মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
প্রতিবছর পার্কের ভেতরে পর্যটন স্পট সমুহকে উন্নয়নের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি পর্যটকদের উপভোগের জন্য রাখা তৃণভোগী প্রাণীগুলোর বংশ বিস্তারের কারনে বেড়ে চলছে প্রজনন সক্ষমতা। বর্তমানে প্রতিবছরই পার্কে বাড়ছে প্রাণী জগতের নতুন অতিথি। বাঘ, সিংহ, হাতি, জলহস্তি, কুমির, ভাল্লুকের পাশাপাশি প্রতিবছর বাড়ছে চিত্রা ও মায়া হরিণ। পড়ন্ত বিকালে পার্কের লেকে দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছে হরিণের পাল। তা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পার্কে আসা পর্যটকরা। বর্তমানে সাফারি পার্কের অন্যরকম শোভা বাড়াচ্ছে নতুন জন্ম নেয়া হরিণের পাল।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বনবিভাগের অধীন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুলাহাজারা ও হারগাজা ব্লকের বগাচতর অরণ্যে ঘেরা বনাঞ্চলটি হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেন। সেই থেকে এখানে বনবিভাগ হরিণ পালন করে প্রজনন বাড়াতে কাজ করে আসছিলো। ১৯৯৮ সালে সরকার ওই এলাকার ৯শত হেক্টর বনাঞ্চলকে (জীববৈচিত্র ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, গবেষনা, ইকো-ট্যুরিজম ও চিত্রবিনোদনের) অর্থবরাদ্ধের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দেশ-বিদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী সংগ্রহের মাধ্যমে দেশে প্রথম সাফারি পার্ক হিসেবে প্রতিষ্টা করেন।
পার্ক সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পার্কে পর্যটকদের উপভোগের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা বিলুপ্ত প্রায় (স্তন্যপায়ী প্রাণী) ১৪৯ প্রজাতির প্রাণী সংগ্রহ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সরীসৃপ জাতের ১৫২ প্রজাতির প্রাণী ও ৬১ প্রজাতির পাখী রয়েছে পার্কে। এছাড়াও পার্কে উন্মুক্তভাবে অবাধ বিচরণে রয়েছে ৮০৬ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। স্তন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাঘ), সিংহ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, সাম্বার হরিণ, হনুমান, বাঁশভাল্লুক, বন্যশুকুর, খরগোশ, বনগরু বা গয়াল, বাঘদাসা, বনবিড়াল, মার্বেল বিড়াল, চিতা বিড়াল, বনরুই, সজারু, বাদর, লজ্জাবতী বানর, আসামি বানর, উল্লুক, কালো উল্লুক, শিয়াল, মেছোবাঘ, ওয়াইল্ডেবিস্ট, জলহস্তি।
সরীসৃপ জাতের প্রাণীর মধ্যে মধ্যে কালিকাইট্টা, রক্তচোষা, কড়ি কাইট্টা, কালো গুই, ছিম কাছিম, পানি সাপ, বোস্তামি কাছিম, তারকা কচ্ছপ, সুন্দী কাছিম, মেটে সাপ, গোখরা, ঢোঁড়া সাপ, টিকটিকি, তক্ষক, বিশাল আকৃতির অজগর, নোনাপানির কুমির, ঘড়িয়াল, মিঠাপানির কুমির, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ ও উভচর প্রাণী সোনা ব্যাঙ্, গেছো ব্যাঙ্ এবং কুনো ব্যাঙ্ ইত্যাদি।
দেশ-বিদেশী পাখীর মধ্যে রয়েছে পানকৌড়ি, মাথুরা, ভুতুম পেঁছা, এমু, লক্ষীপেঁচা, ডুবুরি, ক্ষুদে মাছরাঙ্গা, কালোমাথা মাছরাঙ্গা, গু শালিক, কাটমৌর, কালোমাথা ময়না, তিলা ঘুঘু, দাঁড়কাক, সবুজ ঘুঘু, কানাবক, সোনালী ফিজেন্ট, টিয়াপাখি, ধূসর বক, গো-বক, নিশি বক, কোকিল, সিপাহি বুলবুলি, রুপালী ফিজেন্ট, টুনটুনি, ছোট সরালী, শঙ্খচিল, দোয়েল, সাদা ঈঙ্গল, বনমোরগ, চড়–ঁই, ডাহুক, তিলা মুনিরা, মদন টাক, লালচে কাঠঠোকরা, কালেম, কাঠঠোকরা, কাকাতুয়া, খয়েরি ঈগল, ধনেশ, রাজ ধনেশ, ময়ুর, কালিজ ফিজেন্ট, শঙ্খচিল, তোতা, লাভবোর্ড, মুনিয়া, লালমোহন তোতা, সাদা ঘুঘু, ভূবন চিল, এমারেলড্ ঘুঘু, তার্কিস ফিজেন্ড, গ্রিফন শকুন, লেজার ফ্ল্যামিংগু, সারস পাখি, সাদা পেলিকন, হাড়গিলা, রঙ্গিলা বক।
জানা গেছে, পরিচ্ছন্ন স্থানে বিচরণ করা হরিণের টক জাতিয় খাবার প্রথম পছন্দের। এছাড়া কচি ঘাষ, পার্ক কর্তৃপক্ষের দেয়া নানা সবজি খায়। বর্তমানে পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির তিন হাজারের বেশি হরিণ রয়েছে। গত ছয় মাসেই বেশ ক’টি হরিণ বাচ্চা প্রসব করেছে। ফলে, বেড়েই চলছে বংশ বিস্তার।
সাফারি পার্কের ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পার্কের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিবিড় পরির্চযার কারণে বর্তমানে পার্কের নির্ধারিত বেস্টনীতে অবস্থান করা দুর্লভ প্রজাতির স্তন্যপ্রাণী চিত্রা ও মায়া হরিণের বংশ বিস্তারের ফলে প্রতিবছরই হরিণের সংখ্যা বেড়ে চলছে। প্রতিদিন হরিণের পাল পার্কের লেক ও আশপাশ এলাকায় অবাদে বিচরণ করছে। আর তা দেখে বেশ মুগ্ধ হচ্ছে পর্যটকরা।
You must be logged in to post a comment.