপর নির্ভর করছে। আমরা কয়েকটা সিরিজ খারাপ খেলেছি। ওয়ানডেতে খুব খারাপ করিনি। যদি পেছনে দেখেন, টি-টোয়েন্টিতে এশিয়া কাপ (২০১৬) বা এমন কিছু টুর্নামেন্টে ভালো খেলেছি। সবশেষ কয়েকটা ম্যাচ খারাপ খেলায় চোখে পড়ছে বেশি।’

তাসকিন সেই সময়ের জন্য ২৪ ঘণ্টা নিলেন। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ তো রীতিমতো বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমরা ভালো খেলব…যেদিন আমরা ভালো খেলব।’

২১৫ রানের লক্ষ্য। প্রথম ইনিংসেও এত রান করার ইতিহাস বাংলাদেশের নেই। তারপরও শুরুটা দারুণ হলো তামিম ইকবাল-লিটন কুমার দাসের ব্যাটে। ৩৫ বলে ৭৪ রান তুলে থামল ওপেনিং জুটি। সেখান থেকে ১০০ রানের মাথায় আউট হলেন তামিম ইকবাল।

তৃতীয় উইকেটে সৌম্য সরকারকে নিয়ে ৫১ রানের ঝড় তোলা জুটি গড়লেন মুশফিকুর রহিম। ম্যাচ জয় নিশ্চিত করে ফিরেছেন তিনি। যদিও অপর প্রান্তে আরও দুটি উইকেট হারিয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ২২ বলে ২৪ রান করা সৌম্যর ইনিংস হয়তো টি-টোয়েন্টি সুলভ ছিল না। তবে ওই ইনিংসের মাজেজা কম নয়।

পরবর্তী সময়ে অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদের ১১ বলে ২০ বেশ এগিয়ে দেয় দলকে। তবে প্রথম ম্যাচে ৩০ রানে অপরাজিত থাকা সাব্বির রহমান এ দিন ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশের ‘একমাত্র’ টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট ফিরেছেন শূন্য রানে।

বাংলাদেশের মুশফিক সর্বোচ্চ ৭২ রান করেছেন ৩৫ বলে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি তার সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। অতীতে করা ৬৬ রান ছিল এই লঙ্কানদের বিপক্ষেই। এ ছাড়া ওপেনার তামিম ইকবাল ২৯ বলে ৪৭ রান করেন।

বাংলাদেশ অতীতে সর্বোচ্চ ১৬৬ রান তাড়া করে জিতেছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৬ সালে। আর এই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।

এর আগে বৃষ্টি ভেজা উইকেটের সুবিধা নিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাসকিন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমানদের ওপর এমনভাবেই চড়ে বসেছিল শ্রীলঙ্কা, যেন মনে হচ্ছিল সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত হলো টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া।

ওপেনিং জুটিতে দানুশকা গুনাথিলাকার সঙ্গে কুশল মেন্ডিস ৫৬ রানের জুটি গড়লেন। ১৯ বলে ২৬ রান করে গুনাথিলাকা আউট হলে কুশল মেন্ডিস-থিসারা পেরেরা মিলে দলীয় সংগ্রহ নেন ১৪২ পর্যন্ত। এই রান তুলতে তাদের ব্যাট করতে হয়েছে ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত।

৮ রানের ব্যধানে আরও একটি উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ২০৫ ও ২০৬ রানের মধ্যে দুটি উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রানে থামে তারা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন কুশল পেরেরা। মেন্ডিস খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস।

বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান তিনটি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দুটি উইকেট নিয়েছেন। ইনিংসজুড়ে ছিল ১৭ চার ও ১০ ছক্কা।

এই প্রেমাদাসাতেই গেল এপ্রিলে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেই ম্যাচে জয় এনে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এবার সাকিব নেই। অবসরে মাশরাফি। সৌভাগ্যের সূতিকা সেই একই প্রতিপক্ষ আর একই মাঠে ফিরিয়ে আনল বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাসের পাত্র পূর্ণ হলো কানায় কানায়।

সূত্র:সামিউল ইসলাম শোভন-priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁও উপজেলা নিবার্চন থেকে ২ চেয়ারম্যান ও ১ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সরে দাঁড়ালেন

নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : নানান কল্পনা ঝল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/