গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :
চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধ, এই শ্লোগানকে বুকে নিয়ে দীর্ঘ দুই বছর ধরে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে মাদক পাচার প্রতিরোধ ও কারবারীদের নির্মুল করার জন্য শুরু হয় সাঁড়াশী অভিযান।
সেই সূত্র ধরে মাদক পাচারের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে খ্যাত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা টেকনাফেও শুরু হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযান।
তথ্য সূত্রে দেখা যায়, টেকনাফে দায়িত্বর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানে গত এক বছরে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সাথে গোলাগুলিতে মারা যায় ২০৯জন মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার করা হয় লক্ষ লক্ষ ইয়াবা ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। তবে গত এক বছর ধরে টেকনাফ থেকে মাদক পাচার প্রতিরোধ, শীর্ষ মাদক কারবারীদের নির্মুল ও চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সবচেয়ে বেশী কঠোর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে টেকনাফ মডেল থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেশীর ভাগ মাদক কারবারী মারা গেছে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে। আবার এই যুদ্ধ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য গত ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী অন্ধকার জগৎ ছেড়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করেছে ১০২ জন। সেই দিন আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছিলেন যারা অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে এসেছেন তাদেরকে আমরা আইনী সহায়তার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার জন্য মুক্তি দেওয়া হবে। সেই থেকে গত এক বছর ধরে তারা কারাগারে রয়েছে। কারাগারে অসুস্থ হয়ে একজন মারাও গেছে।
এদিকে মাদক বিরোধী চলমান অভিযান থেকে নিজেকে বাঁচাতে ৩ ফেব্রুয়ারী টেকনাফ সরকারী ডিগ্রী কলেজ মাঠে আবারও আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে মাদক কারবারে জড়িত প্রায় ৩০জন অপরাধী।
পুলিশের তথ্য সূত্রে জানা যায়, উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক।
এব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, কক্সবাজার জেলায় কর্মরত সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগীতায় এক বছরের ব্যবধানে আবারও আমরা ‘দ্বিতীয় বারের মত মাদক কারবারীদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকার কারনে স্থানীয়রা মাদক ব্যবসা ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসছে। তবে বিভিন্ন কৌশলে মাদক পাচার চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ামার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। পাশাপাশি এই মাদক পাচার অব্যাহত রাখার জন্য তাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছে আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন পেশায় জড়িত মুখোশদারী মানুষগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফের সুশীল সমাজের ব্যাক্তিরা অভিমত প্রকাশ করে বলেন মাদক কারবারে জড়িত রোহিঙ্গা ও আড়ালে থাকা মুখোশধারী অপরাধীদের আইনের আওয়তাই নিয়ে না আসলে ততদিন টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক পাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবেনা। তারা দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন বর্তমানে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা” আর মাদকের বদনাম মাথায় নিয়ে ধুকে ধুকে মরছে স্থানীয়রা”।
You must be logged in to post a comment.