সাম্প্রতিক....
Home / জাতীয় / দুদকের তিন উদ্যোগ

দুদকের তিন উদ্যোগ

দেশের অর্থ পাচার রোধ এবং এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত দ্রুত অপরাধী সনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি তিনটি বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে দুদক যার সঠিক প্রয়োগ সম্ভব হলে বহুলাংশেই এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উদ্যোগ তিনটি হলো- চার সংস্থার সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন, ছয়টি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর এবং অর্থ পাচার হওয়া বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে সাময়িকভাবে দুদক কর্মকর্তা নিয়োগ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতেই মূলত উল্লিখিত তিনটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ হবে এবং অপরাধের প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন দুদক সংশ্লিষ্টরা।

দুদক সূত্র জানা গেছে যে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), র‌্যাব ও পুলিশ – এই চারটি সংস্থার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় আলোচনা শুরু করেছে দুদক। এ ছাড়া দুর্নীতি ও অপরাধমূলক তথ্য খুঁজে পেতে নির্বাচন কমিশন, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন ও সিআইডি- এ ছয় সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে দুদক। পাশাপাশি চেষ্টা শুরু হয়েছে দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার। যেসব দেশে অর্থ পাচার বেশি হয়, সেখানের পাচার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে দুদক কর্মকর্তাদের সাময়িক নিয়োগ দেয়ারও চিন্তা-ভাবনা চলছে।

চার সংস্থার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স ও ছয় সংস্থা নিয়ে এমওইউ গঠনের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতির কিছু ঘটনা, কিছু মামলা আছে যা নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। এ নিয়ে ওই সব সংস্থার সঙ্গে আমরা আলোচনা শুরু করেছি। তিনি বলেন, কিছু কিছু মামলা আছে দুদক ছাড়াও যার কিছু তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে, কিছু তথ্য থাকে এনবিআরের কাছে। আমরা একসঙ্গে কাজ শুরু করতে পারলে দ্রুত তদন্ত শেষ করা যাবে। প্রকৃত অপরাধের তথ্য বেরিয়ে আসবে। অপরাধীকে শনাক্ত করতেও বেগ পেতে হবে না। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক টিমের কার্যক্রমেও ওই সব সংস্থার কাছ থেকে আমাদের সহায়তা নিতে হবে।

টাস্কফোর্স গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দুদকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মানি লন্ডারিং আইনে আগে মামলা করতে পারত বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সিআইডিকে দিয়েও কিছু তদন্ত করায়। পরে সেই ক্ষমতা দেয়া হয় দুদককে। কিন্তু ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন করে সেই ক্ষমতা দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও সিআইডিসহ পাঁচটি সংস্থাকে দেয়া হয়। কিন্তু এসব সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এই আইনে হওয়া মামলার তদন্ত বা অনুসন্ধান নিয়ে কোনো ধরনের সমন্বয় নেই। এক সংস্থার কাজ আরেক সংস্থা জানে না। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতা। চার সংস্থা একযোগে কাজ করলে এ জটিলতা থাকবে না। তিনি বলেন, কিছু কিছু দুর্নীতির অনুসন্ধান কখনও দুদক করবে, সেখানে সহায়তা করবে অন্য সংস্থাগুলো, আবার কখনও অন্য সংস্থার কাজে দুদক সহায়তা দেবে।

সূত্র জানায়, দুদকের ২০১৭ সালের কৌশলগত কর্ম পরিকল্পনায়ও টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়টি অগ্রধিকার ভিত্তিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআর, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, পাসপোর্ট অধিদফতর, সিভিল এভিয়েশন ও সিআইডির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

এ নিয়ে ওই সব সংস্থার সঙ্গে এরই মধ্যে চিঠি আদান-প্রদানের কাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব সংস্থার সঙ্গে এমওইউ করার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে দুদক সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই সব দফতরের হাতে অনেক তথ্য থাকে। যা দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে সহায়ক। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়ে বলা হয়, এ সংস্থা দেশের সব নাগরিকের ন্যাশনাল আইডির স্মার্টকার্ড করছে। তাতে সংশ্লিষ্ট নাগরিকের অনেক তথ্য থাকছে। ব্যাংক হিসাব খুলতে হলেও ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রয়োজন। দুদকের তদন্তে অনেকের ব্যাংক হিসাব পরীক্ষা করতে হয়। সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজের বিষয়ে তথ্য জানার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সংরক্ষিত ওই ব্যক্তির এনআইডি বিষয়ক তথ্য অনুসন্ধান ও তদন্তে সহায়ক হবে।

এ ছাড়া পাসপোর্ট অধিদফতরের সঙ্গে এমওইউ করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে দুদক কর্মকর্তারা জানান, দুর্নীতি মামলার কোনো কোনো আসামি ভিন্ন পাসপোর্টে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দুদক কড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে- মামলা হলে কোনো আসামি দেশত্যাগ করতে পারবে না। মামলার পর আসামিদের তালিকা ইমিগ্রেশনে দিয়ে দেয়া হয়। তারপরও যখন আসামিরা পাসপোর্ট নিয়ে চলে যাচ্ছে- এ অবস্থায় পাসপোর্ট অধিদফতরের সহায়তা নিতে চায় দুদক। যাতে একই ব্যক্তি ভিন্ন কোনো নামে পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ছাড়তে না পারে। অন্যদিকে দুর্নীতি মামলার আসামিরা যাতে দেশত্যাগ ঠেকাতে সিভিল এভিয়েশনের মাধ্যমে ইমিগ্রেশনের সহায়তা নিতে চায় দুদক।

এদিকে, দুদকের এক বছরের কর্মপরিকল্পনায় আরও যেসব বিষয়কে অত্যন্ত গুরত্বের সঙ্গে হাতে নেয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে- বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট মনিটরিং সেল গঠন। এ সেলের মাধ্যমে যেসব দেশে বেশি অর্থ পাচার হয় ওই সব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে দুদকের কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। বাংলাদেশ থেকে কোন কোন দেশে বেশি অর্থ পাচার হয়, তারও তালিকা করেছে দুদক। এর মধ্যে আছে- মালয়েশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও ভারত। ওই সব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে দুদক কর্মকর্তা নিয়োগ বা পদায়ন করা হবে। দূতাবাসগুলোতে নিয়োগ পাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে গোপনে প্রতিবেদন তৈরি, পাচার করা সম্পদ চিহ্নিত করা ও উদ্ধারে কাজ করা হবে। আর এ বিষয়ক কার্যক্রম তদারক করবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট মনিটরিং সেল।

দুর্নীতি দমনে উল্লিখিত তিন বিশেষ উদ্যোগ ছাড়াও নিজস্ব বিধি ও আইনের কাঠামোর মধ্যেই একটি গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করতে চায়। এ গোয়েন্দা ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্র্যাকিং ডিভাইস, রেকর্ডিং ডিভাইস, অডিও-ভিডিও ডিভাইস ও ওয়াকিটকি কেনা হবে। দুদকে বসানো হবে একটি অটোমেশন ট্র্যাকিং সফটওয়্যার। দুদক চাইলে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে এ ট্র্যাকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে। এ সফটওয়্যার পরিচালনা করবে দুদকের একটি আলাদা আইটি ইউনিট। জানা গেছে, দুদকের এ খাতে এডিবি প্রায় ১০ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছে।

এ ছাড়া দুদকের পরিকল্পনার মধ্যে আছে- দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিজ্ঞ অনুসন্ধানকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি আলাদা কক্ষ স্থাপন ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য বা জবানবন্দি অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে রেকর্ড করে রাখা। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত ও তফসিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগ জানানোর জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা। সেই সঙ্গে দুদক আইনের দুর্বলদিক চিহ্নিত করে তা সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে চায় দুদক।

ইন্দোনেশিয়া, ভুটান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রিয়া, চীন, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, মঙ্গোলিয়া ও মালয়েশিয়াসহ অনেকগুলো দেশের সঙ্গে এমওইউ করারও পরিকল্পনা রয়েছে দুদকের। ওই সব দেশের দুর্নীতি দমন সংস্থা কীভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে সফলতা পেয়েছে তা জানতে এবং দু’দেশের মধ্যে দুর্নীতি দমন বিষয়ক তথ্য বিনিময় করতে এ চুক্তি করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে দুদক। দুদক জানতে চায়, ওই সব দেশের কমিশন সরকারি সেবা খাতের দুর্নীতি রোধে কিভাবে কাজ করছে এবং দুর্নীতি দমনে কি কি উপায় অবলম্বন করছে।

জানা গেছে, এমওইউ চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করে এরই মধ্যে ওই সব দেশের দুর্নীতি দমন সংস্থার প্রধানদের চিঠি দিয়েছে দুদক।

সূত্র:priyo.com,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওতে উৎসবমুখর ভোটগ্রহণ : নারী ভোটারদের উপস্থিতি : অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ, ইসলামপুর ও ঈদগাঁও ইউনিয়নে ব্যাপক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/