সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ভ্রমণ ও পর্যটন / পর্যটকের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত শুঁটকি মহল

পর্যটকের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত শুঁটকি মহল

Dry fishপর্যটকদের চাহিদা পূরণে নানান প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে সোনাদিয়ায় পুরোদমে শুরু হয়েছে শুঁটকি উত্পাদন।

কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এ স্বর্ণদ্বীপখ্যাত সোনাদিয়ার এই শুঁটকি মহল কেবল বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়; এটি একটি পর্যটন স্পটও। শীত মৌসুমের প্রায় চার মাসে কক্সবাজারে অন্তত ১৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণে আসেন। এর মধ্যে শতকরা ৭০ জন পর্যটক যাওয়ার সময় শুঁটকি কিনে নেন।

কক্সবাজার শহর থেকে স্পিডবোটে ১৫ কিলোমিটারের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সহজে যাওয়া যায় সোনাদিয়ায় শুঁটকি উত্পাদনের মহালে। শুঁটকি মহলে ভ্রমণে আসেন দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক। পর্যটকরা সরাসরি শুঁটকিমহাল থেকেই কিনে নেন পছন্দের শুঁটকি। এ দ্বীপের শুঁটকি বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।

ব্যবসায়ীরা জানান, এই দ্বীপে ৬ মাসে প্রায় ২০ কোটি টাকার শুঁটকি উত্পাদিত হয়। শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় হলো (অক্টোবর থেকে মার্চ ) আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শুঁটকি উত্পাদনের মৌসুম হিসেবে ধরে নেয়া হয়।

সোনাদিয়ায় রয়েছে দুটি চর। একটি বড়চর, অপরটি মগচর। এর মধ্যে মগচরে চলে শুঁটকি উত্পাদনের গড়ে উঠেছে অনেক মাচাং। মাচাং ছাড়াও চাটাই বিছিয়ে শুঁটকি তৈরি করে স্বচ্ছলতা পেয়েছে বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার পরিবার।

সরেজমিনে এই শুটকি মহালে গিয়ে দেখা যায়, শুঁটকি শ্রমিক ও ব্যবসায়িকের কর্মচাঞ্চল্য। যার যার মতো সবাই ব্যস্ত। কথা বলারও ফুসরত নেই কারো।

শ্রমিকরা জানান, সেই ভোর থেকে কর্মব্যস্ততা শুরু। সূর্য ডোবা পর্যন্ত এভাবে চলবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগী বেসরকারি সংস্থা নেকমের (নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট) কর্মকর্তারা জানান, এখানকার শুঁটকিতে কোনো কেমিকেল মেশানো হয় না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে সাগর উপকূলে মাচাং তৈরি করে এই শুঁটকি তৈরি করা হয়। পুরুষরা মাছ সংগ্রহের কাজে জড়িত থাকলেও প্রক্রিয়াকরণে জড়িত থাকেন নারীরা। সাগর থেকে মাছ আহরণ করে জেলেরা সোনাদিয়ার চরে নিয়ে আসেন। সপ্তাহ পর পর নৌকাগুলো মাছ নিয়ে চরে আসে। এ সময় বহু মানুষের সমাগম হয়। ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে মাছ কিনে নেন। প্রতিটি মহালে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা বড় বড় শুঁটকি পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাচ্ছেন।

তারপর বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঘেরগুলোতে পসরা সাজানো হয়েছে নানারকম মাছের। এখানে ছুরি, লইট্যা, পোহা, ফাইস্যা, লায়োক্কা, মাইট্যা মাছসহ বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি উত্পাদিত হয়। মহালগুলোয় মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি ছুরি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। বড় শুঁটকি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০, আর লইট্যা শুঁটকি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায়।

দ্বীপের ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে রয়েছে চায়ের ১০টি দোকান। নামাজের জন্য রয়েছে মসজিদও।

মহেশখালী শুঁটকি ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি সরোয়ার আজম জানান, প্রতি সপ্তাহে সোনাদিয়ার মহল থেকে অন্তত দুই কোটি টাকার শুঁটকি চট্টগ্রাম যাচ্ছে। সেখান থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ী আলী আজগর সওদাগর (৫০) জানান, দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও কক্সবাজার সদর, খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর লোকজন এখানে ব্যবসা করতে আসেন।

ব্যবসায়ী আবদুল করিম (৩৩) জানান, সোনাদিয়ার শুঁটকিতে ক্ষতিকর কোনো পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। ফলে এই শুঁটকি এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। বিদেশে এই শুঁটকির বেশ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ব্রিটেন, আমেরিকা, কুয়েক, কাতার, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। অনেকেই ডাকবিভাগ, কুরিয়ার সাভির্সের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শ’ শ’ কেজি শুঁটকি বিদেশে পাঠাচ্ছেন। এসব এলাকার কেউ প্রবাসে যাওয়ার সময় প্রায় শুঁটকি নিয়ে যায়।

স্থানীয় চা দোকানের মালিক মনি উল্লাহ (৩২) জানান, শুঁটকি মৌসুমে প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে আসেন। পর্যটকরা এখানকার শুঁটকি বেশ পছন্দ করেন।

নেকমের জেলা কর্মকর্তা মো: সফিকুর রহমান জানান, আগে শুঁটকি উত্পাদনকারীরা ডিডিটি পাউডারসহ নানা কীটনাশক মিশিয়ে শুঁটকি উত্পাদন করতেন। নভেম্বর থেকে তারা বিষমুক্ত শুঁটকি উত্পাদন করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগী বেসরকারি সংস্থা নেকমের (নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট) কর্মকর্তারা বিষমুক্ত শুঁটকি উত্পাদনের ক্ষেত্রে জেলেদের সচেতন করে আসছেন। কিন্তু এতে বিষ থাকায় বিপুলসংখ্যক লোক ক্যানসার, যক্ষ্মাসহ কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই লোকজনকে সুস্থ রাখার জন্য জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে।

ব্যাপকভিত্তিতে শুঁটকি রপ্তানির ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হলে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের শুঁটকি শিল্পে বিশালসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।

সূত্র: গ্লোবটুডে২৪ডটকম,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

জালালাবাদে ফখরুদ্দিন ফরাজীর অটোরিক্সা নির্বাচনী জরিপে এগিয়ে

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : প্রচার প্রচারণার শেষ মুহূর্তে জালালাবাদ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী (অটোরিক্সা ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/