মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
রামপ্রসাদ নস্কর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা সোনারপুর থানার বাসিন্দা। পরের বাড়ির কেয়ারটেকার সন্ন্যাসী নস্করের দুই ছেলের দুই মেয়ের মধ্যে মেঝ ছেলে রামপ্রসাদ শ্রীপুর শিক্ষাসদন হাই স্কুলের পার্শ্ব শিক্ষক। পড়ান ভুগোল বিষয়ে। বেতন পান ৮ হাজার টাকা।
১৯৭৮ সালের ১৫ মার্চ জন্ম নেয়া রামপ্রসাদ দেড় বছর আগে বিয়ে করলেও এখনো নি:সন্তান। দারিদ্রতার মাঝেও রামপ্রসাদকে ভারতের ২৯টি রাজ্যের কোন না কোন মানুষ চেনে। পরিবেশ আন্দোলনের প্রচারণা চালাতে গিয়েই পরিচিত পান তিনি। রামপ্রসাদ বাংলাদেশে প্রবেশের পর চকরিয়া পৌছা পর্যন্ত যেখানেই থামছেন সেখানেই তাকে ঘিরে ভীড় করছেন উৎসুক জনতা। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আকৃষ্ট হচ্ছেন সাইনবোর্ড সহকারে সাইকেল ভ্রমণকারী রামপ্রসাদের ইচ্ছা জানতে।
২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৪ সালের ১১ জুন পর্যন্ত সময়ে ভারতের সবকটি রাজ্যে বিশ্ব উষ্ণায়ণ নিয়ে প্রচার চালান। পরিবেশ বান্ধব দু-চাকার বাই সাইকেল নিয়ে প্রচার চালাতে গিয়ে রামপ্রসাদকে দু-চাকার ভারত ভ্রমণকারী হিসেবে চেনেন কলকাতার মানুষ।
সেই রামপ্রসাদ এখন কক্সবাজারে। গত ৩ অক্টোবর বাংলাদেশের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ পর্যন্ত প্রচার চালাতে বের হন তিনি। বাঁশিরহাট হয়ে যশোর-গুলন্দা থেকে ঢাকা। সেখান থেকে ময়মসিংহ নেত্রঘোনা সিলেট হয়ে ফের আগরতলা দিয়ে আসামে প্রবেশ করেন। আবারও তিনি ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করে কুমিল্লা-ফেনি হয়ে ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের নাজিরহাটে পৌছেন।
চট্টগ্রাম থেকে ২৮ অক্টোবর চকরিয়ায় পৌছেন। আজ ২৯ অক্টোবর কক্সবাজার শহর হয়ে টেকনাফ যাবেন। সেখান থেকে ফের চকরিয়া হয়ে বাগেরহাট, মংলা, খুলনা, সেয়ামনগর হয়ে ভারতের মিনাখান এলাকায় প্রবেশ করবেন আগামী ৭ নভেম্বর। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাইকেল নিয়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি ও সুন্দরবন বাঁচাও অভিযান প্রচার করতে আসা শিক্ষক রামপ্রসাদ নিজেই।
গতকাল শনিবার বিকাল ৫টায় চকরিয়ায় পৌছার পর রামপ্রসাদের সাথে কথা হয়ে প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে আমি পরিবেশ সচেতনতার পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব বাই সাইকেল চালানোর উপর তরুণ যুব সমাজকে উৎসাহিত করতে ভারতের ২৯টি রাজ্যে প্রচার চালিয়েছি। বাংলাদেশের প্রচারভীযানের মাধ্যমে বিদেশের জনগণকে প্রথম আমার মিশন-ভিশন জানাচ্ছি। সাইকেল নিয়ে একদিনই আমি ২’শ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারি।
তিনি বলেন, আজ পরিবেশ বিপন্ন। মানুষের অসেচনতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি। তিনি সুন্দরবনের পরিবেশ নিয়ে উদাহরণ টেনে বলেন, অনেক মানুষের মাথার চর্তুপাশে চুল থাকলেও মাঝখানে টাক থাকে। ঠিক তেমনি সুন্দরবনের চর্তুপাশে গাছ থাকলেও মাঝখানে বৃক্ষবিহীন মাঠ হয়ে গেছে। উপকুলবর্তী সুন্দরবনের বিস্তর্ণী অঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে জলের তলায়।
উষ্ণায়নের কারণে এঅবস্থার সৃষ্টি দাবি করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার যথেচ্ছ বৃক্ষনিধন এবং বিভিন্ন প্রকার বায়ু দূষনের কারণে এবং সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে বিভিন্ন জলযান থেকে মুবিল তেল পড়ে, ওই মুবিল অতি জোয়ারের সময় সুন্দরবনের উপরে উঠে যাওয়ার পর দূষিত হয় বনভূমি। এতে মারা যায় গাছ। উঠেনা ঘাসও। এভাবে পরিবেশ ধ্বংস হতে থাকলেও মানুষের বাস করাই কষ্টকর হয়ে উঠবে। তাই দারিদ্রতার মাঝেও স্বল্প পুঁজি নিয়ে পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে কলকাতা থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত আমার ছুটে চলা।
You must be logged in to post a comment.