মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :
পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের প্রতীক বলা হয় বান্দরবান জেলাকে। পাহাড়ের সৌর্ন্দয্য যেন মানুষের মনকে ব্যাকুল করে তোলে। বান্দরবানের এই মনোরম সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশী বিদেশী প্রচুর পর্যটক আসে। সরকার রাজস্ব পায় কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার বান্দরবান জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকম্পণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই বান্দরবান জেলায় কোন প্রকার পাহাড় না কাটার নির্দেশ থাকলেও লামার ফাইতং ইউনিয়নের ইট ভাটার মালিকবৃন্দ তাদের ব্যবসার কারণে অবাধে পাহাড় কাটার উত্সবে মেতে উঠেছে। চলতি মৌসুমে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ১৮টি, ফাঁসিয়াখালীতে ৬টি, গজালিয়া ১টি, সরই ১টি ও লামা পৌরসভার ১টি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
তাছাড়া এখন ইট ভাটার মধ্যে ইট পোড়ানো জন্য নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ছোট ছোট গাছের চারা। ধ্বংস করা হচ্ছে বনাঞ্চল। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে যেখানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সেখানে আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ইট ভাটায় ছোট ছোট গাছ কেটে লাকড়ী হিসেবে তৈরি করে ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এই অপরাধমূলক কর্মকান্ডের রির্পোট করা হলে ও প্রশাসনের কোন সাড়া পাচ্ছে এলাকাবাসী। তাই এলাকার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন দেশের প্রশাসন কি এই অপরাধীদের কাছে জিম্মি। পরিবেশবাদীদের মতে, যদি এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয় তাহলে বান্দরবান জেলার জনগণকে যে কোন মূহুর্তের জন্য বড় ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগের সম্মুখীন হতে হবে।
এলাকবাসীরা জানান, বর্তমানে ফাইতং ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। গাড়ি ও মানুষ চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন ইট ভাটা থেকে ৪০০ থেকে ৫০০টি ইট বোঝাই গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করার ফলে রাস্তার বেহাল অবস্থা হয়েছে বলে জানান।
এলাকার সচেতন নাগরিকরা জানান, আমরা রাস্তার এ বেহাল অবস্থা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য হরতাল করেছি। পরে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কবির আহম্মদ রাস্তা ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করলে হরতাল প্রত্যাহার করেন ফাইতং এলাকাবাসী।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসের তথ্য মতে, লামা উপজেলায় অবস্থিত ব্রিকফিল্ড গুলো হচ্ছে সফি ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচার লিঃ, এস.বি.এম ব্রিকস, এম.বি.আই ব্রিকস, সি.বি.এম ব্রিকস, ইউ.বি.এম ব্রিকস (২টি), এফ.বি.এম ব্রিকস প্রোঃ নাজু, এ.বি.এম ব্রিকস প্রোঃ শফিক আহম্মদ, এ.বি.সি ব্রিকস (২টি), ডিবিআই ব্রিকস, আর.বি.এম ব্রিকস, এস.এ.বি ব্রিকস, এফ.এসি ব্রিকস প্রোঃ ফরিদ কন্ট্রেকটার, এস.বি.ডব্লিউ ব্রিকস প্রোঃ জসিম উদ্দিন কোং, পি.বি.সি ব্রিকস প্রোঃ মানিক কোং, এম.এস.বি ব্রিকস, এ.এইচ.বি ব্রিকস প্রোঃ আমির হামজা, এ.বি.সি ব্রিকস-৩, এমবিসি ব্রিকস, কে.এম.বি ব্রিকস, আর.এন ব্রিকস, এম.বি.আই প্রোঃ মাহামুদুল হক, এস.বি.এম প্রোঃ ফখরুল ইসলাম, ই.বি.এম প্রোঃ মোজাম্মেল কোং, আর.এ.বি প্রোঃ রেজাউল ইসলাম ও এম.বি.এম- প্রোঃ মহিউদ্দিন।
উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ শামসুল আলম জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নে অবৈধভাবে ১৮টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। কোনটারই লাইসেন্স নাই। এমনকি ট্রেড লাইসেন্সও গ্রহণ করেননি ভাটায় মালিকগণ। প্রতিটি ইট ভাটায় জ্বালানী হিসাবে মূল্যবান বনজ সম্পদ ও কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ২কিলোমিটার এলাকায় ১৮টি ব্রিকফিল্ড নজীর স্থাপন করেছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার দেয়া তথ্যমতে লামা উপজেলায় সরকার অনুমোদিত কোন ইট ভাটা নাই। ইট পোড়ানোর আইন মতে ৫০টি বাড়ি আছে এমন আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা। ফলজ ও বনজ বাগানের ৩ কি.মি. এর মধ্যে কোন ইট ভাটা স্থাপন করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
You must be logged in to post a comment.