সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / পুষ্টি ও স্বাস্থ্য / কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ২৯ জন : সদর হাসপাতালে মেডিকেল বোর্ড বসবে আজ

কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ২৯ জন : সদর হাসপাতালে মেডিকেল বোর্ড বসবে আজ

দীপক শর্মা দীপু; কক্সভিউ :
কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ আগস্ট ২৯ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জন সদর হাসপাতালে, টেকনাফে শিশুসহ ৩ জন ও ৩ জন ভর্তি রয়েছেন চকরিয়া হাসপাতালে। এর মধ্যে ১২ জন রোগী কক্সবাজারের বাইরের থেকে তারা এই ডেঙ্গু জীবাণু বহন করে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে রয়েছেন একজন পর্যটক।

কক্সবাজারে বসবাসকারিদের মধ্যে ১২ জন ডেঙ্গু রোগি পাওয়া গেছে। এই পর্যন্ত গত ৯ দিনে ৪১ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন, ১৮ জন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন আর ২৯ জন ভর্তি রয়েছেন। ভর্তিকৃতদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ ও ৯ জন মহিলা ১ শিশু। ডেঙ্গু নিয়ে আজ ৩ জুলাই মেডিকেল বোর্ড বসবে সদর হাসপাতালে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সদর উপজেলার খুরুশকুল, পৌর শহরের নুনিয়াছড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লোকজন। এদিকে ভুল চিকিৎসা হলে এবং সতর্ক না থাকলে মৃত্যুর ঝুঁকির শংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কক্সভিউ ডট কম’কে জানান, ৩ আগস্ট ডেঙ্গু রোগে আরো কিভাবে ভালো চিকিৎসা দেয়া যায় সেই লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে মেডিকেল বোর্ড বসবে। তিনি বলেন, জ্বর হলে দ্রুত রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। হাতুড়ি ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবেনা। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ঔষুধ দিলে রোগির ভয়াবহতা বেড়ে যাবে। এমন কি মল ত্যাগের সময় রক্ত যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে সবাইকে।

সিভিল সার্জন ডা: আবদুল মতিন কক্সভিউ ডট কম’কে জানান, কক্সবাজারে মোট ২৯ জন রোগী বর্তামানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কক্সবাজারে যাতে ডেঙ্গু ছড়াতে না পারে সেই জন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলায় মাইকিং করে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ে আতংক হওয়ার কিছু নেই। তবে সবাইকে সচেতন হবে, থাকতে হবে সতর্ক।

তিনি বলেন, কক্সবাজারের বাইরের থেকে আসা ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারিদের কারণে কক্সবাজারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ডেঙ্গু রোগ। কক্সবাজারের সন্তানরা লেখাপড়া ও কর্মক্ষেত্রের তাগিদে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করেন। ডেঙ্গু রোগ হওয়ায় তাদের অনেকে কক্সবাজারে চলে আসেন। ফলে তাদের সাথে সেই ডেঙ্গু জীবাণু চলে আসে। এবার এক পর্যটক ডেঙ্গু রোগ নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় নতুন করে শংকা সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে কক্সবাজারবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।

কক্সবাজারে এক মাস আগে থেকে মশক নিধন অভিযান শুরু করা প্রয়োজন ছিল। এক মাস আগে না হলেও যখন থেকে ঢাকায় ডেঙ্গু বিস্তার শুরু করেছে তখন থেকে কক্সবাজারে মশক নিধন করা হলে কক্সবাজারে ডেঙ্গু বিস্তার না হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। শুধু মশক নিধন অভিযান চালালে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। নিয়মিত নালা নর্দমা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা প্রয়োজন। কিন্ত কক্সবাজারে সেটা হয়ে উঠেনি। তাই কে বা কোন প্রতিষ্ঠান নালা নর্দমা পরিস্কার করবে, মশক নিধন স্প্রে করবে তার উপর নির্ভর না করে নিজের রক্ষায় নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি সবার ঘর, আঙ্গিনা, আশে পাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে আর পানি জমিয়ে না রাখতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জ্বর হলেই দ্রুত হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে এটি ডেঙ্গু না অন্য কারনে জ্বর। হাতুড়ি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেয়া যাবেনা। আবার নিজে যেন ডাক্তারি না করেন। দিন ও রাতে সব সময় মশারি টাঙ্গাতে হবে। শিশুদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হবে।

সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু টিম এর সদস্য ডা: শামসুদ্দিন জানান, সদর হাসপাতালে গতকাল রাত ১০ টা পর্যন্ত ২৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজন হচ্ছেন কক্সবাজারে বসবাসকারি। একজন পাওয়া গেছে পর্যটক। আর অন্যরা কক্সবাজারের হলেও তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গু জীবাণু নিয়ে আসেন কক্সবাজারে।

জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ঢাকায় বসবাসকারিরা। শুধু ঢাকা নয় বিভিন্ন জেলায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ১৬শ থেকে ১৮শ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমন কি হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মারা যায় আরো দুইজন ডাক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও মারা যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসচিবের স্ত্রী মারা গেছে। শুক্রবার পর্যন্ত সারাদেশে ২৩ জন মারা গেছে। সবাই এখন ডেঙ্গু নিয়ে শংকিত। একইভাবে কক্সবাজারবাসী ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছে। কক্সবাজারে ডেঙ্গুর কি পরিস্থিতি সবাই জানার চেষ্টা করছেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান, ডেঙ্গু রোগীর কারণে সবার মাঝে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। কারণ ডেঙ্গু রোগীকে কোন মশা কামড়ালে সেই মশা অন্যদের কামড়ালে তাদের অবশ্যই ডেঙ্গু রোগ হবে। সেই জন্য আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই মশারির ভেতর থাকতে হবে। যাতে তাদের কোন মশা কামড় দিতে না পারে। তাদের যে মশা কামড় দেবে সেই মশা তখন ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশাই পরিণত হবে। শুধু ডেঙ্গু রোগী মশারির ভিতর থাকলে হবেনা, সব মানুষকে রাতে হোক বা দিনে হোক মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে।

তিনি বলেন, টবে, বালতিসহ কোন পাত্রে পানি জমা রাখা যাবেনা। জমে থাকা পানিতে এসব মশার উৎপত্তি হয়। বাড়ির আশে পাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নালা নর্দমায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ রাখা যাবেনা। কারো জ্বর হলে আতংকিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষুধ সেবন করা যাবেনা। বিশেষ করে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম জাতীয় ব্যথার ঔষুধ খাওয়া যাবেনা। ভুল চিকিৎসায় এবং সতর্ক না থাকলে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু শংকা রয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার ২৭ জুলাই বেলা দু’টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদে একইদিন বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কক্সবাজারের মেয়ে উখিনো নুশাং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর পর ২৮ জুলাই ডেঙ্গু মনিটিরিং টিম গঠন করা হয়।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

জনবল সংকটে ৪ বছরেও চালু হয়নি সরই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র#https://coxview.com/sarai-hospital-rafiq-14-11-23/

জনবল সংকটে ৪ বছরেও চালু হয়নি সরই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

বান্দরবানের লামার ‘সরই ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’। মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম পার্বত্য ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/